ঠাকুরগাঁওয়ে আলুর ব্যাপক দর পতনের আশঙ্কা
জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২১-০৩-২২ ১৬:৩০:২১
ঠাকুরগাঁওয়ে এবার ব্যাপক আলুর আবাদ হয়েছে। ফলনও হয়েছে আশাতীত। আলু যখন প্রথম বাজারে আসে তখন দামও ছিল বেশি। আলু চাষ করে দুটো পয়সার মুখ দেখবে বলে কৃষকের মুখে ফুটেছিল হাসি। কিন্তু ধীরে ধীরে তাদের মুখের হাসি মিলিয়ে গেছে। অর্ধেক আলু এখনও মাঠে।
জেলা হিমাগার এসোসিয়েশন সভাপতি মো. আব্দুল্লাহ জানান, এরই মধ্যে জেলার সব হিমাগার পূর্ণ হয়ে গেছে। হিমাগারে আলু সংরক্ষণের সুযোগ নেই।
এদিকে কৃষক এখন আলু নিয়ে হিমাগারের দরজায় দরজায় ধর্ণা দিচ্ছে। হিমাগারের সামনে এখন আলু বোঝাই বিভিন্ন ধরনের গাড়ির ভিড়। বাধ্য হয়ে একটি হিমাগার কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে আলু না আনার জন্য গ্রামে গ্রামে প্রচার চালাচ্ছেন।
গত সপ্তাহে দূর দূরান্ত থেকে আলু নিয়ে হিমাগারের সামনে এসে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। কোন কোন হিমাগারে ভাড়া বাবদ অতিরিক্ত টাকা নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
গত বছর বাজারে আলুর দাম বেশি ছিল। এবার নেপালে আলু রফতানি করা হবে জেনে কৃষকও উৎসাহিত হয়। তাই এবার ব্যাপকহারে আলুর আবাদ বেড়ে যায়। উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ বেশি হওয়ায় কমেছে আলুর দাম। তাই কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলু সংরক্ষণে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কৃষক তাদের উৎপাদিত আলু নিয়ে হিমাগারগুলোতে আসছেন। ব্যবসায়ীরাও স্থানীয়ভাবে আলু ক্রয় করে সংরক্ষণ করতে আসছেন হিমাগারে। তাই হিমাগারে আগের তুলনায় চাপ বেড়েছে কয়েকগুন। কৃষকেরা জানান, হিমাগার মালিকরা প্রতি বস্তা আলু সংরক্ষণের জন্য বস্তা প্রতি ৫০-৭০ টাকা বেশি নিচ্ছেন। তারা জানান, হিমাগার মালিকরা সমিতির সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছে মতো অর্থ আদায় করছে এবং ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত আলু হিমাগারে রাখছেন।
রাহবার হিমাগার লিমিটেড এর সহকারী ম্যানেজার আনিসুল ইসলাম জানান, কোল্ড স্টোর সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বস্তা প্রতি ৩শ থেকে ৩২০ টাকা নেয়া হচ্ছে। হাওলাদার হিমাগার লিঃ এর নির্বাহী পরিচালক গোলাম সারোয়ার রবিন জানান, এবার আলু সংরক্ষণে চাপ রয়েছে। আমাদের জায়গা শেষের পথে। ভিড় সামলাতে হিমসিম খাচ্ছি। তাই হিমাগারে আপাতত আলু না আনার জন্য কৃষকদের অনুরোধ করে মাইকিং করছি।
তবে আমানত কোল্ড স্টোরের পরিচালক ও জেলা হিমাগার এসোসিয়েশন সভাপতি মো. আব্দুল্লাহ জানান, শুধু নামেই আমাদের সংগঠন কোন কাজের না। সমিতি প্রতি বস্তা আলু সংরক্ষণের জন্য ২৫০ টাকা ঠিক করে দিয়েছে। কিন্তু সুযোগ বুঝে কেউ এই সিদ্ধান্ত মানছে না। তাহলে লাভ কি সংগঠন করে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালকের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় আলুর আবাদ হয়েছে ২৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এবার ৩ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। এবার হেক্টরে ফলন হয়েছে সাড়ে ২৪ মে. টনেরও বেশি। এই হিসাবে জেলায় এবার প্রায় ৭ লাখ মে.টন আলু উৎপন্ন হয়েছে। অথচ জেলার ১৮ টি হিমাগারে ধারণ ক্ষমতা এক লাখ ৮০ হাজার মে.টন।
জরুরি ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ২ লাখ টন আলু রাখা সম্ভব। ইতমধ্যে সব হিমাগার পর্ণ হয়ে গেছে। বাজারে চাহিদার চেয়ে উৎপাদিত অবশিষ্ট ৫ লাখ টন আলু অনেক বেশি।
বর্তমানে পাইকারি বাজারে ৯-১০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। এখনও অনেক আলু মাঠেই রয়েছে। আলুর দাম কেজি প্রতি ৫ টাকাতেও নামতে পারে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। আলু নষ্ট হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে। তাই এখনই আলু রফতানির উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।