মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা দ্বিতীয় সপ্তাহে পা দিয়েছে। মেলার প্রথম দিন থেকেই ক্রেতা-দর্শনার্থীদের মোটামুটি সমাগম হলেও ছুটির দিন ও দিতীয় শুক্রবার হওয়ায় বাণিজ্যমেলায় ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। মেলার মাত্র অষ্টম দিনে এসে মেলা পেয়েছে তার চিরচেনা রূপ। দর্শনার্থীর পাশাপাশি বেড়েছে বেচাকেনাও। মেলায় গতকালই প্রথম প্রবেশ গেটে চোখে পড়ে দীর্ঘ লাইন। পার্কিং স্পেসসহ আশপাশের স্থানগুলো ভরে ওঠে কানায় কানায়। এমনকি সন্ধ্যায় মেলা ছাড়াও আশপাশের কোথাও খালি জায়গা ছিল না। গাড়ি রাখারও জায়গা হয়নি গতকাল। মেলার ভিতরে ও বাইরে মানুষের স্রোত ছিল লক্ষ্যণীয়। মেলাকে কেন্দ্র করে পুরো শেরেবাংলা নগরেই আশপাশের রাস্তায় প্রচুর যানজট দেখা গেছে। খামার বাড়ি থেকে শুরু করে তালতলা-শেওড়াপাড়া পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের।
বাণিজ্যমেলা আয়োজক কমিটির কর্মকর্তরা জানান, প্রতিটি মেলার ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রথম কয়েক দিন একটু ঢিলেঢালা থাকে। বাণিজ্যমেলার গত কয়েক দিনের পরিস্থিতি অনেকটাই সে রকম ছিল। তবে আজ (শুক্রবার) দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে সবাই খুশি। তারা জানান, এরই মাধ্যমে মেলার আনুষ্ঠানিক উৎসব শুরু হলো। সামনের দিনগুলোতে মেলা আরো জমবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন কর্মকর্তরা।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ স্টল-প্যাভিলিয়নেই প্রচুর ক্রেতা সমাগম। খোলা জায়গাগুলোতেও চোখে পড়ে মানুষের ভিড়। বিশেষ করে ইলেক্ট্রিক, ইলেক্ট্রনিক্স, সিরামিক ও গৃহস্থালি পণ্যের স্টল-প্যাভিলিয়নগুলোয় বেচাকেনা হচ্ছে অপেক্ষাকৃত বেশি। তবে অনেকেই আবার মেলায় আসছেন বিভিন্ন কোম্পানির নতুন নতুন পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে। কেউ আসছেন বিশেষ মূল্য ছাড়ে কেনাকাটা করতে।
মেলা ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল মেলার প্রতিটি স্টল ও প্যাভিলিয়নে ক্রেতাদের অসম্ভব ভিড় ছিল। তবে দেশি-বিদেশি ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য দেখতে ও ক্রয় করতে ক্রেতাদের বেশি ভিড় দেখা গেছে। মেলা উপলক্ষে এসব কোম্পানিও নতুন নতুন অনেক পণ্য নিয়ে এসেছে।
ওয়ালটন প্যাভিলিয়নের ইনচার্জ আকরামুজ্জামান অপু জানান, এবারের মেলায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি আকর্ষণীয় ডিজাইন ও মডেলের সর্বোচ্চ সংখ্যক ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্য প্রদর্শন করছে ওয়ালটন। মেলায় আসা ক্রেতারা যাতে একজায়গাতেই দরকারি সব ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল হোম এপ্লায়েন্স পণ্য পান সেজন্যই সর্বোচ্চ সংখ্যক পণ্য নিয়ে এসেছে ওয়ালটন। তিনি জানান, আপকামিংসহ অসংখ্য মডেলের বাহারি ও আকর্ষণীয় কালারের ফ্রিজ প্রদর্শন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ওয়ালটন দেশীয় ব্র্যান্ড হওয়ায় এ প্যাভিলিয়নে মানুষের একটা আলাদা আগ্রহ রয়েছে। এজন্যই প্রচুর মানুষ মেলার শুরু থেকেই এখানে আসছেন। প্রতিদিনই প্যাভিলিয়নে প্রচুর দর্শনার্থী এলইডি টিভি, ফ্রিজ ও মোটরসাইকেলসহ গৃহস্থালি পণ্য দেখতে এলেও তারা ফ্রিজ ও মোবাইল ফোন বেশি কিনছেন।
ওয়ালটন প্যাভিলিয়নের কর্মকর্তারা জানান, মেলার শুরুতেই ক্রেতা-দর্শনার্থীদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে তাদের প্যাভিলিয়ন। ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে এনার্জি সেভিং ও পরিবেশ বান্ধব উচ্চপ্রযুক্তির এলইডি বাল্ব ও সিলড লিড এসিড রিচার্জেবল ব্যাটারি। হট কেকে পরিণত হয়েছে ওয়ালটনের নতুন ডোনাট মেকার, স্যান্ডউইচ মেকার, কেক মেকার ও ট্রাভেল ব্লেন্ডার পণ্যসামগ্রী।
মেলাতে সনি র্যাংগস নিয়ে এসেছে বিদেশি কোম্পানির নজরকাড়া সব পণ্য। প্যাভিলিয়ন ইনচার্জ সারোয়ার জাহান চৌধুরী জানান, শুক্রবার ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় সব সময় হয়ে থাকে। তবে আজ (শুক্রবার) উপস্থিতি একটু বেশি মনে হচ্ছে। বিক্রিও হচ্ছে ভালো। তিনি বলেন, মেলাতে প্রথম দিকে উপস্থিতি কম থাকলেও শুক্রবারের উপস্থিতি ব্যবসায়ীদের আশা জাগিয়েছে। উপস্থিতির সঙ্গে আশানুরূপ বেচাবিক্রি। এভাবে মেলার বাকি দিনগুলো থাকলে সব ব্যবসায়ীর লক্ষ্য পূরণ হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মেলা ঘুরে দেখা গেছে, প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় রান্নাঘরের ঝামেলা থেকে গৃহিণীদের মুক্তি দিতে বিভিন্ন প্যাভিলিয়নে বিক্রি হচ্ছে ইন্ডাকশন চুলা, ইলেক্ট্রিক প্রেসার কুকারসহ নানা ধরনের গৃহস্থালি পণ্য। দেশীয় প্রতিষ্ঠান আরএফএলের প্যাভিলিয়নে ইলেক্ট্রনিক পণ্যের নতুন ব্র্যান্ড ভিশনের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পণ্য। বিক্রিও হচ্ছে আশানুরূপ। প্যাভিলিয়নে কর্মরত বিক্রয়কর্মী জানান, নামের কারণেই উপচেপড়া দর্শকক্রেতা আরএফএলের প্যাভিলিয়নে আসছে। বেচা-বিক্রিও প্রচুর হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এদিকে শীতের তীব্রতার মধ্যেও প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মেলায় পণ্য দেখাশোনা, পছন্দ ও ক্রয়ের জন্য ভিড় করছেন। গতকাল দুই মেয়েসহ স্ত্রীকে নিয়ে মেলাতে এসেছেন বাসাবোর এম এ যোবায়ের। তিনি বলেন, ছুটির দিনে ওদের নিয়ে বেড়াতে এসেছি। রাস্তায় যানজট কম থাকায় মেলাতে এসে ভালোই লাগছে। তবে মেলায় মানুষের ভিড়ে বাচ্চাদের নিয়ে মেলাতে ঘুরতে সমস্যা হচ্ছে।
মাইওয়ানের প্যাভিলিয়ন ইনচার্জ মো. মামুন জানান, প্রথম দুই দিনে গোছানোর কাজ একটু বেশি ছিল। বেচাবিক্রিও মোটামুটি হয়েছে। তবে আজ দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে। আশা করছি আগামীতে বেচাবিক্রি আরো ভালো হবে।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, বেশকিছু প্যাভিলিয়ন সাজানো হয়েছে মনোমুগ্ধকর সাজে। এর মধ্যে মেলায় ৩ তলাবিশিষ্ট প্যাভিলিয়ন রয়েছে অনেকগুলো। এর মধ্যে ওয়ালটন, নাদিয়া ফার্নিচার, টপটেন উল্লেখ্যযোগ্য।
ওয়ালটনের পিআর অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রবেশ গেটের খুব কাছাকাছি, আকর্ষণীয় সাজসজ্জা, সামনে সুপ্রশস্ত খালি জায়গা, ব্র্যান্ড হিসেবে নিজস্ব ঐতিহ্য এবং ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে লিফটের ব্যবস্থা থাকায় এবার ওয়ালটন প্যাভিলিয়নে লক্ষ করছি উপচেপড়া ভিড়।
তিনি বলেন, দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে ব্যতিক্রমী ও দৃষ্টিনন্দন প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করেছে ওয়ালটন। তবে দর্শনার্থী-ক্রেতাদের নিরাপত্তার দিকটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্যাভিলিয়ন নির্মাণে প্রাধান্য পেয়েছে ‘স্কাই হাই’ থিম। নিরাপত্তা ইস্যুকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে উচ্চমানের স্টিলের বিম, ফ্রেম, ফায়ার ও ইলেকট্রিক্যাল সেফটি ইক্যুইপমেন্ট। একইসঙ্গে পরিবেশের বিষয়টি মাথায় রেখে অনুসরণ করা হয়েছে গ্রিন-বিল্ডিং মেথড। তিনি আরো বলেন, তিনটি বিষয়কে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রথম দিকটি হলো ওয়ালটনের ভিশন অনুযায়ী প্যাভিলিয়নের ডিজাইন করা। দ্বিতীয়ত মেলায় আগত দর্শক-ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে এটি দৃষ্টিনন্দন করা। তৃতীয়ত নিরাপত্তা।
উল্লেখ্য, মাসব্যাপী ২১তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রবেশ মূল্য বা টিকিট মূল্য ৩০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য থাকছে ২০ টাকা করে।