সাক্ষাৎকার: মহামারি পরিস্থিতিতেও যে ঘরে বসে না থেকে নিজেকে স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে নেয়া যায় তাই প্রমাণ করেছেন শাহনাজ পারভীন।তিনি থাকেন ঢাকার শান্তিনগরে।হোমমেইড ফ্রোজেন ফুড ও সবধরণের খাবার নিয়ে কাজ করেন। লকডাউন পরিস্থিতিতেও সকল বাঁধা এড়িয়ে একান্ত প্রচেষ্টায় নিজের কাজে পেয়েছেন সফলতা।অনলাইনে তিনি ‘এলি’স কিচেন’ নামে একটি পেজের মাধ্যমে পণ্যের প্রচারণা করে থাকেন।
উদ্যোক্তা জীবনের প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে কিভাবে তিনি সফলতা পেলেন তাই জানিয়েছেন সানবিডি প্রতিনিধিকে।
‘আসসালামু আলাইকুম। আমি শাহনাজ পারভীন এ্যালি। ছোটবেলা থেকেই একটা স্বপ্ন ছিল কারো উপর বোঝা হবো না নিজে স্বাবলম্বী হবো। অনার্স থার্ড ইয়ার থাকাকালীন বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পরে ছেলের জন্ম এর মধ্যেই অনার্স, মাস্টার্স শেষ করলাম ইডেন কলেজ থেকে। মাস্টার্স শেষ করেও চাকরির জন্য এপ্লাই করা হলোনা শুধু ছেলের কথা চিন্তা করে। তারপর পর পর দুই মেয়ের জন্ম। ছেলেমেয়েদের যত্ন লেখাপড়া স্কুল আনা নেয়া করাতেই ব্যস্ত ছিলাম। কিন্ত সবকিছুর মাঝে মনের ভিতর নিজের কিছু করতে না পারার কষ্টটা জানান দিতো। নিজের সবকিছু জন্য হাজব্যান্ডের কাছে চাওয়াটা খুব খারাপ লাগতো।’
তিনি বলেন, ‘অনেকভাবে অনেক কিছু করার চেষ্টা করেছিলাম। স্কুলে জব নিতেও চেয়েছিলাম কিন্ত ছেলেমেয়েদের আনা নেয়া টেককেয়ার করার নির্ভরযোগ্য কেউ ছিলনা। এজন্য বাসায় থেকে কিছু করার চেষ্টা করছিলাম। ফ্রিল্যানসিং কোর্সে ভর্তি হয়েছিলাম আর ভর্তি হওয়ার কয়দিন পর লকডাউনের কারণে সব বন্ধ হয়ে গেল।তখন বাসায় বসে থেকে থেকে নিজেকে আরো হতাশায় পেয়ে বসলো।’
তিনি জানান, ‘আমি বরাবর খুব ভালো রান্না করতে পারতাম। সব সময় নিত্য নতুন খাবার বানাতাম এবং খেয়ে সবাই খুব পছন্দ করতো। বন্ধুদের অনুরোধে খাবারের একটা পেইজ খুললাম কিন্ত এটা থেকে কিভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায় সেটা বুঝে উঠতে পারছিলামনা। আর তখনই কাজিন এনভাইট দিলো উইতে। উইতে এসেই দেখলাম হাজার হাজার মহিলারা প্রত্যন্ত এলাকা থেকে কতো কিছু নিয়ে কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। এসব দেখে দেখে অনুপ্রাণীত হলাম ভীষণভাবে।তারপর উই থেকে শিখে দিকনির্দেশনা নিয়ে নিজের পেজটাকেও সাজালাম বিজনেস পেইজ হিসেবে। উইতে জয়েন হয়েছিলাম ২০২০ এর জুলাইতে একই মাসের ১৫ তারিখ থেকে আমি প্রথম পিৎজা ডেলিভারি দিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম যার রিভিউ ও পেয়েছিলাম আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো। এভাবে একের পর এক অর্ডার পেলাম এবং কাস্টমারদের ভালো ভালো রিভিউ পেয়ে আমার কাজের প্রতি ভালোবাসা বেড়ে গেলো দীগুন হারে। আর ডিসেম্বরেই হয়ে গেলাম লাখপতি আলহামদুলিল্লাহ। আর এর ই মধ্যে NCVQF এর অধীনে Cooking level 1,level 2 কমপ্লিট করলাম। যা আমার জন্য অনেক ভালো হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, ‘আমার কাজের ক্ষেত্রে বাঁধা ডেলিভারি ম্যান। যেহেতু তৈরি করা খাবার নিয়ে কাজ করি তাই ডেলিভারি একটা বড় সমস্যা। আশা করি এই সমস্যাগুলোও আস্তে আস্তে সমাধান হয়ে যাবে’।
শাহনাজ পারভীন আরও জানান, ‘আমার ভবিষ্যতে ইচ্ছে আছে বড় একটা রেস্টুরেন্ট তৈরি করবো।যেখানে খাবারের মানে কখনো কম্প্রোমাইজ করবোনা। ভেজাল খাবারের বিরুদ্ধে আমি হবো দৃষ্টান্ত ইনশাআল্লাহ। আর আমার রেস্টুরেন্টে আমি অনেক লোকের কর্মসংস্থান করতে পারবো ইনশাআল্লাহ’।
সানবিডি/ফাহমিদ জামান