গলদা চিংড়ির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে ভালো রেনুর অভাবে

প্রকাশ: ২০১৬-০১-০৯ ১৫:০৭:৩৪


chingri_dhakareport_31518বাগেরহাটে মানসম্মত রেনুপোনার অভাবে গলদা চিংড়ির কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চাষীরা। প্রাকৃতিক উৎস থেকে রেনু পোনা আহরণ সরকারিভাবে নিষিদ্ধ থাকায় হ্যাচারির অপুষ্ট রেনুপোনা চাষ করে ক্ষতির শিকার হচ্ছে চাষীরা। মৎস্য বিভাগ বলছে, সরকারিভাবে স্বাদু পানির রেনু উৎপাদনে জেলায় জেলায় প্রকল্প রয়েছে। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে উৎপাদিত মানসম্মত পোনা সরবরাহ করতে পারলে চিংড়ি চাষীদের সমস্যা সমাধান হবে।

বাগেরহাটের ফকিরহাট, চিতলমারী, ও মোল্লাহাট উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পরিমাণে গলদা চিংড়ির চাষ করা হয়। এসব এলাকার হাজার হাজার চিংড়ি চাষীদের প্রতি বছরে কয়েক কোটি রেনু পোনার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু প্রাকৃতিক উৎস নদ-নদী থেকে রেনু পোনা আহরণ বন্ধ থাকায় এবং সরকারিভাবে উৎপাদিত রেনু পোনা চাহিদা মেটাতে না পারায় বেসরকারি হ্যাচারি থেকে উৎপাদিত অপুষ্ট ও গুণগত মানহীন পোনা চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চাষীরা।

চাষীরা বলছে প্রাকৃতিক উৎস্য থেকে আহরিত রেনুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, দীর্ঘদিন বাঁচে, অনেক বড় হয় এবং গুণগত মানসম্মত হওয়ায় চাষে উৎপাদন ভালো হয়। কিন্তু হ্যাচারির পোনার গুণগত মান খারাপ হওয়ায় ঘেরে গলদা মারা যায় এবং উৎপাদন ভালো হয় না। মানসম্মত রেনুর অভাবে হ্যাচারির পোনা চাষ করে ক্ষতির শিকার হচ্ছে।

ফকিরহাটের গলদা চিংড়ি চাষীরা জানান, হ্যাচারির রেনু চাষে খরচ খুব বেশি হয়। আড়াই হাজার রেনুপোনা কিনে ঘেরে ছাড়লে এর ভেতর ৮-৯শ রেনু পানির সঙ্গে মানাতে না পেরে মারা যায়। হ্যাচারির রেনু পোনার খাবারের পরিমাণ বেশি দরকার হয়। এছাড়া শীত মৌসুমে এই গলদা তাপমাত্রার কারণে মারা যায়।

বাগেরহাট জেলার সবচেয়ে বড় চিংড়ি বিক্রয়কেন্দ্র ফকিরহাটের ফলতিতা বাজার। সেখানে কয়েকজন গলদা চাষী জানান, নদীর রেনু থেকে যে গলদা হয় তা ঘেরে ২ থেকে আড়াই বছরও রেখে বড় করা সম্ভব। খাবারের পরিমাণ কম দরকার হয় এবং মাছের ওজন ও অনেক ভালো হয়। হ্যাচারির রেনুপোনার চেয়ে নদীর রেনু চাষে হাজার প্রতি কমপক্ষে ১২ হাজার টাকা বেশি লাভ করা যায়।

প্রাকৃতিক উৎস নদ-নদী থেকে রেনুপোনা আহরণ করতে পারলে চিংড়ির উৎপাদন বাড়বে এবং বেশি পরিমাণ বৈদিশক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে সরকারের কাছে দাবি জানান চাষীরা।

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ইফতেখারুল আলম জানান, মৎস্য সংরক্ষণ আইনে নদী থেকে গলদার রেনু আহরণ নিষেধ রয়েছে। কারণ নদী থেকে রেনু সংগ্রহ করতে গিয়ে রেনু আহরণকারীরা অন্য মাছের অনেক পোনা নষ্ট করে ফেলে। সরকারিভাবে স্বাদু পানির রেনু উৎপাদনে জেলায় জেলায় প্রকল্প রয়েছে।

তবে ওই প্রকল্পের মাধ্যমে উৎপাদিত রেনু চাহিদার ২০ ভাগ ও  মেটাতে পারে না। সম্প্রতি সরকারি রেনু উৎপাদন কেন্দ্রে উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। এ প্রকল্প থেকে চাষীদের প্রয়োজনীয় রেনুপোনা সরবরাহ করতে পারলে চাষীদের সমস্যা দূর হবে।

তবে তিনি স্বীকার করে বলেন, ‘রেনুর ব্যাপক চাহিদা থাকায় অস্বাদু হ্যাচারি মালিকরা গুণগত মানের তোয়াক্কা না করে শুধু ব্যবসায়ের দিকে নজর দেয়ায় চাষীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।’ চলতি অর্থবছরে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় ৭ হাজার ৯০০ চিংড়ি ঘেরে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি পিস হ্যাচারির রেনু চাষ করা হয়েছে। এই চাষের সঙ্গে প্রায় ৮ হাজার চিংড়ি চাষী জড়িত রয়েছে।

সানবিডি/ঢাকা/আহো