ভারতে বাবরি মসজিদ ভেঙে রামমন্দির নির্মাণের কাজ চলছে। রামন্দিরের পরে মথুরা নিয়ে মামলা দায়ের হয়েছে বছর দু’য়েক আগেই। ওই মামলা এখনো আদালতের বিচারাধীন। এবার হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের করা মামলার ভিত্তিতে পরোক্ষে ‘বিতর্কিত’ তকমা লাগল আর এক উপাসনাস্থল কাশী বিশ্বনাথ মন্দির লাগোয়া জ্ঞানবাপী মসজিদে।
বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) বারাণসীর স্থানীয় আদালত কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ও জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষা করার অনুমতি দিলো ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণকে (আর্কিয়োলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া)। আদালতের নির্দেশে দু’জন সংখ্যালঘুকে নিয়ে গড়তে হবে পাঁচজনের একটি দল। তারা ওই মন্দির ও মসজিদ চত্বরে প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষার কাজ করবেন। একইসাথে আদালত জানিয়েছে, এই সমীক্ষার খরচ বহন করবে উত্তরপ্রদেশ সরকার।
রামমন্দির আন্দোলনের সময়েই সঙ্ঘ পরিবার ও হিন্দুত্ববাদীরা হুমকি দিয়েছিল, ‘ইয়ে তো সির্ফ এক ঝাঁকি হ্যায়, কাশী-মথুরা বাকি হ্যায়’। ওই সুর মেনে রামমন্দির আন্দোলনের সাফল্যে উজ্জীবিত হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো প্রথমে মথুরার শ্রীকৃষ্ণ জন্মস্থান নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়। পাল্টা মামলা করে মুসলিমদের কয়েকটি সংগঠন। তার মধ্যেই কাশী বিশ্বনাথ মন্দির চত্বরের মধ্যেই জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে ‘স্বয়ম্ভু জ্যোতির্লিঙ্গ ভগবান বিশ্বেশ্বর’-এর তরফে আইনজীবী হিসেবে আদালতের দ্বারস্থ হন আইনজীবী বিজয়শঙ্কর রস্তোগী। তার আবেদন, জ্ঞানবাপী মসজিদ যে জমিতে গড়ে উঠেছে, তা আদতে হিন্দুদের। সুতরাং ওই জমি হিন্দুদের ফিরিয়ে দেয়া হোক। ওই আইনজীবীর আর্জি, ১৬৬৪ সালে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব দু'হাজার বছরের পুরনো কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের একাংশ ধ্বংস করে সেখানে গড়ে তোলেন মসজিদ।
জ্ঞানবাপী মসজিদ কমিটি এই আবেদনের পাল্টা আর্জি জানিয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে রাজনীতির রং লেগেছে। এমআইএম নেতা তথা এমপি আসাদউদ্দিন ওয়েইসি বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। মূলধারার অন্য কোনো রাজনৈতিক দল এ নিয়ে এখনো প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় মন্দির-মসজিদগুলো যে যেখানে ছিল, তার অবস্থান বদল বা চরিত্র বদল করা যাবে না বলে ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থলে আইনে বলা হয়েছে।
তবে ওই আইন খারিজ করার জন্য বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী ও অশ্বিনী উপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে রেখেছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদী সরকারের আমলে বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের উগ্র হিন্দুত্ববাদী চেহারা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। ওই কারণেই একের পর এক উপাসনাস্থল নিয়ে আদালতে মামলা করে সামাজিক ও ধর্মীয় উত্তেজনা তৈরি করে মেরুকরণ করার প্রক্রিয়া চলছে। গোটা বিষয়টিতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মদত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে একাধিক সংগঠন। একইসাথে তাদের অভিযোগ, মোদি সরকারের আমলে প্রতিবাদ করলেই নানা মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে এমনকি জঙ্গি বা মাওবাদী তকমা দিয়ে জেলে পাঠানোর ঘটনাও প্রায় স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এ কারণে মথুরা বা কাশী মামলার ক্ষেত্রে কতজন সুর চড়াবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে সংখ্যালঘুদের বড় অংশের মধ্যেই।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা