দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ও নতুন করে লকডাউন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির বিষয়টি মাথায় রেখে আগামী বাজেট প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছে ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।এই কঠিন পরিস্থিতিতে ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখা বিশেষত উৎপাদন ও ভোগব্যয়ে গুরুত্ব দেয়া এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঝরে পড়ার হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্যে কার্যকর ও বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন ব্যবসায়ীরা। একইসাথে তারা ভ্যাট, ট্যাক্স যৌক্তিক হারে কমানোসহ ব্যবসাবান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের দাবি জানান।
শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘প্রাক-বাজেট আলোচনা : অর্থবছর ২০২১-২২’ শীর্ষক ওয়েবিনারে তারা এসব কথা বলেন।
ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানসহ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, অর্থনীতিবিদ, উদ্যোক্তা ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা তাদের মতামত তুলে ধরেন।
ড. মসিউর রহমান বলেন,ব্যবসা বাণিজ্য তথা অর্থনীতির প্রসার না হলে রাজস্ব আয় বাড়বে না। শুল্ককর গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে না থাকলে ব্যবসা সম্প্রসারণ হয় না। অন্যদিকে সরকারের ব্যয়ের জন্য রাজস্ব প্রয়োজন। তবে এই ব্যয় কোন খাতে হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যাচ্ছে কিনা, মানুষ তাও জানতে চায়। তিনি অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ব্যাহত না করে কিভাবে রাজস্ব বাড়ানো যায়, সরকারকে তার একটি দিক-নির্দেশনা প্রদানের জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ৭ থেকে ১০ বছরের জন্য একটি টেকসই ও সহনশীল কর কাঠামো দেশে বিনিয়োগ সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া করহার গ্রহণযোগ্য হওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, নাগরিকদের উপর আরোপিত কর সেই নাগরিকের কাছে গ্রহণযোগ্য কিনা সে বিষয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন। সেই সাথে ঘন ঘন করের হার বাড়ানো-কমানো ঠিক নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান আয়কর ও ভ্যাট, আর্থিক খাত, শিল্প ও বাণিজ্য এবং জ্বালানি, যোগাযোগ ও স্বাস্থ্য অবকাঠামোসহ অন্যান্য খাতকে বাজেটে গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষে মত দেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, করোনার প্রথম ধাক্কার পর অর্থনীতি কিছুটা পুনরুদ্ধার হলেও নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এখন নতুন করে হয়তো গতি মন্থরতা শুরু হবে। এ পরিস্থিতিতে সামাজিক সুরক্ষা দরকার।
তিনি বলেন, এক সময়ের রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি এখন স্থানীয় শিল্পনির্ভর হয়ে উঠছে। এজন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতকে গুরুত্ব দিতে হবে। এসএমই উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন প্রক্রিয়া এখনো সহজ নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমান বলেন, এসএমই খাত এখনো নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত এ খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার অর্থ পাঁচ দফা সময় বাড়ানোর পরও বিতরণ হয়নি। এখন পর্যন্ত অর্থছাড় হয়েছে ৬৮ শতাংশ। অথচ রপ্তানির জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ৯৮ শতাংশ ছাড় হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আইপিডিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে বন্ড মার্কেট উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী ঋণের জন্য ব্যাংকের ওপর চাপ কমানো সম্ভব হবে।
এ সময় এনবিআরের কর্মকর্তারা বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকারের রাজস্ব আহরণ সুরক্ষিত রাখার ওপর গুরুত্ব দেন। এছাড়া ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক দাবির বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাবের কথাও জানান তারা।
ওয়েবিনারে ‘আর্থিক খাত’, ‘শিল্প ও বাণিজ্য’, ‘ট্যাক্সেশন ও ভ্যাট’, ‘অবকাঠামো (জালানী, লজিস্টিক ও স্বাস্থ্য)’ এই ৪টি খাতের উপর পৃথক আলোচনা হয়।
‘আর্থিক খাত’ সেশনের আলোচনায় আইপিডিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম ছাড়াও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সিইও নাসের এজাজ বিজয়, নগদ-এর সিইও রাহেল আহমেদ এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম অংশগ্রহণ করেন।
/সানবিডি/এ এ