২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি। জাতীয় মেধার ভিত্তিতে সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য ৪ হাজার ৩৫০ জন ভর্তি-ইচ্ছুক নির্বাচিত হয়েছেন। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৪৮ হাজার ৯৭৫ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। যা মোট পরীক্ষার্থীর ৩৯.৮৬ শতাংশ। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেনে শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানার শারীরিক প্রতিবন্ধী কৃষক মো. দাদন মোল্লার মেয়ে রাবেয়া আক্তার।
মেধাকে কোনোভাবে দমিয়ে রাখা যায় না তা আবারও প্রমাণ করেছেন তিনি। কিন্ত‘ আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তার মেডিকেলে ভর্তি নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। তবে হতদরিদ্র এই পরিবারের দুঃখের কথা জেনে এগিয়ে এসেছেন আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শরীয়তপুর-২ আসনের সংসাদ ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম,এমপি। মন্ত্রীর মায়ের নামে গড়ে তোলা বেগম আশ্রাফুন্নেছা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে রাবেয়ার মেডিকেলে ভর্তি ও পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি।
সখিপুর থানার সখিপুর ইউনিয়নের হাজী ইমান আলী মোল্লাকান্দি গ্রামের মো. দাদন মোল্লা ও ডালিয়া বেগম দম্পতির পাঁচ মেয়ের মধ্যে সেজ রাবেয়া আক্তার। শারীরিক প্রতিবন্ধী দাদন মোল্লা পেশায় একজন কৃষক। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান মেধাবী রাবেয়া ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় ভীষণ আগ্রহী।
প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি বাড়ির পাশের ৭০ নম্বর সখিপুর মোল্লা বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে সাধারণ বৃত্তি পেয়ে পিএসসি পাস করেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. হুমায়ুন কবির উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। পরবর্তী সময়ে হাজী শরীয়তউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ২০২০ সালে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এবারের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান রাবেয়া। কিন্তু মেডিকেলে ভর্তি নিয়ে চরম হতাশায় তার পরিবার।
রাবেয়ার বাবা দাদন মোল্লা বলেন, ‘মেয়েকে ঠিকভাবে লেখাপড়ার খরচ দিতে পারিনি। তারপরও সে নিজের ইচ্ছা শক্তিতে ও কঠিন পরিশ্রম করে লেখাপড়া অব্যাহত রেখেছে। এখন মেয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু‘ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এত টাকা আমি কীভাবে জোগাড় করবো চিন্তায় ছিলাম। সেই চিন্তা থেকে মুক্ত করলো উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম এমপি। আল্লাহ তাকে সুস্থ’ রাখুক। দীর্ঘজীবী করুক।
রাবেয়ার মা ডালিয়া বেগম বলেন, ‘আমার মেয়েকে আমরা পরিবার থেকে কোনো সহযোগিতা করতে পারি নাই। রাবেয়া টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ চালিয়েছে। আমার মেয়ে ডাক্তার হবে, এটা যে কত খুশির বুঝাতে পারব না।
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, ‘আমার মায়ের নামে বেগম আশ্রাফুন্নেছা ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে অন্তত ১৫০ শিক্ষার্থীকে পড়াশোনা জন্য সহযোগিতা করা হচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার, ল্যাপটপ দেয়া হয়েছে। নদী ভাঙা মানুষকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। শরীয়তপুরে ৭০ হাজার মাস্ক এবং পাঁচটি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু রাবেয়া প্রতিবন্ধীর মেয়ে। তাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে পড়াশোনার খরচ দেব। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে রাবেয়াকে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়া হবে। প্রতি মাসে খরচের টাকা অ্যাকাউন্টে চলে যাবে।