চলমান লক ডাউন ও পবিত্র মাহে রমজান দুয়ারে কড়া নাড়ছে। ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া কড়া লক ডাউন এবং ধর্মীয় এ আচারকে সামনে রেখে নিত্য পণ্যের দাম বাড়ছে। প্রতি বছরই বাড়ে। সরকার যথারীতি বাজার নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা করে নিত্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা নিয়ে বারবার বক্তব্য দিলেও জনগনকে বাড়তি দাম পরিশোধ করে নিত্য পণ্য কিনতে হয়। বেসরকারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা নিত্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারনে পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, পথে পথে চাঁদাবাজী, ব্যাংক ঋনের ধীর গতি সহ নানা সমস্যার কথা বলেন।
সরকার সব সময়ই বলে থাকে গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে সব কিছু নিয়ন্ত্রনে তার সচেষ্ট। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র মাধ্যমে নিত্য পণ্য যথাযথ দামে জনগনের কাছে পৌছে দেয়া হবে এমন কার্যক্রম চলমান। তবে এবার টিসিবিও দাম বাড়িয়েছে তাদের পণ্যের।
গত ১ এপ্রিল তারা সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ১০ টাকা বাড়িয়েছে। বিক্রি করছে একশত টাকা লিটার। আর প্রতি কেজি চিনিতে ৫ টাকা বাড়িয়ে ৫৫ টাকায় বিক্রি করছে। রাজবাড়ীর বাজারগুলোতে বর্তমানে ১৩৯ টাকা দরে প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে। যা আগের চেয়ে ৪ টাকা বেশি।
রাজবাড়ীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায় বাজারে চালের দামও বাড়তির দিকে। সরু নাজির শাইল ও মিনিকেট চাল মান ভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি বিআর ২৮ জাতের চাল ও কিনতে হচ্ছে ৫২-৫০ টাকা কেজিতে। মোটা চালের দাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি। রাজবাড়ীর ২-৩ টি পাইকারি কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা যায় দেশি পিঁয়াজের দাম ২২ ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৬৬ শতাংশ বেশি।
এদিকে মাছ, মাংসের দামও বেড়েছে। বেড়েছে তরিতরকারির দামও। ব্রয়লার মুরগি ৫৯ টাকা কমে কেজিতে এখন ১১০-১১৫ টাকা। সোনালিকা জাতের মুরগি ২৮০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৩৬০-৩৭০ টাকা। বাদ নেই তরল দুধ ও গুড়ো দুধের দামও। মিল্ক ভিটা তরল দুধ এখন ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আগে ছিল ৭০ টাকা। আর গুড়ো দুধের দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬৯০ টাকায়। বাদ জায়নি আঠা, সুকনো মরিচ, ছোলা বুট সহ অন্যান্য নিত্য পণ্যের দাম বাড়া।
নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় জনগনের ক্রয় ক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যারা বাজার থেকে নিত্য পণ্য কিনতেন, তারা অনেকটাই হতাশ।
এদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন এবং মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া চলমান লক ডাউনে বাংলাদেশ। ১৪ এপ্রিল থেকে যা আরো কড়াকড়ি ভাবে পালন হবে বলে নির্দেশনা পাওয়া গেছে। ফলে গণপরিবহন, যাত্রীবাহি ট্রেন ও নৌযানসহ অভ্যান্তরিন রুটের বিমান চলাচল বন্ধ। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। ফলে লক ডাউনে ১৪ এপ্রিলের আগ পর্যন্ত সমার্থবানরা নিত্য পণ্য কেনার জন্য বাজারে ও দোকানে ভিড় করেন। যদিও লক ডাউনের ঘোষনায় বলা হয়েছে লক ডাউন কড়াকড়ি হলেও জরুরি সেবা ও গনমাধ্যম, নিত্য পন্যের দোকান, পন্যবাহী যানবাহন ও শিল্প কারখানা খোলা থাকবে। তথাপি মানুষ আতংঙ্কিত হয়ে বাজারে ও দোকানে ভিড় করছে এবং কিছুটা বেশি দামে নিত্য পণ্য কিনছেন। সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীরা সব সময় টুপাইস কামাই করার ধান্ধায় থাকেন এবং সুযোগের সদব্যবহার করেন।
রাজবাড়ী সদরের বাজারগুলোতে বাজার করতে আসা কয়েকজন সাধারণ ক্রেতা জানান, লকডাউন দীর্ঘায়িত হলে বিপদ সবার বাজারে নিত্য পণ্যের দামের আগুনের উত্তাপে পুড়বে জনগনের হাত। আর খাবার অভাব হলে কি জনগনকে ঘরে বন্দি করে রাখা যাবে। প্রয়োজনের জন্যই তারা ঘর থেকে বেরিয়ে আসবে।
এর মধ্যে মহাপূন্যের মাস রমজান এসে যাবে এবং নিত্য পন্যের লাগামহীন দাম জনগনকে কষ্ট দেবে। ধর্মীয় উৎসব নিয়ে সারা বিশ্বের বাজারে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে। সম্ভবত: বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে উৎসব পার্বনে নিত্যপন্য সহ অন্যান্য পন্যের দাম লাগামহীন ভাবে বেড়ে যায়। তবে আমরা বিশ্বাস করি, সরকার আন্তরিক হলে ব্যবসায়ীদের এ অশুভ উদ্যোগ নিয়ন্ত্রন করতে পারে। কিন্তু কোন হাতের থাবায় সরকার ব্যর্থ হয়, আর জনগন অতিকষ্টে কাঠের পয়সা খরচ করে নিজেদের চাহিদা পূরণ করেন।