ভারতে ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কমলে বাংলাদেশে কমবে .৬ শতাংশ

প্রকাশ: ২০১৬-০১-১০ ১৪:২৮:০৭


financeভারতে ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কমলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি কমবে দশমিক ৬ শতাংশ। আর ভারতে ১ শতাংশ বাড়লে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধি বাড়বে দশমিক ৩৭ শতাংশ। অন্যদিকে ধনী দেশগুলোর গ্রুপ জি-৭-এর প্রবৃদ্ধি কমলে বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি কমবে আরও বেশি, ১ দশমিক ২ শতাংশ।

ভারত ও জি-৭ দেশগুলোর (কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গে প্রবাসী-আয় ও বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সম্পর্কের কারণে এই প্রভাবটি পড়বে। বিশ্বব্যাংক দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সংযোগ পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে এই হিসাব দিয়েছে। গত বুধবার বিশ্বব্যাংক ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্ট’ করেছে। সেখানেই এসব তথ্য নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সংযোগ নিয়ে বিশেষ একটি অংশ রয়েছে।

বিশ্বব্যাংক সেখানে বলছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সারা বিশ্বের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার সংযোগ খুবই কম। তবে তার চেয়েও বেশি কম দক্ষিণ এশিয়ার নিজেদের মধ্যে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে কোনো ভালো বা খারাপ খবরের প্রভাব যতটা পড়ে, দক্ষিণ এশিয়ার নিজেদের সমৃদ্ধি বা সংকটের প্রভাব তার চেয়েও কম পড়ে। অর্থাৎ ভালো কিছু ঘটলেও এর সুফল খুব পায় না দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্ক সবচেয়ে কম এমন অঞ্চলের অন্যতম হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়া। বাণিজ্য এবং অর্থায়ন—দুই দিক থেকেই সম্পর্ক অত্যন্ত ক্ষীণ। তারচেয়েও কম নিজেদের মধ্যে। অথচ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক মিল অনেক বেশি, সীমান্ত অনেক দীর্ঘ, জনসংখ্যা অনেক বেশি এবং এবং এর বড় অংশই বাস করে সীমান্তবর্তী এলাকায়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার রপ্তানি আয়, বিদেশি বিনিয়োগ এবং সাহায্যের বড় অংশই আসে চীন ও উচ্চ আয়ের দেশগুলো থেকে। নিজেদের মধ্যে এর পরিমাণ খুবই কম। এর কারণ হচ্ছে বিশ্বের অন্যান্য অংশ এবং নিজেদের মধ্যেও পরিবহন-ব্যবস্থা খুবই খারাপ, বাণিজ্য-সহায়ক সুবিধা দুর্বল, বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতা অনেক বেশি, বাণিজ্য পরিচালনার ব্যয়ও অনেক বেশি। একমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে প্রবাসী-আয় প্রবাহ।

উদাহরণ দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববাণিজ্যে দক্ষিণ এশিয়ার রপ্তানির পরিমাণ মোট বিশ্ব অর্থনীতির ৫ শতাংশের কম। আর দক্ষিণ এশিয়ার বড় বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তান পূর্ব এশিয়া ও সাব-সাহারা আফ্রিকায় বাজার সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। তবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা দক্ষিণ এশিয়ার নিজেদের মধ্যে রপ্তানির পরিমাণ। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের নিজেদের মধ্যে রপ্তানি হচ্ছে মোট রপ্তানির মাত্র ২ শতাংশের কম। আবার পূর্ব এশিয়ায় নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য পরিচালনায় যে ব্যয় হয়, তার চেয়ে ৮৫ শতাংশ বেশি ব্যয় হয় দক্ষিণ এশিয়ায়। তবে এই অঞ্চলে অনানুষ্ঠানিক বা চোরাচালানের পরিমাণ অনেক বেশি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত হচ্ছে এই অঞ্চলের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার। এর মধ্যে তারা ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি করে। নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক বস্ত্র, কৃষি ও পর্যটনকেন্দ্রিক। অন্যদিকে আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বেশি। এই অঞ্চলে বিদেশি প্রত্যক্ষ ও পোর্ট ফোলিও (শেয়ারবাজারে) বিনিয়োগের পরিমাণও খুবই কম। যা আসে তার ৯০ শতাংশই পায় ভারত। এগুলো আসে মূলত মরিশাস ও সিঙ্গাপুরের মতো অল্প কর ধার্যের দেশ থেকে। এই দুই দেশের সঙ্গে দ্বৈত কর পরিহারের চুক্তি আছে ভারতের।

এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের কিছু বিনিয়োগ রয়েছে। যেমন নেপালে জ্বালানি ও সরকারি খাত-সম্পর্কিত প্রকল্পে ভারতের বিনিয়োগ আছে। আর বাংলাদেশে আছে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প, ব্যাংক এবং পোশাক খাতে বিনিয়োগ।
রেমিট্যান্স বা প্রবাসী-আয়েই কেবল দক্ষিণ এশিয়া বিশ্ব অর্থনীতির একটি উল্লেখযোগ্য নাম। উন্নয়নশীল অঞ্চলের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া সবচেয়ে বেশি প্রবাসী-আয় পেয়ে থাকে। এর মধ্যে ভারত হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রবাসী-আয় পাওয়া দেশ। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের মধ্যেও প্রবাসী-আয় প্রবাহ অনেক বেশি। উদাহরণ দিয়ে বিশ্বব্যাংক বলেছে, ‘বাংলাদেশ-ভারত মাইগ্রেন্ট করিডর’ বিশ্বের তৃতীয় বড় করিডর। এর বেশি লোক চলাচলকারী করিডর হচ্ছে মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন-রাশিয়া।

সানবিডি/ঢাকা/আহো