প্রতি বছর দেশে যে পরিমান আলু উৎপাদন হয় তা রংপুর অঞ্চল থেকে এক তৃতীয়াংশ এর যোগান দেওয়া হয়ে থাকে। দেশে আলুর চাহিদা প্রতি বছর প্রায় এক কোটি মেট্রিক টন। যার প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও লালমনিহাট জেলা থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবারাহ করা হয়।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের রংপুর অঞ্চলের প্রধান খন্দকার আব্দুল ওয়াহেদ জানান, এবার রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ৯৭ হাজার ৩ শত ১৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করে উৎপাদন ধরা হয়েছে ২৪ লাখ ৮৬ হাজার ১ শত ৮২ মেট্রিক টন। যা দেশে মোট উৎপাদনের চার ভাগের এক ভাগ এই অঞ্চল থেকে যোগান দেওয়া হয়ে থাকে।
রংপুর জেলা কৃষি কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান, রংপুর জেলায় এবার ৫৩ হাজার ৫ শত ২৫ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ করা হয়েছে। উৎপাদন ধরা হয়েছে ১৪ লাখ ৫৬ হাজার ২৫ মেট্রিক টন। গত বছর চাষ করা হয়েছিল ৫০ হাজার ৬ শত ৬৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫ শত ৯৫ মেট্রিক টন।
তিনি জানান, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও লালমনিহাট জেলা যে পরিমান আলু চাষ করা হয় তার অর্ধেকেরও বেশি রংপুর জেলায় চাষ করা হয়ে থাকে।
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশের অন্যতম অর্থকারী ফসলের তালিকায় নাম লিখিয়েছে আলু।আর উৎপাদনের দেশের প্রধান জেলা এখন রংপুর। তবে সংরক্ষনের পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকা এবং ভরা মৌসুমে দাম না পাওয়ায় অধিকাংশ সময়ই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন আলুচাষীরা।
তবে আশার কথা হচ্ছে কৃষকদের কথা বিবেচনায় করে কৃষি বিপনন অধিদপ্তর আলু রাখার জন্য রংপুরে নির্মান করছে অহিমায়িত মডেল ঘর । যেখানে কৃষক পর্যায়ে ৪ মাস পর্যন্ত আলু সংরক্ষনে রাখা যাবে। ফলে কমবে লোকসানের শংকা। গেল বছরে রংপুর জেলায় আলু উৎপাদন হয়েছে ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫ শত ৯৫ মেট্রিক টন এবছর তা বেড়ে দাড়িয়েছে ১৪ লাখ ৫৬ হাজার ২৫ মেট্রিক টনে।
রংপুর জেলায় ৩৫ টি হিমাগারে আলু সংরক্ষনের সক্ষমতা রয়েছে মাত্র ৪ লাখ মেট্রিক টন। ফলে প্রতি বছর ভরা মৌসুমেই অনেক কৃষক আলু বিক্রি করে লোকসানের মুখে পড়ছেন। তবে এ থেকে উত্তরনে পদক্ষেপ নিয়েছে কৃষি বিপনন অধিদপ্তর। রংপুর বিভাগসহ সারাদেশের ১৬ টি জেলায় গৃহ পর্যায়ে পর্যায়ে আলু সংরক্ষনে অহিমায়িত মডেল ঘর নির্মান করে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করছে।
ইট,কাঠ,টিন ও বাশ দিয়ে তৈরি মডেল ঘরটির দৈঘ্য ২৫ ফিট,প্রস্থ ১৫ ফিট।ধারন ক্ষমতা ২৫ থেকে ৩০ মেট্রিকটন । যেখানে আলু রাখা যাবে ৩ থেকে ৪ মাস পর্যন্ত।
কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের-উপ-পরিচালক রংপুর আনোয়ারুল হক জানান, বসত বাড়ির উচু, আংশিক খোলা ছায়া যুক্ত স্থান নির্ধারণ করতে হবে। মাচাং পদ্ধতি থাকতে হবে। আমরা ঘরে গ্যাস পাইপ দিয়েছি। যাতে বাতাস ও আলো চলা চলের ব্যবস্থা থাকে।
কৃষকেরা জানান, বাজারে যখন আলুর সংকট সৃষ্টি হয় তখন আমরা এই আলু বাজারে এখানে আলু রাখলে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা শাস্রয় হয়। বিক্রি করার সময় ওজন ঠিক থাকে। এই হিমায়িত ঘওে তিন চার মাস পর্যন্ত আলু সংরক্ষন করা যায়। করে লাভোবান হয়ে থাকি। ঘরটিতে নির্মান খরচ ছাড়া অন্য কোন খরচ না থাকায় লোকসানের শংকা নেই । কৃষি অধিদপ্তর জানায় , গৃহ পর্যায়ে অহিমায়িত মডেল ঘর নির্মান করা হলে একদিকে যেমন কৃষকরা লাভবান হবেন ,অন্যদিকে আরও বেশি উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব ।