তামাক দ্রব্যের দাম সবচেয়ে কম— বিশ্বের এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় মিয়ানমারের পরেই বাংলাদেশে সবচেয়ে কম দামে সিগারেট পাওয়া যায়। জর্দা-গুলের মতো ধোঁয়াহীন তামাক আরও সস্তা। কম দামে এসব পাওয়া যায় বলেই বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার কমছে না বা তামাকের ব্যবহার কমানোর পেছনে অন্যতম বড় প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো।
এমন প্রেক্ষিতে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে তামাকপণ্যে কর বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা প্রজ্ঞা।
সংস্থাটি বলছে, তামাক কর বৃদ্ধি করা হলে প্রায় ১১ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবে এবং আট লক্ষাধিক তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে। এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদে তিন লাখ ৯০ হাজার বর্তমান ধূমপায়ী এবং ৪ লাখ তরুণের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।
সম্প্রতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রজ্ঞা জানায়, আগামী বাজেটে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের নিম্ন স্তরে খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৩২.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; মধ্যম স্তরে খুচরা মূল্য ৭০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; উচ্চ স্তরে খুচরা মূল্য ১১০ টাকা নির্ধারণ করে ৭১.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক এবং প্রিমিয়াম স্তরে ১৪০ টাকা খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে ৯১ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এরফলে সকল মূল্যস্তরে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্কের হার হবে চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬৫ শতাংশ। সিগারেটের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল থাকবে।
ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১.২৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এরফলে উভয় ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্কের হার হবে চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৪৫ শতাংশ। বিড়ির খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল থাকবে।
ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যে (জর্দা ও গুল) প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে ২৭.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১৫.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এরফলে উভয় ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্কের হার হবে চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬০ শতাংশ। জর্দা ও গুলের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল থাকবে।
প্রজ্ঞা বলছে, যদি বাংলাদেশ সরকার ২০২১-২২ অর্থবছরে সুপারিশ অনুযায়ী তামাকপণ্যের বিদ্যমান কর ব্যবস্থা সংস্কার করে, তাহলে সিগারেটের ব্যবহার ১৫.১% থেকে হ্রাস পেয়ে ১৪.১% হবে; ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে সম্পূরক শুল্ক, স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ এবং ভ্যাট বাবদ ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে, অর্থাৎ প্রথম বছরে সিগারেট খাত থেকে ১২ শতাংশ বাড়তি রাজস্ব আয় হবে।
নিম্নস্তরে সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধি তুলনামূলক স্বল্প আয়ের মানুষকে ধূমপান ছাড়তে উৎসাহিত করবে এবং একইসাথে উচ্চ স্তরে সিগারেটের দাম বাড়ানো হলে ধূমপায়ীদের সস্তা ব্রান্ডে স্থানান্তর হওয়ার সামর্থ্য সীমিত হবে।
বিড়ি এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে এসব পণ্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করবে এবং একইসাথে সরকারের রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।
প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, প্রস্তাবিত কর সুপারিশসমূহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি বাংলাদেশের তামাক করনীতিকে বিশ্বের সর্বোত্তম করনীতিগুলোর কাতারে নিয়ে যাবে।
তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ বদ্ধপরিকর জানিয়ে তিনি বলেন, এই লক্ষ্য অর্জনে তামাকপণ্যে কর বৃদ্ধি হচ্ছে একটি সাশ্রয়ী পদক্ষেপ। একইসাথে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জনে অন্যতম কার্যকর উপায় তামাকপণ্যে কর বৃদ্ধি।
সানবিডি/ এ এ/ এ খান