সপ্তাহ শেষ হতেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মেতে উঠবেন ঈদ-উল আজহার খুশির ঈদে। ঘরে ঘরে রান্না হবে পায়েস, সেমাই, পোলাও, মাংসসহ বাহারি খাবার।
খুশির ঈদে সব ভেদাভেদ ভুলে পরিবারের সবাই মিলে সাজবেন বাহারি নতুন পোশাকে। এ জন্য হাতে আছে আর মাত্র ৩টি দিন।
সে হিসাবে উৎসব-প্রিয় মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠার কথা রাজধানীর অভিজাত শপিং কমপ্লেক্স থেকে ফুটপাতের পোশাক বিপনি বিতানগুলো। কোথাও কোথাও ক্রেতা-দর্শানার্থীদের পদচারণায় তিল ধারণের ঠাঁই থাকবে না, এটাই যেন বাঙালির সংস্কৃতি।
তবে এবার কোরবানির ঈদ কেন্দ্রিক পোশাক বিপনি বিতানগুলোতে চিরচরিত সেই ভিড় দেখা যাচ্ছে না। অভিজাত ও মধ্যবিত্তের শপিং কমপ্লেক্সগুলোতে ক্রেতা-দর্শনার্থীর পদচারণা ঘটলেও সংখ্যায় তা খুব সামান্যই। আর ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা ক্রেতাশূন্য অলস সময় পার করছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
গত বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর), শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ও শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন শপিং কমপ্লেক্স ও ফুটপাতের ব্যবসাস্থল ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স, যাত্রাবাড়ী মার্কেট, রাজধানী সুপার মার্কেট, সদরঘাট, শান্তিনগরের কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, খিলগাঁও তালতলা সিটি কর্পোরেশন মার্কেট, মালিবাগ সুপার মার্কেট, মৌচাক মার্কেট, রামপুরা সুপার মার্কেট, মোল্লা শপিং সেন্টার, শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেট, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনী চকের কমপক্ষে ২০ জন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয় সানবিডির।
পাশাপাশি ঢাকা কলেজের সামনে গড়ে ওঠা ফুটপাতের কাপড়ের দোকান, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, মতিঝিল, ফকিরাপুল, ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনেসহ বিভিন্ন স্থানের ফুটপাত ব্যবসায়ীর সঙ্গেও কথা হয়।
শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রোজার ঈদের তুলনায় কোরবানির ঈদে পোশাকের বিক্রি কম হয়। সে কারণে রোজার ঈদের তুলনায় এবার ঈদ কালেকশনও (পোশাকের সংগ্রহ) কম। কিন্তু অন্য কোরবানির ঈদের তুলনায় এবার বিক্রির পরিমাণ বেশ কম।
আর ফুটপাত ব্যবসায়ীদের ভাষ্যমতে, এবার ঈদ কেন্দ্রিক বিক্রি একেবারেই নেই। এমনকী অন্য সাধারণ সময়ে যে পরিমাণ বিক্রি হয়, তাও নেই। নতুন পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসলেও ক্রেতা সংকটে তাদের অলস সময় কাটাতে হচ্ছে।
এসব ফুটপাত ব্যবসায়ীদের কাছে ছেলেদের জন্য আছে জিন্স ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট, পোল টি-শার্ট, বাহারি রঙের কলার ও গোল গলার গেঞ্জি, ফতুয়া, শার্ট, প্যান্ট ও শার্টের পিস, জুতা, গারদ, সুতি, সিল্কসহ সব ধরনের পাঞ্জাবি। মেয়েদের জন্য আছে টপস, শর্ট ওড়না, থ্রি-পিস, শাড়ি ও নাক-কান ও গলা সাজানোর অলঙ্কার।
মতিঝিলে রঙ-বেরঙের বাহারি পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন, দিনাজপুরের মো. আলিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, ঈদ হচ্ছে মুখে মুখেই। মানুষের মধ্যে ঈদ নিয়ে কোনো উৎসাহ-উদ্দীপনা নেই।
তিনি বলেন, অন্যবার ক্রেতাদের পদচারণায় হিমশিম খেতে হতো। দু’জন কর্মী নিয়েও অনেক সময় ক্রেতাদের সামাল দেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়তো। কিন্তু এবার সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। ক্রেতা একেবারেই নেই। এমনকি উৎসববিহীন দিনগুলোতে যে বিক্রি হতো, তাও নেই। এভাবে চললে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই দুরূহ হয়ে পড়বে।
বায়তুল মোকাররমের সামনে টুপির পসরা সাজিয়ে বসা মিলন মিয়া বলেন, ভাই, আর বলবেন না! আমাদের ব্যবসায় লালবাতি। কোনো ক্রেতা নেই। সারাদিন প্রায় অলস সময় পাড় করতে হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেলেও কেউ টুপির দরদামও করেন না। এটি শুধু আমার দোকানে না; আশেপাশে যেসব পাঞ্জাবি ও জামা-প্যান্টের দোকান আছে, সবারই একই অবস্থা! ভাই, বলেন এভাবে কি ব্যবসা টিকিয়ে রাখা যায়!
গুলিস্তানে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে কথা হয় ইদ্রিস আলীর সঙ্গে। ব্যবসা কেমন প্রশ্ন করতেই বিরক্ত হয়ে তিনি বলেন, আপনে-গোরে বইলা কী হইবো! আপনেরা কি আমগো ব্যবসা বাড়াই দিবার পারবেন! দোকানের দিকে তাকাইলেই তো বোঝেন যায় ব্যবসা কেমন চলতাছে!
এরপর কথা হয়, জুতার ফুটপাত ব্যবসায়ীর সঙ্গে।
তিনি বলেন, ভাই, রাগ কইরেন না। আমাদের সবারই ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। বিক্রি একেবারেই নেই। গ্রামের বাড়িতে বাবা-মা, ভাই-বোন সবাই ভাবে ঢাকায় ব্যবসা করি। ভালো আয়-রোজগার করি। সবারই কিছু না কিছু চাওয়া-পাওয়া থাকে। কিন্তু ব্যবসার যে অবস্থা, তাতে নিজেরই চলতে হচ্ছে কষ্ট করে। এ অবস্থায় পরিবারের অন্যদের চাহিদা মেটাবো কীভাবে!
রোজার ঈদে বিক্রি কেমন হয়েছে জানতে চাইলে ইদ্রিস আলী বলেন, আমি প্রায় ৪ বছর ধরে জুতার ব্যবসা করছি। ঈদের সময় প্রতিবারই বিক্রি ভালো হয়েছে। গত রোজার ঈদেও বেশ বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এবার বিক্রি একেবারেই নেই!