কারো বিপদে-আপদে বন্ধু কিংবা সহপাঠীরা পালন করতে পারে অনেক বড় ভূমিকা। কখনও কারো জীবন বিপন্ন হলে বন্ধুরাই দাঁড়াতে পারে তার পাশে। তাই তো, বন্ধু ছাড়া জীবন প্রায় অচল। কিন্তু পাইকগাছার কলেজছাত্রী উর্মির জীবনে বন্ধুদের ভূমিকা হয়ে উঠেছিল বড় নির্মম। সহপাঠীদের মিথ্যা অপবাদ সহ্য করতে না পেরে বেছে নিয়েছিলেন আত্মহত্যার পথ। আর মৃত্যুর আগে মাকে উদ্দেশ করে লিখে গিয়েছিলেন মৃত্যুর কারণও।
উর্মির পুরো নাম শারমিন আক্তার (২০)। সে পাইকগাছা উপজেলার হাড়িয়ারডাঙ্গা গ্রামের রেজাউল করিম সরদারের মেয়ে ও লক্ষ্মীখোলা কলেজিয়েট স্কুলের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী।
সহপাঠীদের অপবাদ সইতে না পেরে নিজের বাড়িতে বিষপানে আত্মহত্যা করেন। ঘটনা ছিল গত ৯ সেপ্টেম্বরের। কিন্তু ঘটনার ২০দিন পর উর্মির মা বাদী হয়ে পাইকগাছা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে উর্মির পাঁচ সহপাঠীকে। এরপরেই আলোচনায় আসে বিষয়টি। সুইসাইড নোটের বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়ে।
দু’পাতার প্যাডে নিজ হাতে লেখা উর্মির ওই সুইসাইড নোটটি উদ্ধার হয় তার মৃত্যুর একদিন পরে। তার সেই নোটে যেসব সহপাঠীর নাম উল্লেখ ছিল মামলায় তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। এরা হলেন- হাড়িয়ারডাঙ্গা গ্রামের সিরাজুল ইসলাম সরদারের মেয়ে লাকি (২০), কমলাপুর গ্রামের হারুন গাজীর মেয়ে হেনা খাতুন (২০), গজালিয়া গ্রামের রফিক সরদারের ছেলে রনি সরদার (২১), গণি গাজীর মেয়ে সামছুন্নাহার (২০) ও খলিল শেখের ছেলে রাব্বি শেখ (২১)।
সুইসাইড নোটে মাকে উদ্দেশ করে উর্মি লিখেছেন, ‘আম্মু! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও, তুমি ভাবতে পারো যে, আমি মনে হয় কোনো ছেলের জন্য মরে যাচ্ছি। কিন্তু না! আমি কোনো ছেলের জন্য এটা করছি না। আমি সত্যিই মরতে চাইনি, কিন্তু কি করব বলো? কেউ কি তার চরিত্র সম্পর্কে বাজে কথা শুনতে চায়।’
উর্মি আরো লিখেছে, ‘আম্মু, তুমি জানো না, সেদিন কলেজে সবার সামনে লাকি, হেনা, রনি, সামছুন্নাহার এরা সবাই আমাকে বলেছে যে, আমি নাকী চরিত্রহীন। মরার আগে কেউ মিথ্যা বলে না। আম্মু, আমি সত্যিই কোনো ছেলের সাথে বাজে কাজ করিনি। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে তোমাদের ছেড়ে চলে যেতে। কিন্তু কী করব! আমি এইসব কথা আর শুনতে পারছি না। অনেক সহ্য করছি, আর পারছি না। আমি সত্যিই কোনো বাজে কাজ করিনি। কিন্তু এটা কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। আমাকে সবাই খারাপ ভেবে আমার সাথে কেউ কথা বলতে চায় না।’
মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে উর্মি আরো লিখেছে, ‘আম্মু, তুমি আমাকে মাফ করে দিও। আমিও কোনোদিন ভাবিনি যে, আমাকে এভাবে মরতে হবে। অনেক আশা নিয়ে পাইকগাছায় পড়তে এসেছিলাম। কিন্তু সে আশা আর পূরণ হলো না। আমি তোমার আশা পূরণ করতে পারলাম না। আম্মু, তুমি ভালো থেকো। আমার জন্য বেশি ভেবো না। আমার কপালে যেটা লেখা ছিল সেটাই হচ্ছে।’