যশোর শহরের দড়াটানা মোড়। লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ। কয়েকজন রিকশাচালক, কলা বিক্রেতা আর একজন খর্বাকৃতির ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছেন। চোখ আটকে গেল নতুন গামছা ঘাড়ে দাঁড়ানো খর্বাকৃতির লোকটিকে দেখে।
লোকটির নাম আবদুর রাজ্জাক (৩৬)। পেশায় ফেরিওয়ালা। প্রায় ২০ বছর ধরে ফেরি করে নতুন গামছা, তোয়ালে বিক্রি করেন। যশোর শহরেই তার কেটে গেছে ১৭ বছর।
তিনি বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য আমার কোনো আপসোস নেই। আমি অন্যের কাছে হাত পাতছি না, এটিই আমার গর্বের।
জানা যায়, শহরের অলিগলিতে তার পদচারণা। প্রতিদিন ১৫-২০টি গামছা বিক্রি করতে পারেন। এতে তার লাভ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। তাতেই তার সংসার চলে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রাজ্জাককে দমাতে পারেনি। আত্মপ্রত্যয়ী এ যুবক অপরের মুখাপেক্ষী না হয়ে বেছে নিয়েছেন কাজ। তিনি সমাজের অনেকের কাছেই দৃষ্টান্ত। তার জন্ম রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার লক্ষণদিয়া গ্রামে। বর্তমানে যশোর শহরের রায়পাড়া এলাকায় মেসে থাকেন। স্ত্রী ও কন্যাসন্তান গ্রামের বাড়িতে থাকেন।
আবদুর রাজ্জাক জানান, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। এর পর আর এগোতে পারেননি। গ্রামের এক ব্যক্তি ফেরি করে গামছা বিক্রি করতেন। তাকে দেখেই প্রথমে উদ্বুদ্ধ হন। প্রথম দিকে কুষ্টিয়া শহরে তিন বছর ফেরিওয়ালা ছিলেন। প্রায় ১৭ বছর আগে চলে এসেছেন যশোর শহরে। নতুন গামছা, তোয়ালে ঘাড়ে নিয়ে শহরের অলিগলিতে বিক্রি করেন। গামছাই বেশি বিক্রি করেন তিনি।
বর্তমানে প্রতিটি গামছা ১০০-১২০ টাকা বিক্রি করেন। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে নরসিংদী থেকে তিনি এই গামছা সংগ্রহ করেন। এর পর বিক্রি করেন। প্রতিদিন ১৫-২০টি গামছা বিক্রি করতে পারেন। তাতে ৩০০-৪০০ টাকা আয় হয়। যশোর শহরের রায়পাড়া এলাকায় একটি মেসে থাকেন।
সেখানে ভাড়া গুনতে হয় মাসে ৬০০ টাকা। আর খাওয়া বাইরে হোটেলে সারেন। স্ত্রী, সন্তান গ্রামে থাকেন। মাঝে মাঝে তিনি সেখানে যান। গামছা বিক্রির টাকায় তার সংসার চলে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য তার কোনো আপসোস নেই বলে জানান।
আবদুর রাজ্জাক বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে সবাই আমার দিকে অন্য দৃষ্টিতে থাকান। অনেক ক্রেতা আমাকে খুবই উদ্বুদ্ধ করেন। আমি অন্যের কাছে হাত পাতছি না, এটিই আমার গর্বের।
অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আবদুর রাজ্জাক বলেন, অনেক ক্রেতা আমার কাছ থেকে গামছা কিনেন। তারা বলেন, আপনি অন্যের কাছ হাত না পেতে, নিজে ব্যবসা করছেন, এ জন্যই আপনার কাছ থেকে কিনলাম। মানুষের এমন সহযোগিতায় এগিয়ে যাওয়ার সাহস পাই।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক রিকশাচালক বলেন, অনেক দিন থেকেই ওকে (আবদুর রাজ্জাক) শহরে ফেরি করে গামছা বিক্রি করতে দেখি। এটা খুবই ভালো। অনেক সুস্থ মানুষকেও ভিক্ষা করতে দেখি এই শহরে।
রিকশাচালকের কথায় সায় দিলেন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কলা বিক্রেতাও। আবদুর রাজ্জাক শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও আত্মপ্রত্যয়ে তিনি কর্মসংস্থান করেছেন নিজের। সংসারের ভার সামলাচ্ছেন।