টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলায় ধানে ব্লাস্টের আক্রমণে একাধিক কৃষকের জমিতে ‘৮১ ধানে’ দেখা দিয়েছে চিটা। এতে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে চরম হতাশায় ভুগছেন কৃষকরা।
জানা যায়, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও উপজেলায় ১১ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ২৯, ২৮ ও ৫৮’সহ বিভিন্ন জাতের ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এদের মধ্যে আবার দু’একজন কৃষকের ধানে ব্লাস্টের আক্রমণের কথা শোনা যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ‘ব্রি-ধান ৮১’তে। একাধিক কৃষকের জমিতে ৮১ ধানে দেখা দিয়েছে চিটা। বোরো ধানের ওপর নির্ভর করে কৃষক পরিবারের একগুচ্ছ স্বপ্ন। এই বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে চরম হতাশায় ভুগছেন তারা। বিষয়টি উপজেলা কৃষি অফিসে জানালেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ তুলেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।
বাসাইল উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত এক কৃষক জানান, ‘প্রায় দুইশ’ শতাংশ জমিতে ভালো ফলনের আশায় বোরো ধান-৮১ আবাদ করি। ধান রোপণের পর মনে হচ্ছিল ফলন ভালো হবে। শীষ বের হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে ধানগুলো পাকতে শুরু করে। ধানগুলোতে ক্রমেই চিটা দেখা দেয়। এরপর বিএডিসি নির্ধারিত স্থানীয় ডিলারের সঙ্গে পরামর্শ করে ধানে মেডিসিন ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তাতেও কোনও কাজ হয়নি। এখন সব ধানে চিটা হয়েছে। দুইশ’ শতাংশ জমির ধান কাটলেও এক মণ ধানও হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংক থেকে সিসি লোন নিয়ে ধানের আবাদ করেছি। দুইশ’ শতাংশ জমিতে সব মিলিয়ে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ধানের আবাদ করেই আমার সংসার চলে। এখন আমার পথে বসা ছাড়া কোনও উপায় নেই। সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি।’
জানা যায় বাসাইল উপজেলায় ২৫ জন ডিলার রয়েছে। প্রতিজন ডিলারকে বিএডিসি থেকে ১০ কেজি ওজনের প্রায় ১০টি করে প্যাকেট দেওয়া হয়েছে। অনেক কৃষকের ধান একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। সম্ভবত এ উপজেলার জমিগুলো ‘ব্রি-ধান ৮১’ ধান আবাদের উপযোগী নয়। এ উপজেলায় ২৯ ধানের সবচেয়ে ফলন ভালো হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজনীন আক্তার জানান, ‘উপজেলায় এবার ১১ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এ উপজেলার ব্রি-ধান ২৯, ৫৮, ৮১, ৮৬, ৮৮, ৮৯ এবং হাইব্রিডসহ কয়েক রকমের জাতের ধান আবাদ করা হয়েছে। এসব ধান এখন পর্যন্ত মাঠে ভালো আছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় আমরা দেখতে পারছি বিভিন্ন ধরণের রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ আছে। ব্লাস্ট, ব্যাকটেরিয়া, পাতা পোড়া, অনেক সময় চিটা হতে পারে সে কারণে কৃষকদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
‘ব্রি-ধান ৮১’ জাতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উপজেলায় এক হেক্টর জমিতে ‘ব্রি-ধান ৮১’ আবাদ হয়েছে। দুইজন কৃষক ধানের শীষ নিয়ে অফিসে এসেছিল। পরে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে পরিদর্শনে পাঠানো হয়েছিল। তাদের ক্ষেতে দেখা গেছে সবগুলো ধানে চিটা হয়েছে। তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করবো।’