যশোরের চৌগাছায় মুখিকচুর চাষ দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে। বিগত বছরে কচুর বাজার দর ভাল থাকায় অনেকেই কচু চাষ করে লাভবান হয়েছে। তাই প্রতি বছরই কচুচাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে চলতি মৌসুমে উপজেলাতে সাড়ে ৩শ হেক্টর জমিতে মুখিকচুর চাষ হয়েছে। খরিপ-১ ও রবি এই দুই জাতের কচুর চাষ সব থেকে বেশি হয়েছে। উপজেলা ব্যাপী কম-বেশি কচুর চাষ হলেও নারায়নপুর ও স্বরুপদাহ ইউনিয়নে এই চাষ বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
এখানকার চাষিরা কচু চাষ করে অনেকেই এখন স্বাবলম্বী ,তাই মৌসুম এলেই কৃষকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মঙ্গলবার (২০এপ্রিল) উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের হাজরাখানা, বড়খানপুর, পেটভরা,স্বরুপদাহ ইউনিয়নের খড়িঞ্চা,আন্দারকোটা ও টেংগুরপুর গ্রামের মাঠে যেয়ে দেখা যায়, কৃষকরা কচু ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত। মাহে রমজানের দিনেও আর কাঠফাটা এই রোদে পুরে তারা যে যার জমিতে বিরামহীন ভাবে কাজ করে চলেছেন। এ সময় কথা হয় হাজরাখানা গ্রামের কৃষক মোস্তাকের সাথে।
তিনি বলেন, মুখিকচু আমরা স্থানীয় ভাবে সারোকচু হিসেবে চিনি। বলাযায় দশ বছর আগেও এ অঞ্চলের কৃষক কচুচাষ কি তা ভাল ভাবে বুঝতো না। কিন্তু বর্তমানে বানিজ্যিক ভাবে কচু চাষ হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে কচু চাষ করে অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। কৃষক মোস্তাক এ বছর ৫ বিঘা জমিতে মুখিকচুর চাষ করছেন। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আর ফলন ভাল হলে কমপক্ষে ৫শ মন কচু পাবেন বলে তিনি আশা করছেন। আর কম করে হলেও প্রতি মন ১ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলেও জানান মোস্তফা। কৃষক মোস্তফার মত ওই মাঠে সাহেদ আলী ১ বিঘা, বাবু ৫ বিঘা, রহমান ২ বিঘা, রবিউল ২ বিঘা, শাহীন ২ বিঘা, হায়দার আলী ৩ বিঘা জমিতে মুখিকচুর চাষ করেছেন। কৃষকরা জানান ১ বিঘা জমিতে কচুচাষ করতে হলে ৩ থেকে সাড়ে ৪ মন বীজ লাগে। এরপর জমি চাষ থেকে শুরু করে সার কীটনাশকসহ অন্যান্য খরচ দিয়ে মোটামুটি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। ভাল ফলন হলে বিঘা প্রতি ৮০ থেকে ১১০ মন কচু উৎপাদন হয়।
আর সে সময়ে যদি বাজার দর মোটামুটি ভাল থাকে তাহলে কৃষক বিঘা প্রতি ১ লাখ টাকার কচু বিক্রি করতে পারে। বাজারে দিনদিন মুখিকচুর কদর বেড়ে যাওয়ায় দামও ভাল থাকে।তাই কচুচাষ করে এই অঞ্চলের চাষিরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। টেংগুর হাট গ্রামের কচু চাষি শফিকুল ইসলাম, আশরাফুল ও আলীমুজ্জামান বলেন তাদের মাঠে বেশ কয়েক বছর ধরেই কচুর চাষ হচ্ছে। প্রতি বছর কৃষক কচুর চাষ করে বেশ সাফল্য পেয়েছেন, তাই দিন দিন এই মাঠে কচু চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রইচউদ্দিন জানান, মুখিকচুর চাষ ইতোমধ্যে কৃষকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতি বছরই কচুচাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস এ জনপদের চাষিদের নতুন নতুন ফসল উৎপাদনে সার্বিক সহযোগীতা অব্যহত রেখেছেন।