গমের পরিবর্তে কৃষকদের আগ্রহ এখন ভুট্টা চাষে

জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২১-০৪-২৪ ১২:৪৮:৩৭


রাজবাড়ীতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিতে গমের চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কৃষকরা। গ্রামের পর গ্রাম খুঁজেও এখন আগের মতো গম চাষ চোখে পড়ে না।

ধানের চাষ হ্রাস পাওয়ার পর পেঁয়াজ ও ডাল জাতীয় ফসল চাষের দিকে ঝূঁকলেও আবহাওয়া ও দাম না পাওয়ায় এক সময়ের জনপ্রিয় ফসল গম চাষেও আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক। কয়েক বছর আগেও সর্বত্রই গম চাষ করা হতো। কিন্তু উৎপাদন খরচ না ওঠায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তারা। এখন গম চাষের পরিবর্তে বিকল্প ফসল হিসেবে ভূট্টা চাষের দিকে কিছুটা ঝুঁকে পড়েছে এই জেলার অধিকাংশ কৃষক।

সরেজমিনে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার ২, ৪ ও ৯নং ইউনিয়নে যেয়ে জানা যায়, ১০ বছর আগেও পাংশা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অধিকাংশ জমিতে গম চাষ হতো। পরবর্তীতে ভালো বীজ সঙ্কট, বৈরী আবহাওয়া ও খরচ বেশি হওয়ায় কৃষকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

গমের জমিতে এখন চাষ হচ্ছে ভুট্টা। ভুট্টা চাষে খরচ কম, লাভও বেশি হয়। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পাংশা উপজেলায় গত ৫ বছরে গম চাষ ব্যাপক হারে হ্রাস পেতে শুরু করেছে। ২০১৫ সালে ৬৬২ হেক্টর, ২০১৬ সালে ৬১০ হেক্টর, ২০১৭ সালে ৪৬৭ হেক্টর, ২০১৮ সালে ৪১৮ হেক্টর, ২০১৯ সালে ৩৪২ হেক্টর জমিতে গম চাষ করা হয়। চলতি বছরে গম চাষ করা হয়েছে ৩২০ হেক্টর।

উপজেলার কলিমহর ইউনিয়নের কৃষক আশিক বলেন, গম চাষে লোকসানে পড়তে হয়। তাই গত ২ বছর ভুট্টা চাষ করছি। ভুট্টায় লাভ বেশি। বাবুপাড়া ইউনিয়নের কৃষক হানিফ বলেন, বাজারে গমের ভালো বীজ পাওয়া যায় না। বৈরী আবহাওয়ায় ফলন ভালো হয় না। তাই গম চাষে আগ্রহ নেই। তাছাড়া ভুট্টা চাষে তেমন শ্রমিকও লাগে না। অন্যান্য খরচও কম।

পাংশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, গম ও ভুট্টা চাষে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। গম ও ভুট্টা চাষে কৃষকদের নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। জনসচেতনতা তৈরি করছি। হাতে – কলমে, মাঠে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও সরকারি প্রণোদনা, বীজ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। অন্যদিকে গম চাষের তুলনায় ভুট্টা চাষে খরচ কম বলে অধিকাংশ কৃষক জানান, তাদের দাবী ভুট্টার ফলন ভালো হয়। উৎপাদন খরচও কম। কৃষকদের চাহিদার ভিত্তিতে গমের চেয়ে ভুট্টার চাষ বৃদ্ধির জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগ কৃষকদের উৎসাহও দিচ্ছে।

তিনি আরও জানান, নতুন নতুন এলাকা ও কৃষকদের মাঝে তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। ফলে প্রতি বছরই গম ও ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা কমে আসছে। গম শীতকালীন একটি অন্যতম ফসল। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জমিতে বীজ বপন করতে হবে। এর জন্য আগাম স্বল্প মেয়াদী আমন চাষাবাদ করতে হবে।

নতুন উদ্ভাবিত জাত যেমনঃ বারি গম-২৮, ২৯, ৩০, ৩১ এবং ৩৩ ইত্যাদি চাষাবাদের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পরামর্শ দিয়ে থাকে। ধানের চেয়ে গমের আবাদ বাড়ানো বেশি প্রয়োজন কারন গমের পুষ্টিমান বেশী। পাংশা এলাকায় বর্ষার সময় থেকে জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিন থাকার কারনে গম আবাদের সুযোগ কম। এই উপজেলার এলাকা গুলোতে জলাবদ্ধতা নিরসন করা গেলে গম ও ভুট্টার আবাদ আরও বাড়ানো সম্ভব।