নারায়ণগঞ্জের আলোচিত কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ের জন্য তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। এমনকি তার স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকিও দিয়েছেন সাইদা শিউলী নামের এক নারী।
শনিবার রাতে ফেসবুকে লাইভে এসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এমন দাবি করেছেন কাউন্সিলর খোরশেদ। এ সময় পাশেই ছিলেন তার স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনা। লাইভের শেষের দিকে তিনিও কথা বলেন এবং তার স্বামী ও পরিবারের নিরাপত্তা দাবি করেন রাষ্ট্রের কাছে।
কাউন্সিলর খোরশেদ জানান, সাইদা শিউলি নামের ওই নারী এক ভয়ঙ্কর চরিত্রের অধিকারী। তার সাথে প্রশাসন ও উচ্চ মহলের বিভিন্ন দফতরের ব্যক্তিদের চলাফেরা। তিনি একজন ব্যবসায়ী এবং তিনবার বিয়ে করেছেন। এই নারীর দুই সন্তান রয়েছে যারা ভার্সিটিতে পড়ে এবং এক মেয়ে দশম শ্রেণীতে পড়ে।
ঘটনার বিস্তারিত জানাতে গিয়ে খোরশেদ কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি করোনার শুরু থেকেই করোনায় আক্রান্তদের সেবা প্রদান করি ও সম্মুখে থেকে লড়াই করি, দাফন সৎকার করি। একপর্যায়ে গত মে মাসে আমি ও আমার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হই। এ সময় অক্সিজেনের অভাবে আমার স্ত্রীকে আইসিইউতে ভর্তি করতে হয়। তখনই মনে হয় অক্সিজেনের জন্য করোনায় আক্রান্ত যারা সমস্যায় পড়বেন তাদের অক্সিজেন সাপোর্ট দেব বিনামূল্যে। এ সময় গণমাধ্যমের একটি নিউজের নিচে এ নারী কমেন্ট করেন তিনি অক্সিজেন দিতে চান এবং আমার সাথে ফেসবুকে যোগাযোগ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার দেন। তখন থেকেই তিনি আমার সাথে ফেসবুকে অ্যাড হন এবং কথা বলা শুরু করেন।
একপর্যায়ে আমি বুঝতে পারি তার মতলব ভিন্ন এবং আমি তাকে তখন দূরে সরাতে চেষ্টা করি এবং তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি। তার ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেকেও আমি ঘটনা জানাই, তখন সে আমাকে বলে তার মা হয়তো দুষ্টুমি করছে এরকম কিছু সম্ভব নয়। তাতেও কাজ হবে না বুঝে আমি নভেম্বর-ডিসেম্বরে তার ভগ্নিপতিকে জানাই। এতে তিনি আরো ক্ষুব্ধ হন এবং আমার পেছনে উঠেপড়ে লাগেন।
খোরশেদ আরো বলেন, তারপর আমার স্ত্রীকেও বুঝিয়ে বলি, আমার স্ত্রীও বলে তিনি আমার সাথে দুষ্টুমি করছে হয়তো। এরপর একবার তিনি আমাকে বিয়ে করবে ঠিক বলে গাড়িতে করে কাজী নিয়ে আমার বাড়িতে আসেন আমাকে উঠিয়ে নেয়ার জন্য। পরে আমার স্ত্রী ও লোকজন তাকে আটকায়। তিনি আমাদের জীবন বিষিয়ে তুলেছেন। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষসহ সবার কাছে গেছে। তবে আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ যে সবাই তার কুটকৌশল বুঝতে পেরে তাকে অবজ্ঞা করেছেন।
তিনি বলেন, সম্মানকে ভয় পাই বলেই এত দিন মুখ খুলিনি। আমি ধৈর্য ধরেছি, কারণ আল্লাহ হয়তো একটি ফয়সালা করবেন। তবে দু’দিন আগে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় দুটি পত্রিকায় আমাকে জড়িয়ে এ সংক্রান্ত নিউজ হওয়ায় আমি নিজেই বিষয়টি সবার কাছে বলতে এসেছি।
আমার পাশে থাকার জন্য আমি সাংবাদিক, আমার রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ও প্রতিপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ।
তিনি আরো বলেন, ২১ জানুয়ারির পর থেকে হোয়াটস অ্যাপে, ম্যাসেঞ্জারে, টেলিফোনে আমাদের হুমকি দিচ্ছেন এবং হত্যার হুমকি জানাচ্ছেন ওই নারী। আমার পরিবারের সবাইকে মারাত্মক মানসিক অত্যাচার করছেন। সর্বশেষ আমার স্ত্রী-সন্তানকে তুলে নিয়ে হত্যা করবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন। আমি এসব ঘটনায় শুরু থেকেই সরকারি সংশ্লিষ্ট সকল দফতর ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি। বিভিন্ন ঘটনা ঘটার পর পরই তাদের অবহিত করা হয়।
খোরশেদ বলেন, একপর্যায়ে তিনি ছড়িয়ে দেন, ধানমন্ডির এক বুটিক ব্যবসায়ী নারীকে আমি বিয়ে করেছি এবং দুই বউ নিয়ে গ্যারাকলে আছি। এ ধরনের কোনো ঘটনা সত্য নয় এবং স্থানীয় দুটি পত্রিকায় এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়, যা দুঃখজনক। তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন থেকে ডন চেম্বারের সামনে একটি জায়গা বরাদ্দ পেলেও রাজউকের মামলার কারণে তার জায়গা হাতছাড়া হয়। পরে তিনি বলে আমার কারণে নাকি হাতছাড়া হয়েছে। যার সাথে আমি থাকিনি, কিছুই করিনি তাকে কেন ফেসবুকে কথা বলে বিয়ে করতে হবে?
এ সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে খোরশেদ বলেন, আমার বাড়ি একটি মরা বাড়ি হয়ে গেছে। একে তো লাশ দাফন করি একের পর এক তার ওপর আবার আমার বাচ্চাদের থেকে এসব কারণে লুকিয়ে থাকতে হয়। তাদের জীবনের ভয়ে আছি আমি। ছেলে-মেয়ে আমার চিন্তায়, পারিবারিক অশান্তিতে অসুস্থ হয়ে গেছে। এটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। এই ঘটনার কারণ কি? আমি এসব থেকে মুক্তি চাই আল্লাহর সাহায্যের মাধ্যমে।
খোরশেদ বলেন, বিভিন্ন মানুষকে ব্যবহার করে তিনি আমাদের জ্বালাতন করতে। এত দিন কষ্ট সহ্য করেছি, আর পারছি না। অনেকে লজ্জায় আমার কাছে জিজ্ঞাসা করতে পারেন না। শুভাকাঙ্খী হিসেবে আপনাদের কাছে এ ঘটনার বিচার চাই। সাংবাদিক ভাইয়েরা লেখনি ও প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে আমাকে এ অবস্থা থেকে বাঁচান। আমি এ নির্যাতন থেকে উদ্ধার হতে মুক্তি চাই। আমি আমার পরিবারের কাছেও ক্ষমা চাই এসব ঘটনায়।
তিনি বলেন, কারো ইজ্জত তৈরি করতে অনেক সময় লাগে, আমিও অনেক সময় নিয়ে ইজ্জত অর্জন করেছি। এখন তিনি সব নষ্ট করে দিচ্ছেন পরিকল্পনা করে। আমার জামা-কাপড় দেখলে বুঝবেন আপনারা আমি কখনো বিলাসিতা করিনি। আমি বাসা-বাড়িতে সময় না দিয়ে আপনাদের সেবায় দিনরাত পার করছি এবং নিজের একটি অবস্থান করছি। কেন আমার সুনাম নষ্ট করে আমার ক্ষতি করতে চাইছে এর কারণ কি উদঘাটন করে মুক্তি চাই।
এ সময় লাইভে খোরশেদের স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনা বলেন, হঠাৎ এক দিন তিনি বাড়ির নিচে এসে উপস্থিত কাজী নিয়ে। পরে আমরা তাকে ধরি। প্রথম দিন আসার পর আমাকে বলেন আমার বড় ভাই খোরশেদ। দুই ঘণ্টা পর আমাকে বলেন এক দিন পরে আপনাকে বলবো সব। পরের দিন তিনি আমাকে বলেন, আমি খোরশেদকে ভালোবাসি আমি তাকে চাই। আপনি অনুমতি দেন। আমি সংসার বুঝি না, সংসার আপনার সাথে করবে আর আমার সাথে শুধু ফোনে কথা বলবে আর আমাকে সময় দেবে। তার এ ধরনের কথায় আমার মনে হয় তিনি সুস্থ নয়।