প্রথমবারের মতো বাজেটের আকারকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বড় করার চেষ্টা থেকে সরে আসছে সরকার। বরং আগামী বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে করোনা মহামারিকে। বাস্তবতা মাথায় রেখে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেটের আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ছয় লাখ এক হাজার ৫১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঘাটতিই ধরা হয়েছে দুই লাখ ১২ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। জিডিপি অংশ হিসেবে ঘাটতি ৬ দশমিক ১ শতাংশ, যা একটি রেকর্ড। আগামী অর্থবছরে জিডিপি’র আকার ধরা হয়েছে ৩৪ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
বাজেটে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল থাকছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আকারও বাড়ছে। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি বাজেটের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। আর বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বৈঠকে। এজন্য এসএমই খাতে আরও অর্থায়ন করা হবে।
অন্য দিকে করোনার কারণে চলতি বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি শেষ পর্যন্ত দুই শতাংশেরও বেশি কমিয়ে দেয়া হয়েছে। গত বছরের জুন মাসে যখন চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হয় তখন জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়া এবং দেশব্যাপী ‘কঠোর লকডাউন’-এর কারণে এখন মনে হচ্ছে এই প্রবৃদ্ধি কোনোভাবে অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই গতকাল এই প্রবৃদ্ধির হার কাটছাঁট করে ৬ দশমিক ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা কিনা বাজেটে প্রক্ষেপিত জিডিপি প্রবৃদ্ধির চেয়ে ২ দশমিক ১ শতাংশ কম।
তবে আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির আবারো একটি উচ্চাভিলাষী প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
রোববার (২৫ এপ্রিল) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এ সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হয়েছে। বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার অর্থনীতির সার্বিক অবস্থাসহ চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন ও আগামী অর্থবছরের বাজেটের খুঁটিনাটি তুলে ধরেন। এই বৈঠকে আগামী অর্থবছরের বাজেটের একটি আকারও প্রাক্কলন করা হয়েছে।
এতে সিনিয়র সচিব বলেন, আগামী অর্থবছরে বাজেটের আকার ছয় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এই বাজেটের মধ্যে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হয়েছে তিন লাখ ৮৯ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। যা জিডিপি’র ১১ দশমিক ২ শতাংশ। মোট রাজস্বের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকেই আয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার ৭৮ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ৯ দশমিক ৫ শতাংশ।
আগামী অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ধরা হয়েছে দুই লাখ ২৫ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
গতকালের বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত খাদ্য বাজেট ও নেট লেন্ডিং বিষয়টি চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। এটি চূড়ান্ত করা সম্ভব হলে আগামী অর্থবছরে বাজেটের আকার ছয় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে, যা কিনা ছয় লাখ এক হাজার ৫১১ কোটি টাকার মতো হতে পারে। এই বাজেটের দুই লাখ কোটি টাকার বেশি যে ঘাটতি ধরা হয়েছে তার বেশির ভাগ অর্থই নেয়া হবে ব্যাংকিং খাত থেকে। এ খাত থেকে প্রায় লাখ কোটি টাকার ঋণের টার্গেট নেয়া হয়েছে। কারণ এখন ব্যাংকিং খাতে তারল্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। আর ব্যাংকের ঋণের সুদও কম। এর পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়া হবে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। বাকি অর্থ বিদেশী ঋণ ও অনুদান হিসেবে পাওয়া যাবে।
বৈঠকে রাজস্ব আয়ের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এ সময় এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনার কারণে দেশে ব্যবসাবাণিজ্য গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যাহত হচ্ছে। তাই রাজস্ব আদায়ও হচ্ছে না কাঙ্খিত হারে। এ বছরও আদায় ঘাটতি এক লাখ কোটি টাকা ছুঁয়ে যেতে পারে। এ পরিস্থিতিতে বৈঠকে চলতি বছরে রাজস্ব আদায়ে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল আগামী অর্থবছরের জন্যও একই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়।
দেশের অর্থনীতির সার্বিক সূচকের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে প্রতি ৩ মাস অন্তর অর্থনৈতিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের অগ্রগতি নিয়ে রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ে জুমে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ওই বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান, অর্থ সচিব, পরিকল্পনা সচিবসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সানবিডি/এএ