মাগুরা জেলার ৪ উপজেলায় চলতি মৌশুমে শসার উৎপাদন ও ফলন ভালো হয়েছে। রমজান মাস হওয়ায় বাজারে শসার দামও ভালো। ন্যায্য দাম পেয়ে খুশি চাষিরা। কৃষকদের প্রয়োজনে কৃষি বিভাগ সবসময় সহযোগিতা করেছে। কীটনাশকের খরচও কমাতে ব্যবহার করা হয়েছে জৈব প্রযুক্তি সার। ভবিৎষতে আরও বেশি জমি নিয়ে শসার আবাদ করবেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার প্রামানিক বলেন, চলতি বছরে মাগুরা জেলায় ২২০ হেক্টর জমিতে শসা চাষ হয়েছে। জেলার পলিমাটি এলাকা হিসেবে পরিচিত বাশকোটা, আঠারোখাদা, শ্রীকোল, শালিখা, রামনগর ও কছুন্দি ইউনিয়নে অধিকাংশ জমিতে শসার আবাদ হয়েছে। বীজ বপন থেকে মাত্র দুই মাসের মধ্যে শসা পাওয়া যায়। শসা চাষ করতে খরচ হয় কম। পোকা মাকড়ের আক্রমণ থাকলেও সঠিক সময়ে ওষুধ প্রয়োগ করতে পারলে ফসলের তেমন ক্ষতি হয় না।
কিছুদিন আগে বাজারে শসা ১৫-২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু রমজানের শুরু থেকে সেটি এখন ৪০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। রমজানে বাজারে শসা দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলার কছুন্দি ইউনিয়নের পূর্ব বেলনগর গ্রামের রতন কুমার বলেন, ‘আমি ৪০ শতাংশ জমিতে এবার লালতীর বারমাসি জাতের শসা রোপণ করেছি। যেখানে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো। বীজ বপনের দুই মাসের মধ্যে এখন জমি থেকে প্রতিদিন ৭-৮ মণ শসা তোলা হচ্ছে। রমজান হওয়ায় শসা প্রতি মণ দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাইকাররা ক্ষেত থেকে শসা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার টাকার শসা বিক্রি করেছি। আশা করছি আরও ৫০-৬০ হাজার টাকা শসা বিক্রি করতে পারব।
রামনগর গ্রামের কৃষক আবু হাসান বলেন, ‘আমি ২০ শতাংশ জমিতে শসা চাষ করেছি। আমার মোট খরচ হয়েছে ১৩ হাজার টাকা। এরইমধ্যে প্রায় ৪০ হাজার টাকার শসা বিক্রি করেছি। বর্তমান বাজার মূল্য ভালো। এ অবস্থা থাকলে আরও ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার শসা বিক্রি হতে পারে।’
এলাকার কৃষকরা জানান, কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনা দেয়ায় তারা শসা চাষে আগ্রহ দেখিয়েছেন। এছাড়া সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। রোগ বালাইয়ের পরিমাণ কম হওয়ায় ফলনও ভালো হয়েছে। পোকা দমনের জন্য ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করায় কীটনাশকের প্রয়োজন হয়নি। ফলন বেশি ও বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় খুশি তারা। আগামী আরও বেশি পরিমাণ জমিতে শসা আবাদ করবেন বলে জানান তারা।
মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু তালহা জানান, ‘কৃষক স্বল্প জমিতে শসা চাষ করে অধিক লাভবান হতে পারবে। নিরাপদ সবজি চাষের জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদেরকে শসা চাষে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
প্রদর্শনীভুক্ত কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে শসার বীজ, জৈব বালাইনাশক, পোকা দমনের জন্য ফেরোমন ফাঁদ ও ভার্মি কম্পোস্ট সার দেয়া হয়েছে। এবার কৃষক দাম বেশি পাওয়ায় আগামীতে এ অঞ্চলে ব্যাপক শসার চাষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।