ভারতে ১০ গুণ দামে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশ: ২০২১-০৪-২৬ ১৩:২০:৩০


ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে করোনার টেস্ট কিট, ওষুধ, অক্সিজেনসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামের। রোগীর বিপরীতে স্বাস্থ্য খাতে দেখা দিয়েছে ব্যাপক লোকবল সংকট। এ সুযোগে তৎপরতা বাড়িয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ প্রায় সব ধরনের জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম আকাশছোঁয়া দামে তারা বিক্রি করছে কালোবাজারে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাভাবিক সময়ে যে সিলিন্ডার ছয় হাজার রুপিতে মেলে, রোগীর প্রাণ বাঁচাতে সে জায়গায় এখন কমপক্ষে ৫০ হাজার রুপি খরচ করছেন স্বজনরা। নিয়মিত অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহকারীরাও দাম চাইছেন ১০ গুণ বেশি। করোনার সংক্রমণ দ্রুত বাড়ায় দিল্লিতে খালি নেই কোনো আইসিইউ। সচ্ছল পরিবারগুলো নার্স ভাড়া করে বাড়িতে ডেকে নিচ্ছে। চিকিৎসকদের সহযোগিতা নিচ্ছে অনলাইনে।

করোনায় আক্রান্ত স্বজনকে বাড়িতে রেখেই শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা তাদের। বিপরীতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত অনেক মানুষ চিকিৎসা ছাড়াই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে রোববার করোনা শনাক্ত হয়েছে তিন লাখ ৫৪ হাজারের বেশি মানুষের দেহে। একই সময়ে মারা গেছে দুই হাজার ৮০৬ জন। গত এক সপ্তাহে ভারতে করোনা শনাক্ত হয়েছে সাড়ে ২২ লাখ মানুষের দেহে।

মৃত্যুহার বেড়েছে ৮৯ শতাংশ। করোনায় সংক্রমণের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ ভারত। দেশটিতে এ নিয়ে ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ১ কোটি ৫৯ লাখ ৩১ হাজারের বেশি মানুষের দেহে। প্রাণহানিতেও যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও মেক্সিকোর পরের অবস্থান ভারতের। দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৩৩ কোটি মানুষের দেশ ভারতে ছোঁয়াচে করোনার ভয়াবহ বিস্তারে হুমকিতে রয়েছে বহির্বিশ্বও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুততম সময়ে জরুরি পণ্য পাঠানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি। শুরু থেকেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে আসছেন যে, সব পক্ষের সহযোগিতা ও বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া মহামারি আরও দীর্ঘায়িত হবে।

বিশেষ করে অল্প সময়ে দ্রুত রূপ পরিবর্তনের মাধ্যমে ভাইরাসের একের পর এক নতুন ও অধিক বিপজ্জনক ধরন শনাক্ত হচ্ছে বলে পরিস্থিতি এর চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে বলে শঙ্কা তাদের। উদাহরণ হিসেবে রয়েছে আফ্রিকা মহাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের এইডসবিরোধী লড়াই। সে সময় অঞ্চলটিতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাঠাতে জরুরি পরিকল্পনা নিয়েছিল তার সরকার। ২০১৪ সালে আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চলে ছোঁয়াচে ইবোলা নিয়ন্ত্রণও আন্তর্জাতিকভাবে অগ্রাধিকার পেয়েছিল।

প্রাণঘাতী রোগটি ঠেকাতে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নিয়েছিল ধনী দেশগুলো। বলা হচ্ছে, করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারি শুরুর সময়ে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনসহ অনেক রাষ্ট্রনেতাই। একই ভুল করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। গত মাসেই মহামারির বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণার মাধ্যমে দেশটিতে দ্বিতীয় ধাক্কাকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছিল তার সরকার।

ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে স্থানীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে মহামারি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্যবিদরা। বিশ্বে টিকা উৎপাদনকারী সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট এখন অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে। বিশ্বের দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে টিকা সুষম বণ্টনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মসূচি কোভ্যাক্সের আওতায় মার্চ-এপ্রিল মাসে বড় চালান রপ্তানির কথা ছিল ভারতের।

কিন্তু নিজ দেশেই মহামারি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাওয়া ভারত সরকার চলতি মাসে বিভিন্ন দেশের কাছে বিক্রি করেছে মাত্র ১২ লাখ ডোজ টিকা। তিন মাস আগেও মাসিক এ সংখ্যা ছিল সাড়ে ছয় কোটি। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে করোনা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় টিকা তৈরির কাঁচামাল বিক্রিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল দেশটির সরকার। রোববার সে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও এখন পর্যন্ত টিকা উৎপাদন থমকে আছে ভারতে।

ভারতের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সংকট কমাতে বাতাস থেকে অক্সিজেন টেনে নেয়ার জন্য ৪৯৫টি কনসেনট্রেটরসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে যুক্তরাজ্য। সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে জার্মানি, চীনও। ভারতীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের সহযোগিতার লক্ষ্যে নয়াদিল্লির সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটনও। কিন্তু এই মুহূর্তে রোগ প্রতিরোধে টিকা উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে কাঁচামাল রপ্তানি অব্যাহত রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া ভাইরাসের নতুন ধরনগুলো দ্রুততম সময়ে শনাক্ত করে সেগুলোর বিস্তার ও রূপ পরিবর্তন ঠেকাতে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে সহযোগিতাও দরকার।