অাজকাল সারা বছরই কিস্তিতে অনেক পণ্য কেনা যায়। তাহলে বাণিজ্য মেলার সময়ে বাদ থাকবে কেন? এখানে কিস্তিতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আসবাব বিক্রি শুরু হয়েছে। তারা বিনা সুদে ৩ থেকে ১৮ মাসের কিস্তিতে বিভিন্ন ধরনের আসবাব পণ্য কেনার সুযোগ দিচ্ছে। তবে সুযোগটি নিতে হলে আপনার কাছে নির্দিষ্ট ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড থাকলেই চলবে।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় (ডিআইটিএফ) গতকাল রোববার প্রথমেই পারটেক্স ফার্নিচারের প্যাভিলিয়নে ঢুকেই কিস্তিতে আসবাব বিক্রির বিষয়টি জানা গেল। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বললেন, ক্রেতাদের সুবিধার জন্য বেশ কিছুদিন আগেই এটি চালু করেছেন তাঁরা। একই ব্যবস্থায় আসবাব কেনার সুযোগ দিচ্ছে আকতার, হাতিল, ব্রাদার্স ও নাদিয়া ফার্নিচার। এ ছাড়া মেলা উপলক্ষে সব প্রতিষ্ঠানের বিশেষ মূল্যছাড় তো আছেই।
ছুটির দিন না হলেও গতকাল সকাল থেকেই মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভালো উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। পাঁচটি আসবাব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানালেন, মেলায় অংশ নেওয়ার বড় উদ্দেশ্য পণ্য ও ব্র্যান্ডের প্রচার। সেটি ভালো হচ্ছে। বিক্রি-বাট্টাও মন্দ না। তাঁদের আশা, শেষ দুই সপ্তাহে মেলা আরও জমজমাট হয়ে উঠবে।
দেশের আসবাব খাতের পরিচিত ব্র্যান্ড পারটেক্স ফার্নিচার। মেলা উপলক্ষে কাঠ ও মেলামিন বোর্ডের তৈরি নতুন নকশার সাতটি বেডরুম, ১০টি সোফা ও ১০টি খাবার টেবিলের সেট এনেছে তারা। আছে কিচেন কেবিনেট, রকিং চেয়ার, ডিভান, শোকেস, ডিনার ওয়াগন, আলমারি, ড্রেসিং টেবিল ইত্যাদি।
মেলায় কাঠের আসবাবে ১৮ শতাংশ ও বোর্ডের আসবাবে ২০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দিচ্ছে পারটেক্স। এই সুবিধাটি সারা দেশে প্রতিষ্ঠানটির ১৭০টি বিক্রয়কেন্দ্র ও ডিলার শপেও পাওয়া যাবে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে শূন্য সুদে ৩-১৮ মাসের কিস্তিতে যে কেউ পারটেক্সের আসবাব কিনতে পারবেন।
প্যাভিলিয়নে আসা ক্রেতাদের জন্য কুপনের ব্যবস্থা রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতি সপ্তাহে ড্র হয়। পুরস্কার হিসেবে আছে আসবাব। এসব তথ্য দিয়ে পারটেক্সের উপব্যবস্থাপক অশোক কুমার বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন মূল্যের আসবাব এনেছি। ফলে সব ধরনের ক্রেতার চাহিদা মেটাতে পারছি।’
ব্রাদার্স ফার্নিচার নতুন নকশার ১১টি বেডরুম, ১৫টি সোফা ও ৩, ৪, ৬ ও ৮ আসনের ১৫টি খাবার টেবিলের সেট এনেছে। তাদের খাট ২৯-৫২ হাজার, খাবার টেবিল ৪৫-৮৫ হাজার, সোফা ৬৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির নতুন পণ্যের তালিকায় আছে আলমারি, ড্রেসিং টেবিল, রকিং চেয়ার, সেন্টার টেবিল, টিভি, টেলিফোনের ট্রলি, জুতার সেলফ ও গৃহসজ্জার নানা সামগ্রী।
১৯৮৩ সালে যাত্রা শুরু করা ব্রাদার্স ফার্নিচার মেলা উপলক্ষে ৫-১৫ শতাংশ মূল্যছাড় দিচ্ছে। মেলার বাইরে তাদের ৩৩টি বিক্রয়কেন্দ্র থেকেও সুবিধাটি পাওয়া যাবে। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো ক্রেতাদের জন্য বিনা মূল্যে বিক্রয়োত্তর সেবাও নিয়ে এসেছে তারা। ক্রেতাদের বাসায় গিয়ে আসবাব সংস্কার করে দেবেন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। এমনটাই জানালেন ব্রাদার্সের কর্মকর্তা এ বি এম সাজ্জাদ হোসেন।
মেলার মূল ফটক দিয়ে ঢুকলেই নাদিয়া ফার্নিচার দৃষ্টি কাড়ছে সবার। ভেতরেও আছে চমক। প্রায় ৪০টি নতুন নকশার পণ্য নিয়ে এসেছে তারা। এর মধ্যে ৭টি বেডরুম, ১২টি সোফা, ৩টি খাবার টেবিল, ৩টি শোকেস ও ৬টি সেন্টার টেবিল সেট আছে। নাদিয়ার খাট ২১ হাজার ৩৭৫ টাকা থেকে ৪৫ হাজার, খাবার টেবিল ৫৪ হাজার থেকে ১ লাখ ১৮ হাজার, সোফা ৬০ হাজার ৩০০ থেকে ৯৬ হাজার টাকায় মিলবে। এ ছাড়া কিচেন কেবিনেট ও অফিস ফার্নিচারও আছে। সব ধরনের পণ্যে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ মূল্যছাড় দিচ্ছে তারা। মেলাসহ ১৫টি নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র থেকে মিলবে এই মূল্যছাড়।
জানতে চাইলে নাদিয়ার বিক্রয় উপব্যবস্থাপক হেদায়েত উল্লাহ বলেন, গত শুক্র ও শনিবার মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল অনেক। সব মিলিয়ে ভালোই হচ্ছে। তবে আক্ষেপের কথাও বললেন এভাবে, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার একটি বড় উদ্দেশ্য বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা। সেই কাজটি একদমই হচ্ছে না। এতে করে পণ্যের গুণমান ভালো হওয়া সত্ত্বেও রপ্তানির সুযোগ পাচ্ছি না আমরা।’ এ জন্য ইপিবি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক প্রচারণা চালানো উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রথমবারের মতো বাণিজ্য মেলায় অংশ নেওয়া লিগেসি ফার্নিচার নতুন নকশায় তৈরি ৭৮ হাজার থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা মূল্যের ১০টি খাট, ৭৮ হাজার থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা দামের ৭টি খাবার টেবিল ও ৮৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা মূল্যের কয়েকটি সোফা সেট নিয়ে এসেছে। আছে আলমারি, ডিভান, কর্নার শোকেসসহ অনেক পণ্য। ১০-২৫ শতাংশ মূল্যছাড় দিচ্ছে লিগেসি। মেলা চলাকালে প্রতিষ্ঠানটির ঢাকার মিরপুর, গুলশান, চট্টগ্রাম ও খুলনার বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতেও এই মূল্যছাড় মিলবে।
আমদানি ও দেশে উৎপাদিত আসবাব পণ্য নিয়ে মেলায় এসেছে হাই-টেক ফার্নিচার। প্রতিষ্ঠানটির নতুন নকশার ৩টি বেডরুম, ৭টি সোফা ও ১৫টি খাবার টেবিলের সেট আছে। দাম ৪৫ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা। মেলায় ৫-১৫ শতাংশ মূল্যছাড় দিচ্ছে হাই-টেক।
এদিকে বিভিন্ন প্যাভিলিয়নে আসবাবের খোঁজ নেওয়ার সময় কয়েকজন ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, আসবাবের দাম বেশি।
এ বিষয়ে নাদিয়ার কর্মকর্তা হেদায়েত উল্লাহ বলেন, সরকার যদি কাঠ ও মেলামিন বোর্ড আমদানিতে শুল্ক তুলে দেয়, তবে আসবাবের মূল্য অন্তত ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব।
সানবিডি/ঢাকা/আহো