দক্ষিণ-পূর্ব-এশিয়ার আঞ্চলিক জোট আসিয়ান। এ জোটভুক্ত দেশগুলোর নেতারা মিয়ানমারে সংকট অবসানের আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে তাদের সম্মেলন শেষ করেছেন। ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় গত শনিবার আসিয়ানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের ফলে সৃষ্ট সংকট অবসানের জন্য পাঁচটি সমঝোতা হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, জাকার্তায় আসিয়ানের শীর্ষ সম্মেলন কয়েকটি দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমত, মিয়ানমারে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার উদ্যোগে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বলা যায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দরিদ্র এ দেশটির রাজনৈতিক সংকট ও চলমান সহিংসতা কমিয়ে আনার জন্য এটাই প্রথম আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা।
দ্বিতীয়ত, জাকার্তা সম্মেলনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধানও উপস্থিত ছিলেন। মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর জেনারেল মিন অং হ্লাইং এর এটাই প্রথম বিদেশ সফর যিনি ছিলেন সামরিক অভ্যুত্থানের মূল নায়ক।
তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে, আসিয়ানের নেতারা মিয়ানমারের সেনা প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে সে দেশে সংকট অবসানের বিষয়ে পাঁচটি সমঝোতা পৌঁছেছেন। সামরিক সরকারের সঙ্গে বিরোধীদের সংলাপ শুরু, সহিংসতার অবসান, বাইরের ত্রাণ সরবরাহে সহযোগিতা করা, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি এবং আসিয়ানে মিয়ানমার সংকট বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি নির্ধারণ করার বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে।
চতুর্থ বিষয়টি হচ্ছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে গত ফেব্রুয়ারিতে অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি বা এনএলডিকে ক্ষমতাচ্যুত করে। অভ্যুত্থানের পরপরই সেনাবাহিনী দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে এবং এনএলডির বহু নেতা ও তাদের সমর্থক সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে। স্বাভাবিকভাবেই দেশব্যাপী সরকার বিরোধী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। দেশটির গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর হামলায় এ পর্যন্ত ৭০০ এর বেশি প্রতিবাদকারী নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন অভ্যুত্থানের পর সহিংসতায় এ পর্যন্ত আড়াই লাখ মানুষ শরণার্থীতে পরিণত হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ জেলখানায় আটক রয়েছে।
আসিয়ান সম্মেলনে এমন সময় মিয়ানমারের বিষয়ে পাঁচটি সমঝোতা হয়েছে যখন সামরিক অভ্যুত্থানের পর ওই দেশটিতে ব্যাপকভাবে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার এবং রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ অবস্থায় জাকার্তা সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উপায়ে মিয়ানমার সংকটের অবসান ঘটাতে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্র: রয়টার্স।