আগামী (২০২১-২২) অর্থবছরের বাজেটে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার জন্য কোনো থোক বরাদ্দ থাকবে না। এজন্য এ বছর প্রস্তাবিত বাজেটে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা থেকে থোক বরাদ্দের প্রস্তাব না-দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত ব্যয়সীমার মধ্যেই সব ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো অর্থ দেওয়া হবে না। এ ছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) নির্ধারিত ব্যয়সীমা অতিক্রম করার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
সম্প্রতি এসব নির্দেশ দিয়ে অর্থ বিভাগ পরিপত্র জারি করেছে। তা অনুসরণ করে আগামী ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সম্ভাব্য রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ও ব্যয়ের আকার নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অর্থ বিভাগে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, গত বাজেটে চারটি মূলনীতির মধ্যে একটি ছিল সরকারি ব্যয় বাড়ানো। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় পরিহার করতে বলা হতে পারে। তবে সার্বিক ব্যয় কমানোর কোনো সুযোগ নেই। এটি করা ঠিকও হবে না। এখন অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে হলে ব্যয় আরও বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যখাতে, সামাজিক নিরাপত্তা ও কৃষিখাতে আরও ব্যয় বাড়াতে হবে।
সূত্রমতে, করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সার্বিক ব্যয় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফলে চলতি বাজেটের তুলনায় প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা বেশি ব্যয় ধরে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই হিসাবে আগামী বাজেটের সম্ভাব্য আকার হচ্ছে ছয় লাখ দুই হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। আর চলতি সংশোধিত বাজেটের আকার হচ্ছে পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। তবে সার্বিক ব্যয় বাড়ানোর পথে হাঁটলেও নতুন বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে অযৌক্তিক ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
অর্থ বিভাগের পরিপত্রে বলা হয়, অননুমোদিত স্কিমের জন্য কোনো বরাদ্দের প্রস্তাব দাখিল করতে পারবে না মন্ত্রণালয়গুলো। তবে আগামী ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন স্কিমের বিপরীতে বরাদ্দ প্রদর্শন করা যাবে। এ ছাড়া আগামী তিন বছরের বৈদেশিক সহায়তা পাওয়ার পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রকল্প সাহায্য (পিএ) এবং পুনর্ভরণযোগ্য প্রকল্প সাহায্য (আরপিএ) প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বলা হয়, নিজস্ব আয়ের পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে ব্যয়সীমা নির্ধারণ করতে হবে। এ ছাড়া সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অধীন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও সংস্থার মোট পরিচালন এবং উন্নয়ন ব্যয় পুনর্নির্ধারিত সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়, মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোয় (২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪) রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে কোনো আইটেমের আদায়ের হার বাড়ানো হলে পুনর্নির্ধারিত হারে সম্ভাব্য অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এটি প্রস্তাবিত প্রাক্কালনে তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের আকার এমনভাবে প্রস্তুত করতে হবে-এটি যেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত ব্যয়সীমার মধ্যে থাকে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলা হয়, এডিপি প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় সভায় নির্ধারিত মানদণ্ডের ভিত্তিতে প্রকল্পওয়ারি বরাদ্দ পর্যালোচনা করতে হবে। প্রদত্ত মোট এডিপির ব্যয়সীমা অতিক্রম করা যাবে না। নতুন বছরে সম্ভাব্য এডিপির প্রাথমিক আকার নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ২৫ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। এটি চলতি এডিপির তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। চলতি বছর এডিপিতে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে দুই লাখ ১৫ হাজার ৪৫ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব ধরনের কর্মকাণ্ডে অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি ব্যয় করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরইমধ্যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট অনেক মন্ত্রণালয় অযৌক্তিক ব্যয়ের প্রস্তাব করে।
এবার যাতে সেটি করতে না-পারে, সেজন্য বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে অর্থ বিভাগের ত্রিপক্ষীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় আলোচনার ভিত্তিতে যে ব্যয়সীমা মন্ত্রণালয়গুলোর জন্য নির্ধারণ করা হয়, সেটিই হবে সর্বোচ্চ বরাদ্দ। এ বরাদ্দ বৃদ্ধির কোনো অবকাশ নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, চলমান কোভিড-১৯ দ্বিতীয় ঢেউ অব্যাহত আছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। ফলে কোনো মন্ত্রণালয়ে টাকা পড়ে থাকা বা অহেতুক ব্যয় থেকে বিরত রাখতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
সানবিডি/এএ