দেশের বাজারে ইলেকট্রিক বাইক বা স্কুটার নিয়ে আসছে দেশের শীর্ষ প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। নতুন ক্যাটাগরির এ বাইকের নাম রাখা হয়েছে তাকিওন। এটি দুটি মডেল বা সংস্করণে বাজারে ছাড়া হবে।
ওয়ালটন জানিয়েছে, নতুন বাইকের দাম হবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। আর এই বাইক হবে পরিবহন খরচ সাশ্রয়ী। প্রতি কিলোমিটার পথ চলতে ব্যয় হবে মাত্র ১০ থেকে ১৫ পয়সা। একবার চার্জে চলবে ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার। এটি ওয়ালটনের লোগো সম্বলিত হলেও তাকিওন নামেই বাজারজাত করা হবে। প্রাথমিকভাবে দুই মডেলের ইলেকট্রিক বাইক বাজারজাত করবে ওয়ালটন। মডেল দুটি হলো- তাকিওন ১.০০ এবং তাকিওন ১.২০।
ইলেকট্রিক বাইকের দাম নির্ধারণ হয়নি এখনও। তবে দেশীয় ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী সাশ্রয়ী মূল্যে ই-বাইক বাজারজাত করা হবে। আর ওয়ালটনের নির্ধারিত সার্ভিস পয়েন্টই দুই বছর পর্যন্ত বিনামূল্যে বিক্রয়োত্তর সেবা পাওয়া যাবে।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম রেজাউল আলম বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ইলেকট্রিক যানের জনপ্রিয়তা এখনও তেমন উচ্চ পর্যায়ে না পৌঁছালেও উন্নত দেশগুলোতে টেসলাসহ অন্যান্য ইলেকট্রিক যানবাহনের জনপ্রিয়তা রয়েছে। আমাদের দেশে অবকাঠামোগত ব্যবস্থাপনা না থাকায় ইলেকট্রিক যানবাহনে কেউ দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার চিন্তা করতে পারেন না। তাকিওনের মাধ্যমে আমরা দেশীয় গ্রাহকদের ইলেকট্রিক যানবাহনে অভ্যস্ত করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন স্থানে দ্রুততম সময়ে ব্যাটারি চার্জের জন্য ফাস্ট চার্জিং স্টেশন স্থাপন করার পরিকল্পনা আছে। আশা করি এর ফলে ই-বাইক ব্যবহার করেও গ্রাহকরা দেশের যেকোনো স্থানে অনায়াসে যাতায়াত করতে পারবেন।
ওয়ালটন সূত্রে জানা যায়, আকর্ষণীয় ডিজাইনের তাকিওন ১.০০ মডেলের ই-বাইকে রয়েছে শক্তিশালী ১ দশমিক ২ কিলোওয়াট হাব মোটর। এতে ব্যবহার করা হয়েছে নতুন প্রযুক্তির গ্রাফিন লেড এসিড ব্যাটারি। একবার ফুল চার্জে এই বাইকটি ৬০-৭০ কিলোমিটার যেতে পারবে। এর গতিবেগ হবে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার।
অপরদিকে তাকিওন ১.২০ মডেলে ব্যবহৃত হয়েছে বিশ্বের শীর্ষ মোটর প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বশ এর মোটর। এর পোর্টেবল লিথিয়াম ব্যাটারির ওজন মাত্র ৯ কেজি। ফলে এটি খুব সহজেই বহনযোগ্য। বাইকটি এক চার্জে ৫০-৬০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারবে। এর গতিবেগ হবে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৫ কিলোমিটার।
তাকিওন ইলেকট্রিক বাইকে থাকবে পোর্টেবল চার্জার। ঘরে ব্যবহৃত ২২০ ভোল্টের বৈদ্যুতিক লাইন থেকেই বাইকে চার্জ দেওয়া যাবে। উভয় মডেলে ব্যবহৃত হয়েছে ডুয়াল হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক, টিউবলেস টায়ার, এলসিডি স্পিডোমিটার ও এলইডি লাইটিং ইত্যাদি।
ওয়ালটনের দাবি তাকিওন ই-বাইক একবার রিচার্জ করে ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার যাতায়াত করা যাবে। বর্তমানে এক লিটার অকটেনের বাজারমূল্য ৮৯ টাকা। যা দিয়ে একটি ১০০ সিসি বাইক সর্বোচ্চ ৫০-৬০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারে। অন্যদিকে তাকিওন ই-বাইকে সমপরিমাণ দূরত্ব অতিক্রম করতে খরচ পড়বে মাত্র ৭-৮ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটারে খরচ হবে মাত্র ১০-১৫ পয়সা। ই-বাইকের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ খরচ দরকার হয় না। এ কারণে এটি একদিকে অত্যন্ত সাশ্রয়ী, অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব।
এ বিষয়ে ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী লিয়াকত আলী আরও বলেন, সবুজ পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে আমরা নানা উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা ল্যাপটপ ও ডেস্কটপে এক্সচেঞ্জ অফার দিয়েছি। এর মাধ্যমে ই-বর্জ্যের ক্ষতিকর প্রভাবের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির কার্যক্রম চালিয়ে আশানুরূপ সাড়া পেয়েছি। এখন আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি পরিবেশের ওপর জ্বালানি তেলের ক্ষতিকর প্রভাবের ব্যাপারেও সচেতনতা বাড়াতে। দেশীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সবুজ পৃথিবী প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে ওয়ালটন যাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
সানবিডি/এএ