রাজবাড়ীতে আখখেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে আখ চাষিরা। এই মৌসুমে অনেক আখ চাষিরাই আগে করতেন আমন চাষ। তাতে খরচ উঠলেও লাভের মুখ দেখছিলেন না। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে আমন ছেড়ে আখ চাষ করছেন অনেকেই। খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মৌসুমে শতক প্রতি ৫০০-৭০০ টাকা লাভ গুনছেন আখ চাষিরা। যা প্রতি বিঘা জমিতে ১৩-১৮ হাজার টাকা।
লাভ ভালো হওয়ায় অনেক চাষি এখন আখ চাষে ঝুঁকছেন। উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের হিসাবে, পুরো উপজেলায় এখন আখচাষি ৪০০ জনের বেশি। পাঁচ বছর আগেও এই সংখ্যা ছিল ১০০ থেকে ১২০ জন।
চাষিরা জানান, উপজেলার হাবাসপুরে প্রতিবছর আমনের চাষ করেন চাষিরা। কয়েক বছর ধরে ধানের দাম না পাওয়ায় তাঁরা বিকল্প ফসল আবাদের চিন্তা করেন। এরই মধ্যে কয়েক মৌসুম থেকে আখের চারা লাগিয়ে চাষ শুরু হয়। চাষের সাফল্য আসায় এখন হাবাসপুর সহ পাংশা উপজেলার মাছপাড়া ইউনিয়নের মেঘনা, হলুদবাড়িয়া, লক্ষ্মণদিয়া সহ অনেক গ্রামে বাড়ছে আখের খেত।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৭৬০ হেক্টর জমিতে আখের চাষ করা হয়েছে। এই হিসাবের বাইরে চাষ হয়েছে আরও ২০ হেক্টর জমিতে। যেখানে গত দুই বছর আগেও ছিল ২৯০-৩০০ হেক্টর আখের খেত। বছর বছর চাষ বাড়ায় কৃষকেরা খুশি।
গতকাল ৩ মে দুপুরে সরেজমিনে হাবাসপুর বিলে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন আখ। কথা হয় হাবাসপুরের চাষি মতিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আশপাশের সব জায়গাতে আখের চাষ হয়েছে। অনেকেই খেত থেকে বিক্রি করছেন। আমিও ১৬ শতকে চাষ করেছি। ফলন ভালো হওয়ায় চড়া দাম পাওয়া যাচ্ছে। আগে পাংশার বেশিরভাগ স্থানেই আখ চাষ হতো কিন্তু ভালো দাম না পাওয়াই এখানে আখ চাষ প্রায় বিলুপ্তির পথে হাঁটছিল। বর্তমানে তা আবার আগের রূপে ফিরতে শুরু করেছে। ’
চাষি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এবার আখের ফলন ভালো হয়েছে। আমি ৮০ শতকে চাষ করেছি। আমনে খরচ হতো ৫০ হাজার, আখেও একই খরচ। ৪০ হাজার টাকার আখ বর্তমানে বিক্রি করেছি, খেতের সব আখ বিক্রি করে আরও অন্তত ৪০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। গত বছরও এ রকম লাভ হয়েছে।’
চাষিরা বলেন, প্রতি কানিতে (৪০ শতক) খরচ গড়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। প্রতি কানিতে আখের সংখ্যা হয় গড়ে এক হাজার। প্রতিটি আখের বর্তমান দাম ৪০ থেকে ৮০ টাকা। চাষিরা পরিপক্ব আখ তুলে খেতের পাশে জড়ো করছেন। ব্যবসায়ীরা খেত থেকেই আকার অনুযায়ী কিনে নিচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন কুমার বলেন, উপজেলায় গত কয়েক বছরে কৃষকেরা আখ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। আখ চাষ ক্রমে বাড়ছে। তিনি বলেন, দক্ষতা, পরিচর্যা, সঠিকভাবে সার ও কীটনাশক প্রয়োগে আখের ফলন ভালো হয়।