কুড়িগ্রামে তিন শিক্ষার্থীর গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজ চাষে সাফল্য

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-০৫-০৮ ২০:২৮:৪২


কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় প্রথমবারের মতো গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছেন কলেজের তিন শিক্ষার্থী। করোনাকালীন অবসরকে কাজে লাগিয়ে উপজেলার তালুক হরিশ্বর গ্রামের এ শিক্ষার্থীরা এখন পর্যন্ত দেড় লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। সামনে আরও এক লাখ টাকার তরমুজ বিক্রির আশা করছেন তারা।

এই তিন শিক্ষার্থী হলেন— তালুক হরিশ্বর গ্রামের তিন বন্ধু মাহবুবুল হোসেন (২০), নুর আলম সরকার (২০) ও মনিরুল ইসলাম (২০)। তারা বিভিন্ন কলেজে পড়াশোনা করছেন।

মাহবুবুল হোসেন জানান, করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বছর খানেক ধরে বাড়িতেই সময় কাটছিল তাদের। তিন বন্ধু মিলে এই অবসর সময়টা কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করেন।

কৃষক পরিবারের সন্তান হওয়ায় কৃষি বিষয়ক কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন তারা। প্রথমে ইউটিউবে গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজ চাষ পদ্ধতি জেনে নেন। তারপর ৪০ শতাংশ জমি লিজ নেন ১০ হাজার টাকায়। চুয়াডাঙ্গা থেকে এ জাতের তরমুজের বীজ সংগ্রহ করে ওই জমিতে প্রায় দেড় হাজার চারা লাগান।

মাহবুব বলেন, ‘জমি লিজ নেওয়াসহ আমাদের খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা।’

নুর আলম সরকার বলেন, ‘আমরা জমি থেকেই গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজ বিক্রি করছি। প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি করছি ১০০ টাকা দরে। এখন পর্যন্ত দেড় লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি হয়েছে। আশা করছি আরও এক লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমবারের মতো এ জাতের তরমুজ চাষ করেছি। তাই ঠিকমতো পরিচর্যা করতে পারিনি। তবে, ফলন আশানুরূপ না হলেও খারাপ হয়নি।’

আগামীতে বড় পরিসরে গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজ চাষ করার আশা প্রকাশ করেন তিনি।

মনিরুল ইসলাম জানান, করোনাকালীন অবসর কাটানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন তারা। কিন্তু, গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজ চাষে তাদের সময়টা কাজে লেগেছে।

তিনি বলেন, ‘করোনাকালে একদিকে কাজের মধ্যে থাকছি। আবার, অন্যদিকে আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছি।’

শিক্ষিত যুবকরা কৃষিতে মনোনিবেশ করলে অনেক ভালো করতে পারবে বলে মত দেন তিনি।

তিন কলেজ শিক্ষার্থীর আবাদ করা গোল্ডেন ক্রাউন জাতের তরমুজ দেখতে দূরদূরান্ত থেকে তালুক হরিশ্বর গ্রামে ভিড় করছেন বিভিন্ন গ্রামের মানুষ। এই দর্শনার্থীরা তাদের কাছ থেকে তরমুজও কিনে নিচ্ছেন।

কুড়িগ্রাম শহরের ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন (৫৬) জানান, খবর পেয়ে তিনি গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজ দেখতে এসেছেন।

তিনি বলেন, ‘তিন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাদের কাছ থেকে ১৫ কেজি তরমুজও কিনেছি। জেলায় এই প্রথম গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজ চাষ দেখলাম। শিক্ষিত তরুণদের এই উদ্যোগ আমার খুব ভালো লেগেছে।’

তালুক হরিশ্বর গ্রামের কৃষক দীনোনাথ চন্দ্র বর্মণ (৬৫) জানান, তিনি জীবনে প্রথমবার গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজের চাষ দেখলেন। কলেজছাত্ররা গ্রামে এই জাতের তরমুজ চাষ করায় কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছেন। আগামী বছর নিজেও এ জাতের তরমুজ চাষ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুদ্দীন মিয়া বলেন, ‘কুড়িগ্রাম অঞ্চলের মাটিতে যে গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজের ফলন ভালো হতে পারে, তা তিন কলেজছাত্র প্রমাণ করে দিয়েছেন। কৃষি বিভাগ থেকে তাদের খেত পরিদর্শন করা হয়েছে।’

আগামী বছর স্থানীয় কৃষকদের এ জাতের তরমুজ চাষে উৎসাহ দেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে বীজ সরবরাহ করা হবে বলে জানান তিনি।

সানবিডি/এএ