নতুন বছরে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ৬ চ্যালেঞ্জ

প্রকাশ: ২০১৬-০১-১২ ২১:৫৫:৫৯


World Economic Fনতুন বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে ৬টি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মেরুকরণ, ইউরোপজুড়ে চলমান শরণার্থী সংকট, ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা নিয়ে গণভোট, বিশ্ব অর্থনীতিতে রাশিয়ার ভূমিকা, দুর্বল প্রবৃদ্ধি এবং চীনের সংস্কার নীতির বাস্তবায়ন। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের পূর্বাভাসে উঠে এসেছে এ তথ্য।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, গত ৫ বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি একেবারে খারাপ নয়। তবে বড় ঝুঁকি রয়েছে। বিশ্বের প্রভাবশালী দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য তাদের মন্দা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ফলে নতুন করে চাহিদাও বাড়েনি।
রিপোর্টে বাংলাদেশসহ উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো নিজস্ব শক্তিতে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া চলতি বছর শেষে বৈশ্বিক জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৩.৫ শতাংশ।

রিপোর্টে আরো বলা হয়, ২০১৬ সালটি হয়ে উঠতে পারে বিশ্ব রাজনীতির জনপ্রিয়তা লাভের বছর। অনেক কারণে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক কর্মকা- বাড়বে। এর অন্যতম হলো যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় কয়েকটি দেশের নির্বাচন। এসব নির্বাচন সামনে রেখে বেশ কিছু জনপ্রিয় নেতার কার্যক্রম বেড়েছে। তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প, বার্নি স্যান্ডার, যুক্তরাজ্যের জেরিমি করবিন, নাইজেল পল, গ্রিসের আলেক্সিস স্পিপসার, ফ্রান্সের মেরিন লা পেন এবং স্পেনের পাবলো ইগলেসিস টিওরন অন্যতম। এ সময়ে অর্থনৈতিক কর্মকা- এবং উৎপাদন কমবে। কমে আসবে শ্রমিক মজুরি ও ভোগ। ফলে আর্থিক অনিশ্চয়তা দেখা দেবে। শ্রমের বাজারও অনিশ্চিত হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন বছরে বৈশ্বিক নিরাপত্তাহীনতা এবং শরণার্থী সমস্যা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট এলে তার পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে কিনা, সেটি বিবেচ্য বিষয়। বিভিন্ন কারণেই বেশ কিছু অঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সৈন্য ফিরিয়ে নিতে হতে পারে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ ওই অঞ্চলগুলো আবার নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে। অন্যদিকে জাতিসংঘের রিফিউজি কমিশনের মতে, ২০১৫ সালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ১০ লাখ শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। তারা জার্মানি, সুইডেন, হাঙ্গেরি, অস্ট্রিয়া এবং ইতালির মতো দেশে বেশি প্রবেশ করেছে। এছাড়াও সিরিয়া এবং ইরাকে সংঘাতের কারণে ৪০ লাখ লোক পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা করছে। এর মধ্যে তুরস্ক, লিবিয়া ও জর্ডান অন্যতম। এর ফলে এসব দেশের অর্থনীতিতে এর বড় প্রভাব পড়বে।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের এ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, শুধু ২০১৬ সাল নয়, আগামী এক দশকে ইউরোপের সবচেয়ে বড় সমস্যা হবে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) থাকা-না থাকার বিষয়টি। এ প্রশ্নে এবারই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। আর এ ধরনের গণভোট সব সময় অনিশ্চয়তা ডেকে আনে। প্রতিবেদনে এ প্রসঙ্গে বলা হয়, গণভোটের মাধ্যমে ব্রিটেন আলাদা হলে তারা মহাদেশীয় রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হলো রাশিয়ার অর্থনীতির অনিশ্চয়তা। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস ইস্যুতে ২০১৫ সালে সিরিয়া এবং ইরাকে রাশিয়ার ভূমিকা ছিল আগ্রাসী। এছাড়াও রাশিয়া ও পূর্ব ইউক্রেনের মধ্যেও সংঘাত বিরাজমান। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে রক্ষায় রাশিয়া অব্যাহত সমর্থন দিয়েছে। সাময়িকভাবে কিছুটা বাহবা পেলেও দীর্ঘমেয়াদে ওই অঞ্চলগুলোতে রাশিয়ার প্রভাব কমবে। এছাড়া নিম্নগামী জনসংখ্যার হার, মাদকের কারণে মৃত্যুর প্রবণতা এবং উৎপাদন ও উদ্ভাবনের পরিবর্তে প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর দেশটির নির্ভরশীলতা বেশি। এসব কারণে রাশিয়ায় বিনিয়োগ কমছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। বিশ্ব অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
নতুন বছরে বিশ্বের প্রবৃদ্ধি কমে আসবে। কেননা আর্থিক অস্থিতিশীলতা চলছে বিশ্বজুড়েই। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক মন্দা কাটছে ধীরগতিতে। ইউরোপের অবস্থা আরো খারাপ। ফলে ভোক্তা চাহিদা কমে যাবে। যার প্রভাব পড়বে বিশ্বের শ্রমবাজারে।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের রিপোর্টে বলা হয়, চীনের আর্থিক নীতির সংস্কার নতুন বছরে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে। ২০১৫ সালে চীনের জিডিপির আকার ছিল ১৮ হাজার ৯৭৫ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু দেশটি স্বাভাবিক গতিতে এগোতে চাইলে ব্যবসায়িক খাতের সংস্কার প্রয়োজন। বিনিয়োগ, উৎপাদন এবং ভোগের মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে। রিপোর্টে বলা হয়, চীনের মূল বাজার ছিল উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো। কিন্তু ইতোমধ্যে বেশ কিছু দেশ নিজস্ব শক্তিতে দাঁড়িয়ে গেছে। এছাড়া ইউরোপে মন্দার কারণে দেশগুলোর চাহিদা কমেছে। ফলে চীনের উৎপাদন কমছে। শেয়ারবাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। তবে ইতোমধ্যে দেশটি বেশ কিছু আর্থিক সংস্কার এনেছে। বিশেষ করে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়না এ বছর সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। বাজারের চাহিদা বিবেচনায় রেখে আগামীতে আরো সংস্কারের পথে হাঁটতে হবে চীনকে।