তিস্তা সেচ প্রকল্প এলাকায় অতিরিক্ত এক লক্ষ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের বৃহত্তর তিস্তা সেচ প্রকল্পের কাজের দরপত্র আহবানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চলতি বছরের শেষের দিকে কাজ শুরু হলে ২০২৪ সালে কাজ সম্পন্ন হবে।
সোমবার দুপুরে রংপুর পানি উন্নয় বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সন্মেলনে প্রকল্পের বিভিন্নদিক তুলে ধরেন পানি উন্নয় বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রষাদ ঘোষ।
সংবাদ সন্মেলনে বলা হয়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্প এলাকায় ফসলের নিবিড়তা ২শত ৩১ শতাংশ থেকে ২ শত ৬৮ শতাংশে উন্নীত হওয়ার পাশাপাশি প্রতি বছরে অতিরিক্ত প্রায় ১ লক্ষ মেট্রিট টন ধান উৎপাদন হবে। এছাড়াও ৫ দশমিক ২৭ লক্ষ মেট্রিট টন অন্যান্ন খাদ্য শষ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। যার বর্তমান বাজার মুল্য প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা।
এছাড়া কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং প্রকল্প এলাকায় পরিবেশ, ভু-গর্ভস্থ পানির স্তরের অধিকতর উন্নতিকরন, জীব-বৈচিত্র রক্ষা ও প্রকল্প এলাকায় বসবাসরত প্রায় ৩০ লক্ষাধিক মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতিসাধিত হবে।
মুল পরিকল্পনা অনুসারে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের সর্বমোট এলাকা ৭ লক্ষ ৫০ হাজার হেক্টর এবং সেচযোগ্য এলাকা ৫ লক্ষ ৪০ হাজার হেক্টর।
প্রকল্পটিতে ইতোমধ্যে প্রথম পর্যায়ের আওতায় সেচ কাঠামোসহ প্রায় ১ লক্ষ ২৬ হাজার হেক্টর কমান্ড এলাকায় সেচ নেটওয়ার্ক তৈরী করা হয়েছে। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের আওতায় ৫ লক্ষ ৯৬ হাজার হেক্টর কমান্ড এলাকায় আরো ৪ লক্ষ ২৮ হাজার ৫ শত ৯৪ হেক্টর সেচযোগ্য এলাকা সেচ সুবিধার আওতায় আনার সম্ভবনা রয়েছে।
বর্তমানে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রন ও নিস্কাশন সুবিধাসহ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রায় ৭ শত ৪০ কিলোমিটার সেচখাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রংপুর, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলার ১২ উপজেলায় প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে সেচের পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া আমন মৌসুমে সম্পুরক সেচ প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
সংবাদ সন্মেলনে আরো বলা হয়, প্রকল্প এলাকায় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে বার্ষিক গড়ে ১০লক্ষ মেট্রিক টন। প্রতি বছর ডিজেল সাশ্রয় হয়েছে ১ কেটি ১৩ লক্ষ লিটার যার বাজার মুল্য প্রায় ৭৪ কোটি টাকা। ফসলের নিবিড়তা ১ শত ৮০ ভাগ থেকে ২ শত ৩৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকল্প এলাকার ভূগর্ভ¯হ পানির স্তর এলাকা ভেদে ১ মিটার হতে ৩ দশমিক ৫০ মিটার উপরে উঠায় বনায়ন বৃদ্ধিসহ অভ্যন্তরীন নদী সমুহে সারা বছর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে প্রকল্প এলাকা আর্সেনিক মুক্তও হয়েছে।
প্রধান সেচ খাল সমুহের উভয় ডাইকে ব্যাপক হারে বনায়নের ফলে দেশীয় পাখির বংশবৃদ্ধি ঘটেছে এবং পরিযায়ী পাখির আগমন হচ্ছে। এতে জীব বৈচিত্রের ক্ষেত্রেও ব্যাপক উন্নতি হয়েছে । বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৩০ কিলো মিটার সেচখাল, ৪৫ হেক্টর এলাকা সিল্টট্রাপে মৎস্য চাষ হচ্ছে।
অপরদিকে প্রায় ৫ শত ৫০কিলোমিটার দীর্ঘ সেকেন্ডারী ও টারশীয়ারী সেচখালের ডাইক প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামীণ রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া ৭৪ কিলোমিটার প্রকল্প সড়ক এবং তিস্তা প্রধান খাল, বগুড়া সেচখাল ও দিনাজপুর সেচখালের উপর দিয়ে নির্মিত মোট ৬৭কিলোমিটার পরিদর্শন সড়ক জাতীয় মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত হয়েছে।
প্রকল্পটির মাধ্যমে উক্ত এলাকার অতি দারিদ্রতার হার ৬১ ধশমিক ৫০ শতাংশ থেকে বর্তমানে ১৪ দশমিক ২০ শতাংশে দাড়িয়েছে। মাটি নির্মিত সেচখাল সমুহ বিশেষ করে ভাটির দিকে ক্ষতিগ্রস্থ যাওয়ায় সেচযোগ্য এলাকা ৮৪ হাজার হেক্টর হতে প্রায় ৫০হাজার হেক্টরে দাড়িয়েছে।
এ অবস্থা হতে পরিত্রানের জন্য সেচ খাল সমুহের ডাইক পুনর্বাসন ও শক্তিশালীকরন এবং নুতন সেচযোগ্য এলাকা প্রায় ১৭হাজার হেক্টর বৃদ্ধিকরনসহ মোট সেচযোগ্য এলাকা প্রায় ১ লক্ষ ৪ লক্ষ হেক্টরে এ উন্নীতকরনের জন্য একটি প্রকল্প প্রনয়নের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।