অফিস শেষ করে তিনি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যান। কখনও সঙ্গী হন স্ত্রী বা ছোট্ট সন্তান। নিজের দায়িত্বরত উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘোরেন। কৃষক, শ্রমিক-রাস্তার পাশের অসহায় মানুষের হাতে তুলে দেন খাবারের প্যাকেট। অফিস ছুটির পর নিজের টাকাতেই খাবার কিনে পৌঁছে দেন দু:স্থ মানুষের হাতে। তিনি শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর আল নাসীফ।
স্থানীয় প্রশাসনের এই কর্মকর্তা ওই এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে হয়ে উঠেছেন অনন্য এক মানুষ। ধানকাটা শ্রমিক, মাটিকাটা শ্রমিক, ইটভাটার শ্রমিক, হকার থেকে শুরু করে বেদে পল্লীর দুস্থ মানুষের আপনজন হয়ে উঠেছেন তিনি।
৩১তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা তানভীর আল নাসীফ বলেন, 'একদিন তার জেলা প্রশাসক (ডিসি) পারভেজ হাসান তাকে বলছিলেন, সাধারণ মানুষের জন্য এখনই কিছু করার সময়। প্রশাসনের কর্মকর্তারা গ্রামে দায়িত্ব পালন করার সময়ে দু:স্থ, অসহায় মানুষের কাছাকাছি থাকতে পারেন। পদোন্নতি বা শহরে দায়িত্ব পালন করলে সেভাবে এটা করা সম্ভব হয় না। ডিসি স্যারের উৎসাহের পর থেকেই তিনি সরকারি দায়িত্ব পালনের বাইরে চলমান সমস্যার মধ্যে অতি সাধারণ মানুষের কাছে খাবার পৌছে দিচ্ছেন।'
তিনি বলেন, অফিস শেষে একেক দিন ভেদরগঞ্জ উপজেলার একেক এলাকায় যান তিনি। গত ১৮ দিন ধরে গ্রাম ঘুরে, কাঁচা রাস্তায় হেঁটে অসহায় মানুষের দেখা পেলে তাদের হাতে খাবারে প্যাকেট তুলে দিচ্ছেন। প্রতিদিন ৫০ জন দরিদ্র, অসহায় ও খেটে খাওয়া মানুষের হাতে এক পিস মুরগি, একটা ডিমসহ এক প্যাকেট বিরিয়ানি তুলে দিচ্ছেন।
তানভীর আল নাসীফ আরও বলেন, সরকারি দায়িত্ব পালনকালে ব্যস্ততার কারণে সেভাবে সাধারণ মানুষের কথা জানা হয় না। কিন্তু খাবার পৌঁছে দিতে গিয়ে সরাসরি প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে মিশতে পারছেন, তাদের কথা শুনছেন। এতে নিজের দায়িত্ব পালনও সহজ হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের একজন কর্মকর্তাকে মাঝে পেয়ে সাধারণ মানুষও আনন্দিত হচ্ছেন।
ভেদরগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ পর্যন্ত ভেদরগঞ্জের ছয়গাঁও, রামভদ্রপুর, নারায়ণপুর, কার্তিকপুর, মহিষার, চরভাগা, ডিএমখালী ও সখিপুর এলাকায় ৯০০ প্রান্তিক মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করেছেন।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর আল নাফীস ওই উপজেলায় দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই জনবান্ধব কাজ করে আসছেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যাচ্ছেন।