বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে নিযুক্ত নতুন প্রতিষ্ঠান স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করতে পারছে না। লাইসেন্স প্রত্যাশীদের জন্য আশার খবর হলো, আগামী জুনের পর প্রতিষ্ঠানটি স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স স্বাভাবিক গতিতে সরবরাহের প্রক্রিয়া শুরু করবে।
তবে এখন শুধু বিদেশযাত্রার মতো জরুরি প্রয়োজনে সীমিত সংখ্যক ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করা হবে বিআরটিএ থেকে। ফলে কমপক্ষে প্রায় ১০ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনকারীর অপেক্ষা সহসাই শেষ হচ্ছে না। সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্রুত স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের জন্য নির্দেশ দিলেও তাতে ফল হচ্ছে না।
জানতে চাইলে বিআরটিএ’র পরিচালক (প্রকৌশল) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস শনিবার ১৫ মে সকালে বলেন, নতুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে। পুরনো প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটি বাংলাদেশ লিমিটেডের সঙ্গে বিআরটিএ’র চুক্তি আগামী জুন অবধি বহাল আছে। ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে নতুন প্রতিষ্ঠান স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের সরবরাহ স্বাভাবিকভাবে শুরু করবে বলে আশা করছি। সরকারি ছুটির দিন ছাড়া অন্যান্য দিনে বিদেশ যাবার মত জরুরি দরকারে লাইসেন্স দেওয়ার জন্য বিআরটিএ’র সব জেলার দফতরে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের জন্য বিআরটিএ এর সঙ্গে নতুন চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানটি হলো মাদ্রাজ সিকিউরিটিজ প্রিন্টার্স। গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের কথা ছিল প্রতিষ্ঠানটির। তারপর দুই দফায় সময় বাড়িয়ে নিয়েও তা সরবরাহ করতে পারেনি। তারপর করোনা সংক্রমণ গত ১৪ এপ্রিল থেকে সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের অফিস বন্ধ রেখে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। টানা তিন দফার নিষেধাজ্ঞায় বন্ধ রয়েছে বিআরটিএ’র স্বাভাবিক কার্যক্রম। তবে গত ৯ মে থেকে সংস্থার সারাদেশের মেট্রো ও জেলা সার্কেলে সীমিত পরিসরে পুনরায় চালু হয়। কিন্তু আবার ঈদের ছুটি চলছে। ছুটিশেষে রোববার (১৬ মে) থেকে আবার জরুরি কার্যক্রম চলবে বিআরটিএতে।
তবে লাইসেন্স পেতে আগ্রহীদের ভোগান্তি কমছে না। ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা কামরুল হাসান বলেন, আমি ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য শিক্ষানবিশ লাইসেন্স করেছি আড়াই মাস আগে। আরও তিন মাস মেয়াদ আছে এটির। তারপর যে পরীক্ষা নেওয়া হবে তা নিশ্চিত হতে পারছি না। আমার পরিবারের আরও দু’জন সদস্য সব প্রক্রিয়া শেষ করার পরও লাইসেন্স পাচ্ছেন না। বার বার তাদের তারিখ দেওয়া হচ্ছে।
আগামী পাঁচ বছরে মাদ্রাজ সিকিউরিটিজ প্রিন্টার্স ৪০ লাখ স্মার্টকার্ড সরবরাহ করবে বলে চুক্তি হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি সেন্ট্রাল এনরোলমেন্ট স্টেশন স্থাপনের কাজ পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি। রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে মোল্লা টাওয়ারে এই কেন্দ্র স্থাপনের কাজেও শর্ত মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন জেলায় জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি এখনও।
টাইগার আইটি বাংলাদেশ লিমিটেড ও বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, কমপক্ষে ১০ লাখ আবেদনকারী বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষ করেও স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছেন না। প্রস্তুতি পর্বে চারটি জেলা থেকে লাইসেন্স সরবরাহের কথা ছিল প্রতিষ্ঠানটির। লাইসেন্স না পাওয়ায় বিদেশে চাকরিতে অনেকে যোগ দিতে পারেননি। কেউ গাড়ি চালাতে অন্যভাবে জাল লাইসেন্স ব্যবহার করছেন। কেউ পেশা বদল করছেন। অনেক চালক মামলার স্লিপ নিয়ে চলাচল করছেন।
দেশজুড়ে গাড়ি চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্বাভাবিক সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে। এরপর থেকে সংকট মাত্রা অতিক্রম করেই চলেছে। টাইগার আইটি বাংলাদেশ লিমিটেডের সঙ্গে বিআরটিএ’র চুক্তি আছে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। চুক্তির মেয়াদ থাকলেও চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সরবরাহ শেষ হয় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে। মধ্যবর্তী সংকট মোকাবিলায় প্রায় এক বছর আগে চিঠি দিয়ে বিআরটিএকে আগাম সতর্ক করেছিল টাইগার আইটি বাংলাদেশ লিমিটেড। ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে গভীর সংকটের মুখে বিআরটিএ এর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমানকে সরে যেতে হয়েছিল।
২০১১ সালের নভেম্বর থেকে বিআরটিএ স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স দিচ্ছে গ্রাহকদের। প্রথম পাঁচ বছর সরবরাহে সমস্যা হয়নি। এরপর থেকেই সংকট শুরু হয়। ধীরে ধীরে তা প্রকট রূপ নেয়।