রাজধানীর খিলক্ষেতে পুলিশ ও ছিনতাইকারী দলের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং গোলাগুলির ঘটনায় এনামুল ও রাসেল নামে দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার (১৭ মে) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে সশস্ত্র ছিনতাই রোধে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ও খিলক্ষেত থানা পুলিশ সমন্বিত এ অভিযান চালায়।
মঙ্গলবার সকালে ডিএমপির গুলশান গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান এসব তথ্য জানান।
গোলাগুলি থামার পর স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ একটি সবুজ রঙের সিএনজিসহ নয়ন ও ইয়ামিন নামে দুই ছিনতাইকারীকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাতেনাতে গ্রেফতার করে। ঘটনাস্থল থেকে তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি সিএনজি অটোরিকশা, একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি ম্যাগজিন, কাঠের বাটযুক্ত একটি পুরানো ধারালো ছুরি, দুটি টাইগার বাম, একটি সবুজ রঙের গামছা, ৯টি মোবাইল ফোন, ১৬টি ইয়াবা ট্যাবলেট, একটি লাইটার এবং নগদ ৫ হাজার টাকা উদ্ধার করে।
ডিসি মশিউর রহমান বলেন, রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে লাখ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। ঢাকার ভেতরে গভীর রাতেও এই যাওয়া-আসা অব্যাহত ছিল। গভীর রাতে শহরে বাস-মিনিবাসের মতো গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অনেক সময় সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস এবং মালবাহী ছোট পিকআপও যাত্রী আনা-নেওয়া করে থাকে।
কয়েকটি ডাকাত চক্র গণপরিবহনের এই স্বল্পতাকে কাজে লাগিয়ে রাইড শেয়ারের নামে মানুষের সর্বস্ব ডাকাতি করে নিচ্ছে, এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল। এই ডাকাতি করতে গিয়ে দু-একজন নিরপরাধ ভিকটিমকে ফাঁস দিয়ে হত্যা করে ফেলে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
ঈদফেরত নগরবাসীকে কেন্দ্র করে অপরাধীচক্র আবার তৎপর হয়ে উঠতে পারে এমন আশঙ্কায় গোয়েন্দা তথ্য, প্রযুক্তিগত উপাত্তের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একাধিক টিম কুড়িল-বিশ্বরোড ফ্লাইওভার, খিলক্ষেত, কাওলা, ঢাকা-ময়মনসিংহ রোড ও পূর্বাচলগামী ৩০০ ফিট রাস্তাতে টহল জোরদার করে।
ডিসি মশিউর রহমান বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একাধিক টিম খিলক্ষেত থানা পুলিশের সঙ্গে নিরাপত্তা টহল দিচ্ছিল। ডিবি পুলিশের একটি দল কাওলা হয়ে পূর্বাচলগামী ফ্লাইওভারের প্রবেশমুখে, দ্বিতীয় দলটি পূর্বগামী ফ্লাইওভারের মাঝে অবস্থান নিয়ে তল্লাশি করছিল।
রাত সোয়া ২টার দিকে কাওলা থেকে বিশ্ব রোডের দিকে একটা সবুজ রঙের সিএনজি কয়েকজন লোককে নিয়ে যাচ্ছিল। চেকপোস্টরত থানা পুলিশ এবং গোয়েন্দা পুলিশের প্রথম দলটি সিএনজিটিকে থামানোর ইশারা দিলে সেটি দ্রুত বেগে ৩০০ ফিট ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে পূর্বাচলের দিকে পালিয়ে যাচ্ছিল। ডিবি পুলিশের ওই দলটি ব্রিজের মাঝে থাকা দ্বিতীয় দলকে ওয়ারলেসের মাধ্যমে সতর্ক করলে তারা তাদের মাইক্রোবাসকে আড়াআড়ি দাঁড় করিয়ে দেয় এবং প্রথম দলটি পেছন থেকে ধাওয়া করতে থাকে।’
কিছুক্ষণ পরে সিএনজি থেকে দুজন সন্ত্রাসী নেমে দৌড়ে সামনে যেতে থাকে এবং পুলিশের একটি মাইক্রোবাস আড়াআড়ি দেখে সেটিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। এতে ডিবি পুলিশের একটি মাইক্রোবাসের বাম দিকের কাঁচ ভেঙে যায়।
গুলশান ডিবি প্রধান আরও বলেন, আত্মরক্ষার্থে আক্রান্ত মাইক্রোবাস থেকে ডিবি পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় সন্ত্রাসী এবং পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং গোলাগুলি চলে।
এক পর্যায়ে গোলাগুলি থেমে গেলে সবুজ রঙের একটি সিএনজি অটোরিকশা (ঢাকা থ ১১- ৭৯৪৫) ফ্লাইওভারের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। সেটির ভেতর থেকে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।
কিছুদূরে দুজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফ্লাইওভারের ওপর পড়ে থাকতে দেখা যায়। খিলক্ষেত থানা পুলিশের মাধ্যমে তাদের দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। এই সময়ে তাদের দেহ তল্লাশি করে ৯ পিস ইয়াবা এবং দুটি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। আহতদের একজনের ডান হাতের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল এবং দুই রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়। অপরজনের হাত থেকে একটি পুরাতন কিন্তু ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতার চালক এবং তার সহযোগীর কাছ থেকে চারটি মোবাইল, ৭টি ইয়াবা এবং তাদের তথ্য অনুযায়ী সিএনজিরর পেছনের সিটের নিচ থেকে তিনটি স্মার্টফোন, মলম, গামছা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, সিএনজি ড্রাইভারের নাম নয়ন এবং পাশের সিটে বসেছিলেন ইয়ামিন।
তারা আরও জানায়, ঘটনাস্থলে রক্তাক্ত দুজনের নাম হলো- এনামুল ও রাসেল। দুজনই সিএনজির পেছনে বসা ছিলেন। পুলিশের দুটি মাইক্রোবাসের দ্বারা ব্যারিকেড হওয়ায় তারা নেমে পালাচ্ছিলেন এবং সঙ্গে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলিবর্ষণ করেন।
গ্রেফতার এবং নিহতরা ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যা এবং মাদকের একাধিক মামলার আসামি। তারা সবাই মাদকাসক্ত। আসামিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক এবং দায়িত্বরত পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আলাদা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।