চলছে আমের মৌসুম। ব্যস্ত সময় পার করছেন সাতক্ষীরার আম ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। এ জেলার আমের সুনাম দেশজুড়ে, কদর রয়েছে বিদেশেও। আবহাওয়াজনিত কারণে সাতক্ষীরার আম পাকে আগে। এজন্য দেশের বাজারে সবার আগে বিক্রি শুরু হয়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাবদাহের কারণে গাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ আম ঝরে গেছে। এরপরও এ বছর ফলন বেশি। তবে দাম কম। খরায় আম আকারে ছোট, মিষ্টিও কম।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, অন্যবার এ সময়ে আম আকারে যতটুকু হয়েছিল এবার বৃষ্টির অভাবে তার চেয়ে ছোট। তবে ফলন ভালো হওয়ায় লাভবান হবেন ব্যবসায়ীরা।
তালা উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের চরগ্রামের আম ব্যবসায়ী নাসির শেখ ৪০ বছর ধরে আমের ব্যবসা করছেন। আম ব্যবসায় সফল তিনি। তবে গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পানে আম নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন।
নাসির শেখ বলেন, পাঁচ লাখ টাকায় আমের সাতটা বাগান কিনেছি। সব বাগানেই প্রচুর ফল। কালবৈশাখী ঝড়েও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে বৃষ্টি না হওয়ায় আম আকারে ছোট, মিষ্টিও কম। গোপালভোগ আম অনেক মিষ্টি; তবে এ বছর খুব টক। খরার ফলে এমন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ বছর প্রতি মণ হিমসাগর রাজধানীর আড়তে বিক্রি করছি ১৪০০-১৫০০ টাকা। বাগান থেকে আমরা কিনছি ১২০০-১৩০০ টাকা মণ। গত বছরের থেকে দাম ২০০-২৫০ টাকা কম। গতবার আম্পানে আম নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ক্ষতি হয়েছিল অনেক। এবার লাভ হবে।
তালা সদরের শিবপুর গ্রামের ফারুক খান বলেন, গাছে পাকা হিমসাগর আম খেয়েছি। অনেক মিষ্টি। তবে গোপালভোগ টক। এলাকার সব গাছেই কমবেশি আম ধরেছে।
১ মে থেকে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ ও আগামজাতের আম, ২১ মে হিমসাগর, ২৭ মে ল্যাংড়া ও ৪ জুন থেকে আম্রপালি আম ভাঙার দিনক্ষণ নির্ধারণ করে দিয়েছিল সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন। তবে তার আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা আম ভাঙা শুরু করেন।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় হিমসাগর ১৫৫০ হেক্টর, ল্যাংড়া ৫৬৪ হেক্টর, আম্রপালি ৮৯৯ হেক্টর, গোপালভোগ ২১৯ হেক্টর, গোবিন্দভোগ ৩৫২ হেক্টর, লতা ১৫৩ হেক্টর, বোম্বাই ৫০ হেক্টর, মল্লিকা ৮০ হেক্টর ও অন্যান্য ২৩১ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ২৯৯টি বাগানে আমের চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে আমের উৎপাদন হয়েছে ১০-১১ মেট্রিক টন। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিক টন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে ৫০০ মেট্রিক টন হিমসাগর ও গোবিন্দভোগ আম।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই পেকে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা আম ভেঙেছেন। সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবির অনুরোধে আম ভাঙার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এখন গোপালভোগ, হিমসাগর আম ভাঙছেন ব্যবসায়ীরা। আগামী ৮-১০ দিনের মধ্যেই হিমসগার আম ভাঙা শেষ হয়ে যাবে। তবে আম্রপালি, লতাসহ কিছু আম থাকবে গাছে। পরে সেগুলো নামানো হবে।
তিনি বলেন, এ বছর আমের ক্ষতি হয়নি। সে কারণে আম ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। তবে খরার কারণে আম বড় হয়নি, মিষ্টিও একটু কমেছে।
সানবিডি/এএ