মহামারি করোনার চিকিৎসায় প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। মানুষ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো ও শ্বাসকষ্টসহ নানা উপসর্গ লাঘবে ইউনানী এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। করোনায় সুনির্দিষ্ট অ্যালোপ্যাথ চিকিৎসা না থাকায় ভরসা রাখছেন হার্বাল চিকিৎসায়। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্সের প্রভাব ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসহ নানা কারণে নিরাপদ ইউনানী এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার পদ্ধতির প্রতি আগ্রহ সচেতন মহলের।
প্বার্শপ্রতিক্রিয়ার ভয়ে অনেক সচেতন তরুণ-তরুণী হার্বাল কসমেটিকস ব্যবহারে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। যে কারণে কোন পণ্য বা ব্র্যান্ডে প্রাকৃতিক, আয়ুর্বেদিক, হার্বাল ও ইউনানী সূত্র ব্যবহার করলেই তার কাটতি বেড়ে যায়। ফলে এ শব্দগুলোর অপব্যবহারও বাড়ছে দিনদিন। যাদের ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হার্বালের বিষয়ে কোন ধারণা নেই তারা এই দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে শব্দগুলো ব্যবহার করে ব্যবসা সাজিয়ে বসেছেন বিভিন্ন কায়দায়। কখনও রূপচর্চার প্রসাধনি সামগ্রী, কখনও ফুড সাপ্লিমেন্টে নাম হিসেবে ব্যবহারে সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে প্রাচীন এই চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো। এতে বিভ্রান্ত হচ্ছে মানুষ। রাসায়নিক উপাদান ব্যবহারে নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছেন। লোকসান তো বটেই বড় ক্ষতির শিকারও হচ্ছেন অনেকে।
এগুলো নিয়ন্ত্রণে যেন দেখার কেউ নাই। গ্রাম, গঞ্জ, শহর অপপ্রচারে সয়লাব হয়ে গেছে। যৌন চিকিৎসার নামে বেনামী নানা হাতুরেদের ওষুধ ও চিকিৎসায় অতি মোনাফা লোভীরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এই অপকর্ম চলছে বছরের পর বছর। সম্প্রতি যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হচ্ছে বিউটি পার্লার, ম্যাসেজ বা থেরাপি সেন্টারে ইউনানী, আর্য়ুবেদিক ও হার্বাল ওষুধ-কসমেটিক বা পদ্ধতির নামে জনসাধারণকে ধোকা দিচ্ছেন। ম্যাসেজ সেন্টারের নামে চলে যৌনকর্ম। এগুলো জেনেও চুপ প্রশাসন। এসব চলতে থাকলে এ চিকিৎসা পদ্ধিতি থেকে সচেতন মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিবে। যা জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্যের। দেশে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার নাম ভাঙিয়ে অপচিকিৎসা, প্রতারণা ও এসব শব্দ ব্যবহারে দ্রুত নীতিমালা ও নির্দেশনার প্রয়োজন। বিএমডিসি অ্যাক্টে যেমন ডা. শব্দ ব্যবহারে যেমন আইন রয়েছে। সেই আইনে অনেককেই শাস্তির নজিরও রয়েছে। তেমন এসব ব্যবহারেও বিধি আরোপ করতে হবে।
অন্যদিকে, ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে ড্রাগ এডমেনিস্ট্রেশনের অনুমতি পেতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের চিকিৎসককে নিয়োগ দিতে হয়। এক্ষেত্রেও সে নিয়ম পালনে বাধ্য করা উচিত। বিএসটিআইকেও এক্ষেত্রে কাজে লাগানো যেতে পারে। এসব নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের দেশজ ও হোমীয় বিভাগ, ইউনানী-আয়ুর্বেদিক বোর্ড, ভোক্তা অধিকার আইন এবং সর্বপরি আইন প্রয়োগকারী সংস্থ্যা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারে।
দ্রুত ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক কাউন্সিল এবং আইন পাস করতে হবে। স্বাস্থ্যবিভাগের অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার-এএমসির চিকিৎসকদেরকে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে প্রতি জেলা-উপজেলা ও এলাকায় অভিযান চালানোর ক্ষমতা প্রদান করে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যেভাবেই হোক এ চিকিৎসা পদ্ধতির সুনাম বজায় রেখে প্রতারণা থেকে মানুষকে রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। মনিটরিং এর জন্য প্রতি জেলা উপজেলায় ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক এক্সপার্ট চিকিৎসদের নিয়ে কমিটি করতে হবে। এটি করতে পারলে বিএএমএস, বিউএমএস ও ডিএএমএস, ডিউএমএস পাশকরা চিকিৎসকদের কর্মসংস্থ্যানেরও সুযোগ তৈরি হবে। পাশাপাশি মানসম্মত সেবা পাবেন মানুষ। আস্থা ফিরবে প্রাকৃতিক দেশীয় চিকিৎসার।
সাংবাদিক সজীব সাদিক
বিএএমএস, সরকারী ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ।
Sajibsadik108@gmail.com