করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে অর্থনীতিকে চাঙা করতে ‘ব্যবসা সহায়ক’ বাজেট করতে চায় সরকার। এ জন্য করোনা ভাইরাস মহামারিতে সৃষ্ট ক্ষতি থেকে ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখা এবং বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যবসায়ীদের আয়কর ও ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হতে পারে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির করহার বিদ্যমান সাড়ে ৩২ শতাংশ থেকে আড়াই শতাংশ কমে ৩০ শতাংশ হতে পারে। একক ব্যক্তির কোম্পানিকে উত্সাহিত করতে করহার কমে হতে পারে ২৫ শতাংশ। এর বাইরে অন্যান্য কোম্পানির ক্ষেত্রে করহার অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এছাড়া খুবই কম হারে মুনাফা তথা মূল্য সংযোজন হয়, এমন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের (সাধারণ ডিলার, পাইকার ইত্যাদি) আয়কর ও ভ্যাটহারে পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যবসাবান্ধব করা হতে পারে।
উৎপাদনশীল খাতের শিল্পের কাঁচামালের বিদ্যমান আগাম কর (অ্যাডভান্স ট্যাক্স বা এটি) কমতে পারে। কমতে পারে ভ্যাট ফাঁকির জরিমানার হারও। অন্যদিকে নানা সমালোচনা সত্ত্বেও কিছু পরিবর্তন করে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগও থাকছে। ব্যাংক জমার আয়ের ওপর করের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন এনে স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় থাকা শিক্ষার্থীদের কিছুটা কর ছাড় দেওয়া হতে পারে। তবে একই সঙ্গে ব্যবসায়ে স্বচ্ছতা আনতেও কিছু পদক্ষেপ থাকবে। বৈধ উপায়ে স্বর্ণ আমদানি উত্সাহিত করতে করের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তনের ঘোষণা আসতে পারে।
আগামী ৩ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে পরবর্তী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব দিতে যাচ্ছেন। প্রস্তাব পেশকালে তিনি এসব ঘোষণা দিতে পারেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীদের অন্যতম প্রভাবশালী সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) পক্ষ থেকে আগামী তিন বছরে এ করহার আড়াই শতাংশ করে সাড়ে সাত শতাংশ কমানোর দাবি তোলা হয়েছে।
তবে এর বাইরেও অন্যান্য বেশকিছু বিষয়ে ব্যবসায়ীদের আপত্তি রয়েছে। বিশেষত মুনাফা না করা সত্ত্বেও লেনদেনের উপর ন্যূনতম কর আরোপ রয়েছে। অর্থাত্ কোনো কোম্পানি লোকসান করলেও তাকে কর দিতে হবে। এটি নিয়েও ব্যবসায়ীদের ঘোরতর আপত্তি রয়েছে। তারা বলছেন, আয়করের মূলনীতিই হলো আয়ের ওপর কর। কিন্তু আয় না হওয়া সত্ত্বেও ন্যূনতম করের এ ব্যবস্থাটি ব্যবসায় ও বিনিয়োগের অন্তরায়। সম্প্রতি এক আলোচনায় এ ইস্যুটি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। তবে বাজেট সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এক্ষেত্রে পরিবর্তন আসছে না।
ইতিমধ্যে বাজেটে রাজস্ব-সংক্রান্ত পরিবর্তন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। গত বাজেটের শুরুতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। তবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় রাজস্ব আদায় প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম। এনবিআরের হিসাবে, গত জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে আদায় হয়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা।
সানবিডি/এএ