ঘুষে চাপা পড়ে পোশাক খাতের দুর্নীতি : টিআইবি
প্রকাশ: ২০১৬-০১-১৪ ২১:৫৭:২৭
রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের সরবরাহ চক্রের তিনটি পর্যায়ে অন্তত ১৬টি ধাপে দুর্নীতির চিত্র পেয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বৃহস্পতিবার ধানমণ্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবির কার্যালয়ে ‘তৈরি পোশাক খাতের সাপ্লাই চেইনে অনিয়ম ও দুর্নীতি মোকাবিলায় অংশীজনের করণীয়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম, রিসার্স অ্যান্ড পলিসি বিভাগের অ্যাসিস্টেন্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজমুল হুদা মিনা প্রমুখ। সংবাব সম্মেলনে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন শাহজাদা এম আকরাম, নাজমুল হুদা মিনা ও নীনা শামসুন্নাহার।
দুর্নীতি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা টিআইবির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, তৈরি পোশাক খাতের সাপ্লাই চেইনের প্রায় পুরো প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতি যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। পণ্যের মান, পরিমাণ ও কমপ্লায়েন্স এর ঘাটতি ধামাচাপা দেয়া হয় ঘুষের মাধ্যমে।
অংশীজনের সুশাসন ও জবাবদিহিতাহীন এ ধরনের পরিবেশে সর্বোচ্চ মুনাফার জন্য চাঁদাবাজি কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্যের সমন্বয়ে গবেষণায় তৈরি পোশাক খাতের সাপ্লাই চেইনের ১৬টি ধাপে দুর্নীতি পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, ‘সাপ্লাই চেইনের কার্যাদেশ, উৎপাদন ও সরবরাহ-এ তিনটি পর্যায়ে দুর্নীতি বিদ্যমান। এ তিন পর্যায়ের ১৬টি ধাপের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্র্যান্ড/আমদানিকারকের সঙ্গে স্থানীয় এজেন্ট/বায়িং হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ, কমপ্লায়েন্ট কারখার সঙ্গে যোগাযোগ, কার্যাদেশ প্রদান, মূল্য নির্ধারণ/দর কষাকষি, স্যাম্পল করার নির্দেশ, মাস্টার এলসি-ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলা, উৎপাদনের কাঁচামাল/দ্রব্য ক্রয়/আমদানি, পণ্যের মান ও কমপ্লায়েন্ট পরিদর্শন, প্রাক জাহাজীকরণ পর্যায়ের মান পরিদর্শন ও জাহাজীকরণ (এফওবি/সিঅ্যান্ডএফ) ধাপে দুর্নীতি হয়ে থাকে।
ইফতেখারুজ্জামান জানান, ২০১৩ সালের এ খাতের ৬৩টি বিষয়ে সুশাসনের ঘাটতি চিহ্নিত করা হয়েছিল। এসব ঘাটতির মধ্যে সরকার, মালিক ও বায়ারদের ১০২টি উদ্যোগ নেয়ার ফলে তৈরি পোশাক খাতে ৬০ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে। তিনি বলেন, এ খাতের অগ্রগতি ৬০ শতাংশ হলেও তা বাড়াতে সবাইকে আরো উদ্যোগী হতে হবে। অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে কিছু পদক্ষেপ নিলে তৈরি পোশাক খাতের অগ্রগতি আরো বাড়বে। এ জন্য সরকার, কারখানা কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এখানে গুণগত তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। যে জন্য পরিসংখ্যানগত কোনো অনিয়মের তথ্য দিতে পারছি না। তবে আগের তুলনায় সবক্ষেত্রে অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়েছে।
তিনি বলেন, সব সময় অনিয়ম দুর্নীতির জন্য বাংলাদেশের সরকার, উৎপাদকদের দায় দেয়া হলেও দুর্নীতির জন্য বায়াররাও কম দায়ী নয়। অনিয়মের সঙ্গে কম-বেশি সবাই জড়িত। এককভাবে সরকারি কর্মকর্তাদের দায়ী করা ঠিক হবে না। বায়ার, এজেন্ট, যারা এ খাতে সংশ্লিষ্ট তাদের দায়ও এড়ানো যাবে না। এ খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে ২৭ দফা করণীয় ও সুপারিশ করেছে টিআইবি। এর মধ্যে সরবরাহকারী কারখানার পক্ষ থেকে যে কোনো ঘুষের প্রস্তাব। প্রত্যাখ্যান করতে হবে, পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই আকস্মিক কারখানা নিরীক্ষণ ও পরিদর্শন করতে হবে। প্রয়োজনে বায়ার কার্যাদেশ বাতিল ও কারখানার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বায়ারদের নৈতিকতা ও ব্যবসায়িক আচরণ সংবলিত নৈতিক আচরণবিধি রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রতি কারখানার জন্য আলাদা শনাক্তকারী নম্বরের ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পরিশোধ করতে সরকারকে একটি তদারকি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এক্ষেত্রে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও শ্রম মন্ত্রণালয়কে নীতি প্রয়োগে কঠোর হতে হবে।