বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, উৎপাদনমুখী খাতগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিহিৃত করে কার্যকরী উদ্যোগ নিলে ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এবং এগিয়ে যাবে। উন্নত দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মিরাকল বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে প্রয়োজন বর্ধিত উৎপাদনশীলতা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় উৎপাদনশীলতা দিবস উপলক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি অর্গানাইজেশন (এনপিও) এ সেমিনার আয়োজন করে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সুষেণ চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এনপিওর পরিচালক ড. মো. নজরুল ইসলাম। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে প্রাক্তন পরিবেশ ও বন সচিব এ.এইচ.এম. রেজাউল কবির, উৎপাদনশীলতা বিশেষজ্ঞ রূপালী বিশ্বাস, এম. ফজলুল করিম আলোচনায় অংশ নেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ কোনো স্বপ্ন নয়, এটি একটি বাস্তবতা। ইতিমধ্যে সরকার ৫ হাজার ২৪৭টি ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে দেশব্যাপী সেবা প্রদান করছে। ফলে বিভিন্নখাতে উৎপাদনশীলতা বাড়ছে। তিনি রাজনৈতিক স্থিতিশিলতা ও প্রশিক্ষণের ওপর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি নির্ভর করে বলে অভিমত দেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গৃহিত উদ্যোগের ফলে দেশে দরিদ্রের পরিমাণ দ্রুত কমছে। গত কয়েক বছরে ৫ কোটি মানুষ নিন্ম আয় থেকে মধ্যম আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশে দরিদ্রের হার ১০ শতাংশে নেমে আসবে। শিল্পখাতে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সম্প্রতি একনেকে চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য চট্টগ্রামে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এ ছাড়া সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার চীনা বিনিয়োগে মুন্সীগঞ্জের বাউসিয়ায় গার্মেন্টস শিল্প পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। এগুলোতে চীনা কারখানা চালু হলে, শিল্পখাতে উৎপাদনশীলতা জোরদার হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হলে, এ উদ্যোগের সঙ্গে বেসরকারিখাত ও শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বাংলাদেশে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বাড়লেও পুঁজি এবং কারিগরি প্রযুক্তিসহ অন্যান্যখাতে কাঙ্খিত হারে উৎপাদনশীলতা বাড়ছে না।
১৯৯৫ এর আগ পর্যন্ত চীনের উৎপাদনশীলতা বাংলাদেশের চেয়ে কম ছিলো উল্লেখ করে তারা বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় বেসরকারিখাত ও শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং মূল্যবান তথ্যের সহজলভ্যতার ফলে বর্তমানে চীনের উৎপাদনশীলতা বাংলাদেশ থেকে অনেক বেড়েছে। তারা বাংলাদেশকে দ্রুত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে এনপিও’র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে বেসরকারিখাত ও শ্রমিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার তাগিদ দেন।
এর আগে সকালে জাতীয় উৎপাদনশীলতা দিবস উপলক্ষে ন্যাশানাল প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশন (এনপিও) এর উদ্যোগে এক র্যালি বের করে। র্যালিটি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন গেট থেকে শুরু হয়ে আবদুল গণি রোড হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সুষেণ চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে র্যালিটিতে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন বিভিন্ন সেক্টর-কর্পোরেশন ও সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, এনপিও, এপিও সোসাইটি ফর বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, শিল্প-কারখানার মালিক, শ্রমিক ও কর্মচারীরা অংশ নেন।