স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ি নিয়ে শুরু হয়েছে ট্রেনযাত্রা। সাত সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর সোমবার (২৪ মে) থেকে অর্ধেক আসনে যাত্রী নিয়ে আবারও গন্তব্যে ছুটছে ট্রেন।
সকাল ৮টা পর্যন্ত রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সিলেটের উদ্দেশে ‘পারাবত এক্সপ্রেস’ এবং চট্টগ্রামের উদ্দেশে ‘মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেসকে’ ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। দুটি ট্রেনই ছিল বেশ ফাঁকা।
স্বাভাবিক সময়ে সকালবেলা কমলাপুর থেকে অনেকগুলো ট্রেন ছেড়ে যেত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে সোমবার সকালে সেগুলোর অধিকাংশই ছিল না। কারণ অধিকাংশ ট্রেনের সূচনা স্টেশন রাজধানীর বাইরে হওয়ায় সেগুলো আজ সকালে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসছে।
সকালে টিকিট না পেয়ে কমলাপুর স্টেশনের বাইরে অনেককে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। অধিকাংশ যাত্রীই চেষ্টা করেও অনলাইনে টিকিট কাটতে পারেননি। আর অনেকে শুধুমাত্র যে অনলাইনেই টিকিট দেয়া হচ্ছে সে বিষয়টি জানতেন না। স্টেশনে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
মইদুল ইসলাম নামে একজন বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করে টিকিট করতে পারিনি। ভাবলাম স্টেশনে পাওয়া যাবে। এখানে কোনো কাউন্টার খোলা নেই। কীভাবে যাব বুঝতে পারছি না।’
চট্টগ্রামের যাত্রী মিলু মিয়া বলেন, ‘অনলাইনে কীভাবে টিকিট করব জানি না। ট্রেন স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে। টিকিট ছাড়া ঢুকতে দিচ্ছে না।’
কমলাপুরের স্টেশন মাস্টার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নির্দেশনা অনুযায়ী ৫০ শতাংশ আসন খালি রেখে চলছে ট্রেন। আর সব টিকিট অনলাইনে। তাই স্টেশনে কোনো টিকিটের ব্যবস্থায় রাখা হয়নি।’
যাত্রীদের ভোগান্তির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা থাকার কারণেই আমরা কাউন্টারে টিকিট দিতে পারছি না। এ কারণে অনেকে এসে ফিরে যাচ্ছেন। তবে কাউন্টারে টিকিট দিলে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন হতে পারে।’
রোববার রেল ভবনে এক অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, ‘সোমবার থেকে সারাদেশে ২৮ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন, ৯টি মেইল এক্সপ্রেস ও কমিউটার ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। এসব ট্রেনের অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখা হবে এবং সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।’
অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে রোববার সন্ধ্যার পর থেকে অনলাইনে টিকিটও বিক্রি শুরু হয়। ২৮ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন কোন কোন রুটে চলাচল করবে তাও ইতোমধ্যে রেলওয়ে ওয়েবসাইটে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
আজ সকালে ছেড়ে যাওয়া ট্রেন দুটিতে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে দেখা গেছে। এছাড়া যাত্রীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা এবং মাস্ক পরার বিষয়ে নির্দেশনা দিতে দেখা গেছে। মাইক থেকেও স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছিল।
স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার আগে ট্রেনগুলোকে জীবাণুমুক্ত করার কাজ করছিলেন ফেমাস ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। প্রতিষ্ঠানটির সুপারভাইজার গোলামুন নবী রায়হান বলেন, স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় আমরা প্রতিটি ট্রেন ছাড়ার আধাঘণ্টা আগে ভেতরে স্প্রে করছি। এছাড়া ওই ট্রেন ছাড়া পর্যন্ত হাতল এবং টয়লেটে অনবরত স্প্রে করা হচ্ছে।
কমলাপুর থেকে ৭ টা ৪৫ এ ছেড়ে যায় মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস ট্রেনটি। চট্টগ্রামের যাত্রী খায়রুন্নাহার জানান, কাল টিকিট ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি অনলাইনে ঢুকে টিকিট পেয়েছেন। তার কোনো সমস্যা হয়নি।
ভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে গত ৫ এপ্রিল সরকার লকডাউনের বিধিনিষেধ আরোপ করলে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ রোববার আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে সরকার নতুন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এবার অর্ধেক আসনে যাত্রী নিয়ে ট্রেনের পাশাপাশি দূরপাল্লার বাস চলাচলেরও অনুমতি দেয়া হয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, স্বাভাবিক সময়ে ১০২টি আন্তঃনগর ট্রেন এবং ২৬০টি লোকাল, কমিউটার ট্রেন ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করে।
স্টেশন মাস্টার রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, সারাদেশের বিভিন্ন বেইজ স্টেশন থেকে ট্রেন ছেড়ে ঢাকা আসছে। সেগুলো এসে কমলাপুর থেকে ফিরে যাবে। আর যেগুলোর বেজ স্টেশন কমলাপুর সেগুলো কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাচ্ছে।
অর্থাৎ আজ কিছু ট্রেন ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। সে হিসাবে আগামীকাল থেকে সবগুলো ট্রেন পাওয়া যাবে। এদিকে, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কমলাপুর স্টেশনে যাত্রীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে।