ঠাকুরগাঁওয়ে অন্যরকম লিচুর হাট
জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২১-০৫-২৭ ১৫:৪৪:৫৬
ঠাকুরগাঁওয়ে এবার লিচুর ফলন অনেক কম হয়েছে। অধিকাংশ বাগানে ফলনে বিপর্যয় ঘটেছে। তবে কিছু কিছু বাগানের ফলন হয়েছে স্বাভাবিক। ইতিমধ্যে জেলার বাজারগুলোতে লিচু বিক্রি শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় লিচুর গ্রাম নামে পরিচিত পৌর শহরের মুন্সিরহাটে রাস্তার ধারে অস্থায়ী ভিত্তিতে অন্যরকম লিচুর হাট বসেছে। হাটে ছোট নারী-শিশু, যুবক, বৃদ্ধ বিভিন্ন বয়সী মানুষ লিচুর পসরা নিয়ে বসেছেন। বিভিন্ন দামে বিক্রি করছেন লিচু।
বৃহস্পতিবার (২৭ মে) মুন্সিরহাটে গিয়ে দেখা যায় আশপাশের বিভিন্ন বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করে রাস্তার ধারে দোকান সাজিয়ে বসেছেন একদল মানুষ। এলাকার শিশু ও কিশোররা লিচু বাগান থেকে পড়ে থাকা লিচু কুড়িয়ে এনে বিক্রি করে এখানে। আর ক্রেতাও ভিড় করছেন এখানে কম দামে লিচু কিনতে।
ঠাকুরগাঁও শহরের মুন্সিরহাট এলাকায় রাজা ও বাদশা নামে দুটি বড় লিচু বাগানসহ বেশ কয়েকটি লিচুর বাগান রয়েছে। বাগানগুলো চাপাই নবাবগঞ্জের মৌসুমি ফল ব্যবসায়ীরা চুক্তি ভিত্তিক কিনে নিয়েছেন। এর মধ্যে ব্যবসায়ী আজহারুল ইসলাম ১১টি বাগান কিনেছেন। বর্তমানে কাঠালি, গোলাপি, চায়না-৩, মাদ্রাজি ও বোম্বে জাতের লিচু গাছ রয়েছে বাগানে। আগাম জাতির কাঠালি ও গোলাপি জাতের লিচু সংগ্রহ শুরু হয়েছে। বাগানের চারপাশের এলাকার মানুষ বাগানে গিয়ে লিচু সংগ্রহ করতে সহযোগিতা করে বিনিময়ে কিছু লিচু পায়। গাছ তলায় শিশুরাও পড়ে থাকা লিচু কুড়িয়ে কয়েকশ লিচু সংগ্রহ করে। এই লিচু নিয়ে তারা সড়কের পাশে বসে বিক্রি করছেন বিভিন্ন দামে। এতে তারা কিছুটা লাভবান হচ্ছেন।
লিচু বিক্রি করতে আসা মুন্সিরহাট গ্রামের ছোট শিশু হৃদয় বলে, বাগানে লিচু ভেঙ্গে দিয়ে ৫শ লিচু পেয়েছি সেগুলো এখানে বিক্রি করছি। লিচু কিনতে আসা পৌর শহরের টিকাপাড়া মহল্লার বাসিন্দা হুসনেয়ারা বলেন, এ সময়টাতে প্রতি বছর এখানে আসি কম দামে লিচু কিনতে। প্রতি ১শ লিচু ১৫ টাকা থেকে শুরু করে ২শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী খুব কম দামে ভাল লিচু পাওয়া যায় বলে এখানে কিনতে এসেছি।
এছাড়াও পৌর শহরের বিভিন্ন স্থান ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ইতিমধ্যে বাজারে লিচু উঠতে শুরু করেছে। এর মধ্যে পৌর শহরের কালিবাড়ি বাজার, বাসস্ট্যান্ড, ঠাকুরগাঁও রোড, মুন্সিরহাট, গোধুলি বাজারসহ জেলার অন্যান্য বাজারে লিচু বিক্রি করতে দেখা যায়। প্রতি ১শ গোলাপি জাতের লিচু বিক্রি হচ্ছে ১শ থেকে দেড়শ টাকায়, এক হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে ৭শ থেকে ৮শ টাকায়। এগুলোর মধ্যে উৎপাদনকৃত চায়না-৩ জাতের লিচুর চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। এই লিচু খেতেও যেমন সুস্বাদু তেমনি রসালো। দামও বেশি।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাসেল ইসলাম জানান, এ বছর জেলায় প্রায় ৯০০ হেক্টর জমিতে লিচুর ফলন হয়েছে। হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ৫ মেট্রিক টন হিসাবে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩,৬৪১ মে. টন। ইতিমধ্যে গোলাপি, মাদ্রাজি জাতের লিচু বাজারে বিক্রি হতে শুরু করলেও আর কয়েকদিনের মধ্যেই অন্যান্য জাতের লিচুও বাজারে আসবে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আবু হোসেন জানান, এ বছর লিচুর ফলন কম হবে। বিরুপ আবহাওয়া ও ঠিকমত বাগান পরিচর্যা না করায় ফলন আশানুরূপ হয়নি। জেলায় যে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তা অর্জিত হবেনা। তবে বাগানে যে লিচু আছে তা যদি ভালো থাকে তবে কৃষক লাভবান হবেন। ঘন ঘন বৃষ্টির জন্য লিচুতে পোকার আক্রমন বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কাও করছেন তিনি।