অতি দরিদ্রের ৭৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীই সরকারের সামাজিক কর্মসূচির আওতায় দেওয়া সহায়তা পায়নি। অর্থাৎ, করোনা মহামারিতে মাত্র ২৫ শতাংশ অতি দরিদ্র মানুষ সরকারের দেওয়া সহায়তা পেয়েছেন। বাকি যারা এই সুবিধা পেয়েছেন, তারা সবচেয়ে কম আয়ের মানুষ নন। এমনও দেখা অপেক্ষাকৃত সচ্ছল মানুষও সরকারের সামাজিক সহায়তা নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ মে) ‘করোনা মোকাবিলায় ত্রাণ কর্মসূচি : কতটা কার্যকর ছিল?’ শীর্ষক গবেষণা থেকে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সিপিডি, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ, এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন যৌথভাবে গবেষণা ও সংলাপটি আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। সংলাপটি পরিচালনা করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য।
তিনটি সামাজিক কর্মসূচির ওপর গবেষণাটি করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- খাদ্য সাহায্য, খাদ্য সাহায্যের জন্য প্রণোদনা ও ২৫০০ টাকা করে ৫০ লাখ দরিদ্র মানুষকে সরকারের নগদ সহায়তা। গবেষণায় মোট দুই হাজার ৬০০ খানাকে বিবেচনা করা হয়েছে। চলতি বছরে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারের দেওয়া সামাজিক কর্মসূচির ওপর ভিত্তি করে জরিপের কাজ করা হয়।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ও অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. দীপঙ্কর দত্ত সংলাপে সূচনা বক্তব্য রাখেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এতে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম, সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী সংলাপে যুক্ত ছিলেন।
মোস্তাফিজুর রহমান তার উপস্থাপনায় বলেন, সরকারের দেওয়া সামাজিক কর্মসূচির আওতায় আসা জনগোষ্ঠীকে নিয়ে জরিপকালে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষ, যাদের টার্গেট করার দরকার ছিল, তারা পুরোপুরি এর আওতায় আসেনি। আমরা দেখেছি সবচেয়ে কম আয়ের মানুষদের মধ্যে ২৫ শতাংশকে সামাজিক কর্মসূচির আওতায় আনা গেছে। বাকি যারা এই সুবিধা পেয়েছেন, তারা সবচেয়ে কম আয়ের মানুষ নন। এমনও দেখা গেছে অপেক্ষাকৃত ধনী মানুষও ওই তিন সুবিধা নিয়েছে।
গবেষণা জরিপে আরও দেখা গেছে, গ্রামীণ অঞ্চলের তুলনায় শহর অঞ্চলে ওই প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন অপেক্ষাকৃত ভালো হয়েছে। সবচেয়ে কম আয়ের মানুষ বিবেচনায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ১৮.৯ শতাংশ সরকারের দেওয়া ওই সুবিধা পেয়েছেন, যেখানে শহর অঞ্চলে সুবিধা পাওয়া মানুষদের সংখ্যা ৪৩.৩০ শতাংশ। প্রযুক্তি জ্ঞান ও প্রযুক্তি সুবিধা না থাকার কারণে সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য লক্ষ্য করা গেছে। অনেক ক্ষেত্রে নগদ সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তার ১৭ শতাংশ অনেককে ঘুষ বা অন্যান্য খরচ হিসেবে ব্যয় করতে হয়েছে।
অন্যদিকে করোনা মহামারিতে নতুন করে দরিদ্র হওয়া মানুষদের মধ্যে ৭৭.৩০ শতাংশই সরকারের দেওয়া খাদ্য, খাদ্যের প্রণোদনা কিংবা মোবাইলে দেওয়া নগদ সহয়তা- এই তিনটা সাহায্য পাননি। শুধু তাই নয়, নতুন করে দরিদ্র হওয়া মানুষগুলো সরকারে দেওয়া ওই কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগও তেমন পাননি।
পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তালিকা না হওয়ার কারণে অনেক অভিযোগ উঠেছে দাবি করে মোস্তাফিজুর রহমান তার উপস্থাপনায় বলেন, যারা সুবিধা পেয়েছেন, তাদের ৪৪ শতাংশই দাবি করেছেন কর্মসূচিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার যথেষ্ট অভাব ছিল। তালিকা করার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ছিল না। তালিকা কোথাও টানানো হয়নি। কারা সাহায্য পেলেন, কোন ক্যাটাগরিতে দেওয়া হলো ইত্যাদি জানানো হয়নি। এ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে তালিকা করা গেলে বেসরকারি পর্যায়ে যথাযথ সাহায্য পেতে সুবিধা হতো বলে সিপিডি মনে করে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকারের সামাজিক কর্মসূচি পরিচালনার ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার তুলনায় জনসংখ্যা হিসেবে এলাকা ভাগ করে সাহায্য দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো এলাকায় বেশি দরিদ্র থাকলেও তা বিবেচনায় নিয়ে অধিক গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ সরকারের এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে যথাযথ সহযোগিতা দেওয়ার উদ্দেশ্যে সিপিডি, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশের ১৩টি জেলায় ‘গণতান্ত্রিক সুশাসনে জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প পরিচালনা করছে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে- এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় সরকারসহ বেসরকারি পর্যায়ের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনের অংশগ্রহণ ও সক্রিয় অবদান রাখার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে তাদের সক্ষমতা তৈরির চেষ্টা করা। তাই সংলাপে ১৩টি জেলা থেকে স্থানীয় জনগণ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, উন্নয়নকর্মী, এনজিও প্রতিনিধি, ব্যক্তিখাতের উদ্যোক্তা, সমাজকর্মী এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যুক্ত ছিলেন।
সানবিডি/এএ