স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণের তাগিদ দিয়েছেন বক্তারা। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমঝোতায় দক্ষতা বৃদ্ধি, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের দাবি তাদের।
শনিবার (২৯ মে) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ : অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। ওয়েবিনারে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
আহমদ কায়কাউস বলেন, চীন একটি উন্নয়নশীল দেশ হওয়া সত্ত্বেও সারা পৃথিবীতে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় নিজেদের আধিপত্য বজায় রেখেছে। আমাদের নিজস্ব একটি বৃহৎ বাজার রয়েছে। দেশের নাগরিকদের আরও ভালো সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সবাইকে কাজ করতে হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণপরবর্তী সময়ে আমাদের পণ্য উৎপাদন ব্যয় খুব বেশি বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। তবে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে আমাদের।
মুখ্যসচিব বলেন, পরিবেশ সুরক্ষা ও শিল্পায়নে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে দারুণ সাফল্য দেখিয়েছে, ফলে সারাবিশ্বের ১০টি সেরা সবুজ কারখানার মধ্যে ৭টিই আমাদের দেশে রয়েছে। এলডিসি পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবার সহযোগিতা নিশ্চিত করতে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করছি, এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কমিটি সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদানে সক্ষম হবে।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন সরকার ঘোষিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, এলডিসি পরবর্তী সময়ে টিকে থাকার জন্য ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের আরও বিকাশ অপরিহার্য।
ওয়েবিনারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন বলেন, ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বেসরকারি খাতের অবদান থাকবে প্রায় ৮১ শতাংশ। এ অবস্থায় দেশীয় উদ্যোক্তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে। এলডিসি উত্তরণপরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণের ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের অবস্থান আরও দৃঢ় হবে। তাই ব্যবসা-বাণিজ্যের সক্ষমতা বৃদ্ধি, বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।
ঢাকা চেম্বার সভাপতি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ, বিনিয়োগ-ডিজিপি হার বৃদ্ধি, কর হার-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির জন্য একটি রূপরেখা প্রণয়নে তাগিদ দেন। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যের ঘাটতি কমাতে রিজিওনাল কানেক্টিভিটিসহ কৌশলগত পিটিএ এবং এফটিএ স্বাক্ষরের ওপর জোর দেন।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি নিহাদ কবীর বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ পরবর্তী সময়ে বেসরকারি খাতের উন্নয়নে সরকারের দিকনির্দেশনা খুবই জরুরি। একইসঙ্গে সরকারি এবং বেসরকারিখাতের মধ্যে আলোচনা আরও বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, এলডিসি উত্তরণ আমাদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ, তবে এর জন্য আমাদের প্রস্তুুতি নিতে হবে। মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করার আহ্বান জানান তিনি।
সানবিডি/এএ