প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণসংবর্ধনায় জনতার ঢল নামিয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বিভক্ত কমিটির আগে সাংগঠনিক দক্ষতার মহড়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে চান মায়া-আজিজসহ তার অনুসারীরা। তাই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার গণসংবর্ধনায় নেতাকর্মী এবং ঢাকাবাসীর ব্যাপক সমাগম ঘটিয়ে বরাবরের মতো আরেকবার সাংগঠনিক অবস্থান জানান দিতে চান তারা। দলীয় বিশ্বস্ত সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সূত্র জানায়, এ কারণে গতকাল শুক্রবার মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া দলীয় নেতাকর্মী এবং ঢাকাবাসীকে প্রধানমন্ত্রীর গণসংবর্ধনায় শরিক হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।পাশাপাশি এই দুই নেতা মহানগরে তাদের অনুসারী ওয়ার্ড, থানা ও দলীয় সংসদ সদস্যদের মুঠোফোনে আলাদা আলাদা করে নির্দেশনা দিচ্ছেন।
এর কারণ উল্লেখ করে সূত্রটি জানায়, মহানগরের উত্তর ও দক্ষিণের বিভক্ত কমিটিকে কেন্দ্র করে মায়া-আজিজ বিরোধী একটি বলয় তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে মহানগরে মেয়র এবং দলীয় কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে আলাদা একটি প্রভাব বলয় তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার কয়েকজন দলীয় সংসদ সদস্য উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর কমিটিতে শীর্ষ পদের লড়াইয়ে নিজ নিজ বলয় তৈরি করেছেন। এসব বিষযকে মাথায় নিয়েই সংবর্ধনায় ব্যাপক লোকসমাগমের ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক নেতৃত্ব মায়া-আজিজ কাজ করে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে শুক্রবার মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-দফতর সম্পাদক জামাল উদ্দিন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আজিজ ও মায়া ভাই মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষে শনিবার প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার গণসংবর্ধনায় দলীয় নেতাকর্র্মী, শুভ্যানুধায়ীসহ ঢাকাবাসীকে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর আওয়ামী লীগের একজন নেতা জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর অক্টোবরের মধ্যেই যেকোনো সময় মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নতুন কমিটি ঘোষণা করতে পারেন। এজন্য এই দুই নেতা শেখ হাসিনার সংবর্ধনা উপলক্ষে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।’
অন্যদিকে শুক্রবার সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে প্রধানমন্ত্রীর গণসংবর্ধনায় ঐতিহাসিক জনসমাগমের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের আন্তর্জাতিক প্রভুদের ষড়যন্ত্রের দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন নেতারা।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় ‘বিচক্ষণ নেতৃত্বের’ স্বীকৃতি হিসেবে জাতিসংঘের ‘চ্যাম্পিয়ন অফ দ্যা আর্থ’ এবং তথ্য-প্রযুক্তিতে অগ্রগতির স্বীকৃতি হিসেবে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংস্থার (আইটিইউ) পুরস্কার লাভ করায় প্রধানমন্ত্রীকে এই সংবর্ধনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী হজরত শাহজালাল (র.) আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে নামার পর বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে এ সংবর্ধনা দেবে দলীয় নেতাকর্মীরা।
এ লক্ষ্যে গত বুধবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবর্ধনা সফলে এক জরুরি বর্ধিত সভার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথি ও প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও গণসংবর্ধনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক মাহবুব উল আলম হানিফ। সেদিন সভা শুরুর আগে এক অনির্ধারিত কথোপকথনে কাজী জাফরউল্লাহ মহানগর আওয়ামী লীগে মায়ার অতীত রাজনৈতিক অবদান স্বীকার করে বলেন, ‘...তখন একটা মিছিল হবে, মায়া ছাড়া মিছিল করা যায় নাই। কেউ একটা টাকা দেয় নাই। আর সময়ে কত কিছু…।’
তার আগে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে মায়া বলেন, ‘...আগামী মাসে (অক্টোবর) মহানগর ভাঙবে হানিফ ভাইরা। সব রেডি (প্রস্তুত) হয়ে গেছে।’
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর। এই সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের পুরোনো কমিটিকে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যত দিন নতুন কমিটি দেওয়া না হবে, তত দিন বর্তমান কমিটিই দায়িত্ব পালন করে যাবে।
পরবর্তী সময়ে মহানগর আওয়ামী লীগকে দুই ভাগে বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর মহানগর আওয়ামী লীগে বিভক্ত কমিটির শীর্ষ পদ নিয়ে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়। এরপর গত ১২ সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি হিসেবে নেতৃত্বে থাকার ইচ্ছে প্রকাশ করেন মায়া। পাশাপাশি দক্ষিণে এম এ আজিজকে এ দায়িত্বে রেখে অন্য কাউকে সাধারণ সম্পাদক করার কথা বলেন মায়া। এ লক্ষ্যে সেদিন তিনি দুপুরে তার বাসায় বৈঠক করেন এম এ আজিজসহ তার অনুসারীদের নিয়ে। এরপর তাদের নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে তার বাসায় সাক্ষাৎ করেন। সৈয়দ আশরাফের কাছেও বিভক্ত মহানগর কমিটির শীর্ষ পদে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেন মায়া-আজিজ।
অন্যদিকে গত সোমবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা মেয়র ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খোকনকে মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক করার দাবি তুলেছেন। সেদিন ডিএসসিসি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া মাহফিলের অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সভাপতি মোহাম্মদ হানিফের পুত্র সাঈদ খোকনকে দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করার দাবি তোলেন কাউন্সিলররা।