আমাদের দেশে লাউ কিংবা কুমড়া গাছে থাকা জোনাকি পোকার মতো গুবরে পোকার বংশজাত এক ধরণের পোকা রয়েছে। এর নাম বিটল। আর্থ্রোপ্রোডা প্রজাতির এই পোকার কারাপাস নামের খোলকের অফুরন্ত রূপ-বৈচিত্র্যের জন্য গ্রাম-বাংলায় বলা হয় কাঁচ পোকা।
এদের বর্ম পোকাও বলা হয়। ফিনফিনে ডিম্বাকৃতির ছোট দেহটা সব সময় ঢাকা থাকে একজোড়া কঠিন ডানা বা বর্মের আড়ালে। এই বর্ম রক্ষা করে গোটা প্রাণিটাকে। অ্যান্টার্কটিকার বরফ আর সাগর-মহাসাগর বাদে দুনিয়ার সবখানে মেলে এই পোকা।
পৃথিবীজুড়ে এই পোকার ১৫ হাজার প্রজাতি দেখা যায়। এই পোকা দেখে বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের মতো ব্যক্তিত্বও চমকে উঠেছিলেন বলে জানা যায়।
সত্যি কি দামি পোকা?
সাধারণত এই পোকা লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি, সবুজ ইত্যাদি রঙের হয়ে থাকে। তবে সোনালি রঙের দামি এই পোকা বেশি দেখা যায় হন্ডুরাসের পার্বত্যাঞ্চলে। হন্ডুরাসে পোকাটা পরিচিত জুয়েল স্ক্যার্যাব নামে। যখন এরা জঙ্গলের কোনো স্থান দিয়ে ঝাঁক বেঁধে উড়ে যায়, তখন এদেরকে দেখে মনে হয় কে যেন একরাশ সোনালি রঙের ঝলমলে জড়ির কাগজের কুঁচি উড়িয়ে দিয়েছে হাওয়ায়। হন্ডুরাসের জঙ্গলের স্ক্যারাবদের কেনো জুয়েল বলা হয়? এই পোকা কতটা দামি? সত্যি কি এদের জুয়েলের পর্যায়ে ফেলা যায়?
সোনার পোকায় কতটা সোনা?
জ্বি, হ্যাঁ। অবাক হলেও সত্যি, সংগ্রাহকরা সোনার চেয়েও বেশি অর্থ মূল্য দিয়ে কেনেন জুয়েল স্ক্যারাব। পৃথিবীতে এই সোনালি রঙের মহামূল্যবান গুবরে পোকার বৈজ্ঞানিক নাম ‘ক্রাইসিনা রিসপ্লেন্ডেনস’। সোনালি রঙের এক ভরি জুয়েল স্কারাবের বর্ম বা পাখার দাম ২০০ ডলার বা ষোলো হাজার টাকা মাত্র। এতো দামের কারণ কি?
এদের ডানা ও মাথায় যে প্রকৃতি প্রদত্ত রঙের আস্তরণ রয়েছে তা সত্যিই দুর্লভ। নিখাদ সোনার রঙ। দেখতে আসল সোনার মতো। চমৎকার চোখ ঝলসানো সৌন্দর্য সত্যিই যেন অবাক করা এক ফ্যান্টাসি। এই রঙ অন্য কোনো গাছপালা বা জীবজন্তুর হয় না। সেজন্য এই রঙ মানুষকে আজও অবাক ও বিস্মিত করে, ভাবিত করে।
বিজ্ঞানীরা বলেন, ‘এই সোনালি স্ক্যারাবের রঙ অরিজিনাল ও অদ্বিতীয় প্রাকৃতিক রঙের সিগনেচার। একে বলে ব্রিলিয়ান্ট গোল্ডেন রঙ। এই রঙ ধাতুযুক্ত। এজন্য একে ধাতব গুবরে পোকাও বলা হয়। এদের গায়ে আলো ফেলা হলে আলো ঠিকরে প্রতিফলিত হয়।’