পরিদর্শন প্রবিধানমালার খসড়া চূড়ান্ত
তদন্ত দলকে তথ্য না দিলে বীমা কোম্পানির নিবন্ধন বাতিল
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-০৬-০৬ ১৫:১৯:৫৯
কর্তৃপক্ষ অথবা তদন্ত দল কর্তৃক চাহিত তথ্য প্রদানে ব্যর্থ বা অহেতুক বিলম্ব করলে সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানির নিবন্ধন বাতিল অথবা প্রশাসক নিয়োগের বিধান রেখে ‘পরিদর্শন ও তথ্য চাহিবার ক্ষমতা প্রবিধানমালা, ২০২১’র খসড়া চূড়ান্ত করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ।
গত ৫ মে আইডিআরএ’র লাইফ ও নন-লাইফ বিধি/প্রবিধান বিষয়ক কমিটির বৈঠকে এটি চূড়ান্ত করা হয়। এর আগে প্রবিধানমালাটির খসড়া কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে আপলোড এবং স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেয়া হয়। খুব শিগগিরই এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
নতুন এই প্রবিধানমালায় (প্রবিধান-৩ এ) পরিদর্শন পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ সময়ে সময়ে বীমাকারীর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য একজন দলনেতাসহ এক বা একাধিক পরিদর্শক দল গঠন করে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।
পরিদর্শক দল বীমাকারীর অঙ্গপ্রতিষ্ঠানসহ (সাবসিডিয়ারি, এসোসিয়েট প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি) যেকোন কার্যালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কিত নিম্ন লি দলিলাদি ও বই সমূহ সরেজমিনে লিখিত বা মৌখিক অধিযাচনের মাধ্যমে পরীক্ষা করতে পারিবে।
অপরাধ ও দণ্ড বিষয়ে এই প্রবিধানমলায় (প্রবিধান-৪ এ) বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পরিদর্শন পরিচালনায় নিম্নবর্ণিত বিষয়াদি অপরাধ বলে গণ্য হইবে: পরিদর্শন পরিচালনা অসহযোগিতা করলে; তদন্ত কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করলে; কর্তৃপক্ষ অথবা তদন্ত দল কর্তৃক চাহিত তথ্য প্রদানে ব্যর্থ হলে; চাহিত তথ্যাদি প্রদানে অহেতুক বিলম্ব করলে এবং কর্তৃপক্ষের শুনানিতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশনা উপেক্ষা করলে।
পরিদর্শন প্রতিবেদনের বিষয়ে বীমাকারীর লিখিত ব্যাখ্যা এবং শুনানিতে উত্থাপিত বক্তব্যে কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট না হলে আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় ধারার বিধান মোতাবেক কর্তৃপক্ষ বীমাকারীকে অভিযুক্ত করতে পারবে।
সে ক্ষেত্রে (৩) উপ-প্রবিধান (১) ও (২) অনুযায়ী বীমাকারী অভিযুক্ত হলে আইনের পরিদর্শন সংশ্লিষ্ট ধারা ৪৯ এর উপর ধারা ৪ অনুযায়ী দণ্ড আরোপ করা যাবে। তবে তথ্য প্রদানের সাথে সংশ্লিষ্ট উপ-প্রবিধান ১(গ) ও (ঘ) -তে উল্লেখিত অপরাধের জন্য আইনের ধারা ১০, ৫০, ৯৫, ১৩০, ১৩১, ১৩৪ এর বিধান মোতাবেক কর্তৃপক্ষ যেইরূপ উপযুক্ত মনে করিবে সেইরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।
উল্লেখ্য, বীমা আইন ২০১০ এর ধারা ১০ উপধারা (৫) এ বলা হয়েছে, বীমাকারী কর্তৃক উপ-ধারা (৪) এর দফা (খ) এর অধীন গৃহীত কার্যক্রমে সন্তুষ্ট না হইলে কর্তৃপক্ষ, অবিলম্বে, বীমাকারীর নিবন্ধন সনদ বাতিল করিবে এবং সন্তুষ্ট হইলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করিবে৷
একই ধারার উপধারা (৬) এ বলা হয়েছে, এই ধারার অধীন কোন নিবন্ধন সনদ বাতিল করিলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনধিক ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষ, লিখিত নোটিশ দ্বারা, বীমাকারীকে তাহার সিদ্ধান্ত অবহিত করিবে এবং এইরূপ সিদ্ধান্ত নোটিশে উল্লিখিত তারিখে কার্যকর হইবে।
ধারা ৯৫ (৪) অনুসারে, কোন ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন পরিদর্শন পরিচালনায় অসম্মতি জ্ঞাপন করিলে বা উপ-ধারা (২) এর কোন বিধান লংঘন করিলে বা উপ-ধারা (৩) এর অধীন কর্তৃপক্ষের কোন আবশ্যকতা পূরণে ব্যর্থ হইলে উহার জন্য অভিযুক্ত হইবে এবং অপরাধী সাব্যস্ত হইলে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে এবং উক্ত অপরাধ সংঘটন চলমান থাকিলে উহার প্রতিদিনের জন্য অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা করিয়া অর্থ দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন৷
অন্যদিকে বীমা আইন ২০১০ এর ধারা ৯৫ এ বীমা ব্যবসা ব্যবস্থাপনায় প্রশাসক নিয়োগের বিধান রয়েছে। আর ১৩০ ধারায় এই আইন পরিপালনে ব্যর্থতা কিংবা লংঘনজনিত কর্মকান্ডের জন্য জরিমানা আরোপের বিধান বর্ণিত হয়েছে।
এ ছাড়াও দলিল, বিবরণী, হিসাব, রিটার্ন ইত্যাদিতে মিথ্যা তথ্য প্রদানের শাস্তি হিসেবে ১৩১ ধারায় অনধিক ৩ বছর কারাদণ্ড অথবা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। আর ১৩৪ ধারায় আইনের বিধান পালনে ব্যর্থতা কিংবা লংঘনজনিত কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত জরিমানার বিধান হয়েছে।