নেপিয়ার ঘাস চাষে আগ্রহ বাড়ছে রাজগঞ্জের কৃষকদের
জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২১-০৬-০৭ ১৭:৩৭:২৫
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জে নেপিয়ার ঘাস চাষের প্রতি ঝুঁকছেন কৃষকরা। অনেকেই এখন এ ঘাস চাষ করে নিজের গবাদি পশুর খাদ্যের প্রয়োজন মিটিয়ে বাড়তি অংশ বাজারে বিক্রি করছেন।
আর এতে করে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় অর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা। রাজগঞ্জের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায় নেপিয়ার ঘাস নিয়ে কৃষকদের কর্মব্যস্ততা। নির্ধারিত সময়ে জমি থেকে ঘাস কেটে কেউ কাঁধে করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন, আবার কেউ আঁটি বেঁধে ভ্যানগাড়িতে করে বিক্রির জন্য বাজারে চলে যাচ্ছেন। অনেক চাষি পাইকারিও বিক্রি করেন এ ঘাস।
চাষিরা জানিয়েছেন, নেপিয়ার ঘাস চাষে পরিশ্রম কম। এ ঘাসের চারা একবার জমিতে লাগাতে ৩ বছরের মধ্যে নতুন করে লাগানো লাগে না। এজন্য চাষিরা এ ঘাস গবাদি পশুর খাদ্যের জন্য জমিতে চাষ করছে। গবাদি পশুর প্রিয় খাদ্য হিসেবে এবং ভিটামিন এ ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এ ঘাসের চাহিদা রাজগঞ্জ অঞ্চলে দিন দিন বাড়ছে।
রাজগঞ্জের খালিয়া গ্রামের নাইমা আক্তার বলেন, তিনি পেশায় একজন কৃষক। চাষাবাদ ও গবাদি পশু পালন তার প্রধান আয়ের মাধ্যম। বাড়িতে তার দুটি দুধের গাভী রয়েছে। এ গাভী প্রতিদিন প্রায় ১০ কেজি দুধ দেয়। ওই দুধ বিক্রি করে তার সংসার খুব ভালোভাবেই চলে। এরই মাঝে গত বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি নেপিয়ার ঘাসের চাষ করেছেন। পাশের গ্রামের কৃষকদের চাষ করা দেখেই সামান্য কিছু জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করেন তিনি। নিজের গবাদি পশুর চাহিদা মিটিয়ে এ ঘাসের অনেকটা অংশই তিনি পাইকারি বিক্রি করেন। এ থেকে তার সংসারে বাড়তি সচ্ছলতাও এসেছে।
রাজঞ্জের ঝাঁপা গ্রামের সোহেল বলেন, তিনি মূলত পেশায় একজন কৃষক ও ভ্যানগাড়ি চালক। বাড়িতে গবাদি পশু আছে। এসবের পাশাপাশি বিঘাখানেক জমিতে নেপিয়ার জাতের ঘাস লাগিয়েছেন তিনি। নিজের গবাদি পশুগুলোকে খাওয়ানোর পাশাপাশি মাঝে মধ্যেই এই ঘাস বাজারে বিক্রি করেন তিনি। এছাড়া অন্যের জমি থেকে নেপিয়ার ঘাস পাইকারি কিনে বিক্রি করে তার পরিবারে সচ্ছলতা ফিরেছে।
সোহেল আরো বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বাজারে এ ঘাসের চাহিদা অনেক। তিনি ভ্যান গাড়িতে করে রাজগঞ্জ বাজারে ঘুরে ঘুরে ১৫ টাক আঁটি দরে এ নেপিয়ার ঘাস বিক্রি করেন। রাজগঞ্জের হানুয়ার গ্রামের নজরুল ইসলাম, মহিদুল, মন্টু, রাজগঞ্জ বাজার পাড়ার ইছাহাক আলী সহ আরো বেশ কয়েকজন কৃষক বলেন নেপিয়ার ঘাস চাষে অনেকেই আর্থিক ভাবে উপকৃত হচ্ছেন। এ ঘাস সহজ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায় এবং পরিশ্রমও অনেক কম। কেবল মাঝে মাঝে ক্ষেতের ভেতর জন্মানো আগাছা পরিস্কার করতে হয়। সব দিক দিয়ে লাভজনক হওয়ায় বেশ কয়েক বছর ধরে তারা এ জাতের ঘাস চাষ করে আসছেন।
তারা আরো জানান, শুরুতে নিজেদের গবাদি পশুর খাদ্যের চাহিদা মেটাতেই এই ঘাস চাষ শুরু করেন তারা। পরি বাড়তি অংশ বিক্রি করতে শুরু করেন। বর্তমানে রাজগঞ্জ অঞ্চলের অনেক কৃষকই তাদের দেখে নেপিয়ার ঘাস চাষ করছেন। রাজগঞ্জ বাজারে এক আঁটি ঘাস ১৫ টাকা দরে বিক্রি করা হয় বলে জানা যায়।
এ ঘাসের কয়েকজন ক্রেতা জানান, রজগঞ্জ বাজার থেকে প্রতিদিনই সহজে এ ঘাস আমরা কিনতে পাই এবং গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করি। নেপিয়ার জাতের ঘাস গবাদি পশুর খাদ্য তালিকায় রেখে অন্যান্য খাবার খাওয়ানো হয়।
নেপিয়ার ঘাস চাষে কৃষকদের আগ্রহ প্রসঙ্গে ঝাঁপা ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ভগীরত চন্দ্র বলেন নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষ লাভ জনক। স্বপ্ল খরচে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হয় এই ঘাস চাষে। রাজগঞ্জ অঞ্চলের অনেক চাষিই নেপিয়ার ঘাস বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন।