বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ এবং উন্নয়ন সমন্বয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বাজেট-পরবর্তি অনলাইন সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তারা স্বাস্থ্যের উন্নয়নে কেবল বরাদ্দ বৃদ্ধিতে আটকে না থেকে পুরো স্বাস্থ্য খাতেকে ঢেলে সাজাতে প্রয়োজনীয় কাঠামোগত পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার (০৭ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এবং উন্নয়ন সমন্বয়ের চেয়ারপার্সন- ড. আতিউর রহমান সংবাদ সম্মেলনে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন যে, বাজেট প্রণেতারা ব্যয় সক্ষমতার বিবেচনায় যথার্থভাবেই এবারের বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থেকেছেন। তবে তাঁর মতে এক্ষেত্রে আরেকটু সাহসী ও উদার হওয়া যেতো। তিনি আরও বলেন যে, এই মূহুর্তে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক শক্তির বিবেচনায় বাজেট ঘাটতি কিংবা প্রবৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো নিয়ে ভাবিত না হয়ে বরং আসন্ন অর্থবছরের মধ্যেই নাগরিকদের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশের জন্য করোনার টিকা নিশ্চিত করাটিই মূল বিবেচ্য হওয়া উচিৎ। এ জন্য ‘স্মার্ট ডিপ্লোমেসি’ এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিদের কার্যকর সহায়তা দরকার হবে বলে তিনি মনে করেন।
সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের কনভেনার- ড. মুশতাক রাজা চৌধুরী। সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বাজেটে স্বাস্থ্য বরাদ্দ ৫ শতাংশের আশেপাশে থেকে যাচ্ছে, যা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়ানো দরকার।
তাঁর মতে এর চেয়েও বড় ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষগুলোর এই অপ্রতুল বরাদ্দও পুরোপুরি ব্যয় করতে না পারা। কাজেই এই বাজেট বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য নীতি-নির্ধারকদের আরও উদ্যোগী হওয়া দরকার বলে তিনি মত দেন।
প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ বরাদ্দকৃত অর্থের অপচয় রোধে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো এবং বাস্তবায়ন দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন।
বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের সদস্য এবং পপুলেশন কাউন্সিলের সভাপতি ড. উবায়দুর রব বলেন যে দেশের নাগরিকদের জন্য পর্যাপ্ত ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করতে আনুমানিক ১.৫ বিলিয়ন ডলার দরকার হবে। বাংলাদেশ সরকার চাইলেই এ পরিমাণ অর্থ রিজার্ভ থেকে ঋণ করতে পারে। তাতে সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর ওই অর্থে বড় চাপ পড়বে না। সীমান্ত এলাকাগুলোতে করোনার প্রাদুর্ভাব যে হারে বাড়ছে তার বিবেচনায় বাজেটে এ জন্য আলাদা বরাদ্দের দাবিও এসেছে আলোচকদের পক্ষ থেকে। এছড়াও আন্তঃ-সীমান্ত রোগ নিয়ন্ত্রণের নীতিমালা নিয়েও এখন থেকে ভাবা দরকার বলে তারা মনে করেন।
ড. আতিউর রহমান বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার জন্য ব্যক্তি খাতের ওপর নির্ভরতার কথা তুলে ধরে প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তি খাতের স্বাস্থ্য সেবা উদ্যোক্তাদের জন্য যে সমস্ত কর ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে সেগুলোকে সময়োচিত বলে অভিহিত করেন। সঞ্চালক ড. মুশতাক রাজা চৌধুরী সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি ‘ভিশন’ দাঁড় করানোর আহ্বান জানান যাতে সেটি অনুসারে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ দেয়া যায়।