শেখ হাসিনার কারামুক্তি: এক-এগারোর অচলাবস্থা ভেঙে নতুন বাংলাদেশের অভিযাত্রা

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২১-০৬-১১ ১২:০৩:৪৮


বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, যার হাত ধরে দুর্ভাগ্যের পথ পেছনে ফেলে এসেছি আমরা। তার হাতে হাত রেখেই ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে উন্নত মম শির হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই পথ সহজ ছিল না। জীবনের প্রতিটি ধাপে ধাপে প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হয়েছে তাকে।

১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর ছয় বছর নির্বাসিত জীবন। এরপর প্রাণ হারানোর আশঙ্কা উপেক্ষা করে বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন। প্রায় এক দশক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়েই দেশকে করে তোলেন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু তারপরও বারবার তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে কেন? কী কারণে তাকে দেশ থেকে নির্বাসিত করার ষড়যন্ত্র? কেন তাকে যেতে হয়েছে নির্জন জেলে? তারপরও কীভাবে তিনি বাংলাদেশকে নতুন রূপে গড়ে তুলছেন? এসবের অনেক কিছুই আমাদের কাছে এখনো অজানা।

বিশেষ করে ২০০৭ সাল। সেই অস্থির সময়ের দমকা হাওয়ায় লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের রাজনীতির চিত্র। কিন্তু দেশ ও জনতার রক্ষাকবচ হয়ে দিব্যি দাঁড়িয়ে ছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। সেই সময়ে তার অদম্য সাহসী ও দূরদর্শী ভূমিকার কারণেই আমরা পেয়েছি আজকের নতুন বাংলাদেশকে। কিন্তু কী ঘটেছিল সেই এক-এগারোর সময়…!

যেভাবে ওয়ান-ইলেভেন বা এক-এগারোর সৃষ্টি:

২০০১ সালে ষড়যন্ত্রের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা দখল করে। এরপর দুর্নীতি ও অপশাসনের মহোৎসবের মধ্য দিয়ে পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হয় তাদের। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর, নিয়ম অনুযায়ী একটি সর্বজন গ্রহণযোগ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা তাদের। কিন্তু লুটপাট অব্যাহত রাখার জন্য অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে, বঙ্গবন্ধুর দুই খুনির স্বজন ও সাবেক একজন বিএনপি নেতাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে বসানোর পাঁয়তারা করেন খালেদা জিয়া। এ ব্যাপারে তীব্র আপত্তি জানায় আওয়ামী লীগ। সংবিধান অনুসারে একজন নির্দলীয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে এই পদে বসানোর দাবি জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা ও তৎকালীন প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়ার পরামর্শে, ২৯ অক্টোবর রাতে, সংবিধান লঙ্ঘন করে, নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন বিএনপি সমর্থিত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ। ফলে সৃষ্টি হয় সাংবিধানিক সংকট।

দেশজুড়ে এই অচলাবস্থার মধ্যেই, ৭ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণা করা হয় এবং ২২ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করে বিএনপি-জামায়াত নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন কমিশন। এরপর ১০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের আদেশে দেশে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়। দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমেও পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটায় এবং বিএনপি-জামায়াত জোট একতরফা সাজানো নির্বাচনের ছক থেকে সরে না আসায়, ২০০৭ সালের ৩ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। এরপর, ৫ জানুয়ারি, লন্ডনের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ইকোনোমিস্টের প্রতিবেদনে আসন্ন একতরফা নির্বাচনকে অর্থহীন বলে অভিহিত করা হয়।

এদিকে দেশজুড়ে উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে সরকারের ক্ষমতা দখলের উদ্যোগ নেয় সামরিক বাহিনীর কিছু সদস্য। ১১ জানুয়ারি, ২০০৭, শীতের পড়ন্ত বিকালে, সেনা প্রধান মইন ইউ আহমেদের নেতৃত্বে তিন বাহিনীর প্রধান এবং আরো কিছু সেনাসদস্য বঙ্গভবনে যান। তাদের পরামর্শে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি নেন এবং দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন। মধ্য রাতে ফখরুদ্দীন আহমদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব দেন তারা। ফলে অঘোষিতভাবে সামরিক কর্মকর্তাদের হাতে চলে যায় দেশের শাসন ক্ষমতা। বেসামরিক ও সুশীল সমাজের ছদ্মবেশে সামরিক শাসন শুরু হয় দেশে। অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত হয়ে যায় নির্বাচন প্রক্রিয়া। রাজনীতিবিদদের প্রতি হয়রানিমূলক আচরণ শুরু হয়। এমনকি দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় এবং নির্বাসনে পাঠানোর ষড়যন্ত্র হয় সর্ববৃহৎ দল আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে।

শেখ হাসিনাকে ঠেকাতে নিষেধাজ্ঞা ও ষড়যন্ত্র:

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের জনসভায় গ্রেনেড হামলার শিকার হয়ে মারাত্মক আহত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ক্ষতিগ্রস্ত কান ও চোখের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিনি। তাই চিকিৎসার জন্য ২০০৭ সালের ১৩ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নেন তিনি। ১৫ মার্চ বিকালে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে রওনা দেন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে। চিকিৎসা শেষে এক মাসের মধ্যে দেশে ফিরবেন বলে জানান সবাইকে। সেই অনুসারে, সফর শেষে ২৩ এপ্রিল দেশে ফেরার কথা ছিল শেখ হাসিনার। কিন্তু চিকিৎসা শেষে তার বাংলাদেশে ফেরার সময় ঘনিয়ে এলে নতুন ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হতে হলো তাকে।

২০০৭ সালের ১৮ এপ্রিল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেসনোটে জানানো হয়- ২৩ তারিখ শেখ হাসিনার দেশে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এমনকি শেখ হাসিনাকে বহন না করার জন্য এয়ারলাইন্সগুলোকে বার্তা পাঠানো হয় বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষ থেকে। তাকে হুমকি দিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য রাখেন সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা। তিনি দেশে এলে পরিস্থিতি ভালো হবে না বলেও ভয় দেখানো হয়।

কিন্তু বিতর্কিত সরকারের নিষেধাজ্ঞা ও হুমকি অগ্রাহ্য করে, নির্ধারিত ২৩ তারিখেই দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন দুঃসাহসী নেত্রী শেখ হাসিনা। পূর্বঘোষিত সময়ে দেশে ফেরার উদ্দেশ্যে ১৯ এপ্রিল বিকালে লন্ডনে পৌঁছান তিনি। কিন্তু বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্দেশনার কারণে লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর থেকে তাকে দেশে ফেরার বোর্ডিং পাস দেওয়া হয়নি। এমনকি তার ফেরার প্রক্রিয়া চূড়ান্তভাবে থামিয়ে দিতে, ২২ এপ্রিল, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয় তার নামে। এদিকে শেখ হাসিনার নির্দেশে, তার আইনজীবীরা সরকারি প্রেসনোটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং শেখ হাসিনার দেশে ফেরার বাধা দূর করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টের রিট আবেদনের অনুমতি চান। এরপর, ২৬ এপ্রিল বিকালে, তার দেশে ফেরার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।

অবশেষে, বিএনপি-জামায়াত জোটের ষড়যন্ত্র এবং বেসামরিকতার ছদ্মবেশে কিছু সামরিক সদস্য নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হুমকি ও রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে, ৭ মে দেশে ফিরে আসেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। দেশে ফিরেই সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তোলেন তিনি। কিন্তু তার অকুতোভয় কণ্ঠকে দাবিয়ে রাখতে, ১৬ জুলাই তাকে একটি সাজানো মামলায় গ্রেফতার করা হয়।

নিঃসঙ্গ কারাগারে ৩৩১ দিন:

২০০৭ সালের ১৬ জুলাই। শ্রাবণের বৃষ্টিমুখর ভোরে সুধাসদন-এ প্রবেশ করে যৌথবাহিনী। এর আগে, রাত থেকেই দেশরত্ন শেখ হাসিনার বাসভবনকে ঘিরে রেখেছিল দুই সহস্রাধিক পুলিশ, র‍্যাব, ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা। মধ্যরাতে তুলে নেওয়া হয় তার বাসার নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অরক্ষিত অবস্থাতেই ফজরের নামাজ আদায় করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এরপর বের হয়ে আসেন সাদা শাড়ি পরে। সকাল সাড়ে ৭টা, একটি সাজানো মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে তড়িঘড়ি করে নেওয়া হয় সিএমএম কোর্টে। কাকডাকা সকালে দ্রুত আদালত বসিয়ে তার জামিন আবেদন খারিজ করে, বন্দি করা হয় সংসদ ভবন এলাকার সাবজেলে। সেখানে প্রথমে তাকে সংবাদপত্র ও টেলিভিশন থেকেও দূরে রাখা হয়েছিল, এমনি দেখা করতে দেওয়া হয়নি স্বজন-নেতাকর্মী বা আইনজীবীর সঙ্গেও। এই আচরণকে দেশবাসী অভিহিত করে- একাকী নির্জনে নিঃসঙ্গ করে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র হিসেবে। পরে দলীয় কর্মীদের দাবির মুখে তাকে সংবাদ দেখার অনুমতি দেওয়া হয়।

জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের পর থেকেই দেশজুড়ে প্রতিদিনই আন্দোলন-সংগ্রাম-প্রতিবাদ চলতে থাকে। ২৪ জুলাই মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সামনে শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ হয়। সেই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন তার পুত্র ও বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। এসময় আন্তর্জাতিকভাবেও এই গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানায় কানাডা-অষ্ট্রেলিয়া-ব্রিটেনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র।

এদিকে জেলে বন্দি অবস্থায় শেখ হাসিনার সঙ্গে দীর্ঘদিন স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ রাখা হয়। ফলে তার চিকিৎসা প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। গ্রেনেড হামলায় আহত কান ও চোখ চিকিৎসার অভাবে আরো ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। মানসিকভাবে শক্ত থাকলেও, শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তাকে স্লো-পয়জনিং করা হচ্ছে বলেও আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে ঘটতে, অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছালেও তার জন্য ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। এরকম পরিস্থিতিতে, ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ, আদালতে হাজিরা দিতে নেওয়া হলে আইনজীবীদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু পারেনি। এখন বিনাচিকিৎসায় মারার চেষ্টা করছে।’

এসময় শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘১৯৭১ সালে সন্তানসম্ভবা ছিলাম। পাকিস্তানিরা মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন কারো সাথে দেখা করতে দেয়নি। এখন এরা চিকিৎসাসেবা ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে দিচ্ছে না। আমার ওপর যে অবিচার করা হয়েছে, তার ভার আমি আল্লাহ ও জনগণের ওপর দিচ্ছি।’

জেলে তাকে সঠিক চিকিৎসা না দেওয়ায়, একপর্যায়ে তার অসুস্থতা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে চলে যায়। অবশেষে তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা টানা ২০ দিন চিকিৎসার পর তাকে আপাত স্বাভাবিক করে তোলেন এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দেন।

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েও দেশ ও জনতার কথা ভুলে যাননি নেত্রী। ২০০৭ সালের জুলাই মাসে, তাকে যখন নির্জন কারাগারে ঢুকিয়ে মৃত্যুর ভয় দেখানো হচ্ছিলো, ঠিক তখনই, আগস্ট মাসে দেশজুড়ে তখন চলছিল ভয়াবহ বন্যা। গণমাধ্যমে এই খবর দেখে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা পাঠান তিনি। এমনকি সেই বছরের নভেম্বরে যখন সিডরের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় উপকূলবর্তী দেশের এক তৃতীয়াংশ অঞ্চল, তখনও দলমত নির্বিশেষে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আওয়ামী লীগের প্রতি নির্দেশ দেন তিনি।

পরবর্তীতে, সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণে, দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি চরমে উঠলে, উষ্মা প্রকাশ করেন তিনি। ২০০৮ সালের মে মাসে আদালতে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সময় দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন জননেত্রী। একইসঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন।

জননেত্রীর মুক্তি লাভ এবং নতুন বাংলাদেশের পথে যাত্রা:

বিএনপি-জামায়াত জোটের ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশ যতবার ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল, শেখ হাসিনার হাত ধরে ততবারই ফিনিক্স পাখির মতো নতুন রূপে ফিরে এসেছে প্রিয় দেশ। কিন্তু ষড়যন্ত্র কখনোই থেমে থাকেনি। মিথ্যা মামলায় ২০০৭ সালে দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে জেলে ঢোকানোর পর, একের পর এক মোট ১৩টি মামলা সাজানো হয় তার নামে। কিন্তু একটুও বিচলিত হননি তিনি। উল্টো ৩৩১ দিনের জেলজীবনে নিয়মিত ডায়েরি লিখে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়ার রূপকল্প তৈরি করেছেন। তাকে গ্রেফতারের খবর শুনে প্রথম দিনেই তাৎক্ষণিকভাবে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ঝিনাইদহ, নাটোর, চাঁদপুর ও ভোলার মোট চার জন কর্মী। দেশজুড়ে ফুলকি ফুলকি করে জ্বলতে শুরু করে ক্ষোভের আগুন। সারা বছরজুড়েই তার মুক্তির দাবি জানান ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী ও দলীয় নেতা-কর্মীরা।

বিএনপি-জামায়াত চক্র এবং কতিপয় সামরিক সদস্য নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার ও হয়রানি শুরু হয়। ফলে তাদের গুছিয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগে। তবে শেখ হাসিনার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত দলের কোনো কাউন্সিল করা হবে না বলে দলের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়।

অবশেষে, ২০০৮ সালের ২৩ মে, আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দলের ৭২টি সাংগঠনিক শাখার তৃণমূল নেতারা শেখ হাসিনার প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেন এবং তাকে জেল থেকে মুক্ত করার জন্য দেশজুড়ে চলমান আন্দোলন জোরদার করার ঘোষণা দেন। ২৭ ও ২৮ মে, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সভায় সিদ্ধান্ত হয়- শেখ হাসিনাকে নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে হবে। আওয়ামী লীগের এই ঘোষণার পর দেশজুড়ে শুরু হয় গণগ্রেফতার। প্রায় ২০ হাজার মানুষকে আটক করা হয়। কিন্ত তবুও শেখ হাসিনার পক্ষে গণজোয়ার থামানো যায়নি।

অবশেষে জননেত্রীর জনপ্রিয়তা ও ব্যক্তিত্বের সামনে কুচক্রীদের সব রকমের ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। ২০০৮ সালের ১১ জুন, বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনাকে সসম্মানে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় তারা। এমনকি গাড়িতে করে তার নিজ বাসভবন সুধাসদন-এ পৌঁছে দিয়ে আসা হয় তাকে।

এরপর মানুষের ভাগ্য বদলের জন্য শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন ‘দিন বদলের সনদ’। একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে জনগণের জন্য সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিতের ঘোষণা দেওয়া হয় এই ইশতেহারে।

শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও দুঃসাহসী নেতৃত্বে ভর করে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে আয়োজিত জাতীয় নির্বাচনে একচেটিয়া জয় লাভ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের জোট। জোটের মোট অর্জিত ২৬৭ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগই পায় ২৩০টি।

এই সরকারের উদ্যোগে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি করে পাঁচ কোটি মানুষকে মধ্যবিত্ত উন্নীত করা হয়। মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান বাড়তে থাকে মানুষের। দেশ এগুতে থাকে সমৃদ্ধির পথে। বাংলাদেশ উন্নীত হয় মধ্যম আয়ের দেশে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ও রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করে, ২০১৪ সালের নির্বাচনেও জয়লাভ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে, টানা তৃতীয় বার ও মোট চতুর্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ এখন উন্নত বিশ্বের তালিকায় নাম লেখানোর স্বপ্নময় পথ অতিক্রম করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্বপ্নের গণ্ডি ছড়িয়ে বিশ্বের বিস্ময় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বীরের জাতি হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্মান ফিরে পেয়েছে বাঙালি জাতি।

সূত্র: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ওয়েবসাইট