লাইফ বীমা কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্বিন্যাস করায় কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয় ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমবে বলে মন্তব্য করেছেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন। গত বৃহস্পতিবার জারিকৃত এ সংক্রান্ত সার্কুলারটি আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
দেশের বীমা খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে রোববার (২০ জুন, ২০২১) বীমা সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্স্যুরেন্স রিপোর্টার্স ফোরাম (আইআরএফ) আয়োজিত এক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। আইআরএফ সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুমনের সঞ্চালনায় এবং সংগঠনের সভাপতি গোলাম মাওলার সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, একটি লাইফ বীমা কোম্পানি যখন সঠিক সময়ে বীমা দাবি পরিশোধ না করে তখন এক ধরনের বদনাম ছড়ায়। এ কারণে আমরা লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর আর্থিক ভিত শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নিয়েছি। এরইমধ্যে সুপারভাইজরি লেভেল এবং কমিশন কাঠামো পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। এর ফলে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর খরচ ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে। যা কোম্পানির আর্থিক অবস্থা শক্তিশালী করবে।
বীমা মালিকদের ৬০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিষয়ে সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, এক্ষেত্রে আমাদের দু’টি সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। একটি হচ্ছে লিস্টেড কোম্পানির ক্ষেত্রে। অন্যটি নন-লিস্টেড কোম্পানির ক্ষেত্রে। নন-লিস্টেড কোম্পানির ক্ষেত্রে আমরা যেটা করছি যে, তারা যদি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায় সেক্ষেত্রে তাদের যদি ৬০ শতাংশ শেয়ার ধারণ না হয়ে থাকে তাহলে তাদের অনুমোদন দিচ্ছি না।
আর যারা তালিকাভুক্ত বা পুঁজিবাজারে আছে তাদের ক্ষেত্রে দু’টি জটিলতা আছে। একটি আইনগত জটিলতা, অন্যটি অপারেশনগত জটিলতা। যেহেতু তারা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সেক্ষেত্রে তাদের ৬০ শতাংশ পূরণ করার জন্য পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার কিনতে হবে। এ ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা আছে। যেহেতু এখানে আইনগতভভাবে বিষয়টি বলা আছে, তাই আমরা আইনগত বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছি এবং সেভাবে এটা বাস্তবায়নের জন্য কোম্পানিগুলোর সাথে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি।
ড. এম মোশাররফ হোসেন বলেন, আইডিআরএ’র জনবল সমস্যা একটি বড় সমস্যা। বীমা কোম্পানিগুলোর প্রায় ২ কোটি গ্রাহক। এই বিপুল জনগোষ্ঠী যে সেক্টরে জড়িত, তার নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ মাত্র ৩১ জন জনবল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের নিজস্ব কোনো জায়গাও নেই। তবে এ সমস্যার সমাধানেও আমরা অনেক দূর এগিয়ে এসেছি।
এরইমধ্যে আমাদের জনবল কাঠামো চূড়ান্ত হয়েছে। আমরা নিচের দিকের ১৭ জন কর্মকর্তাকে পেয়েছি, যারা বেশ দক্ষ। আরো ৪০ জন কর্মকর্তা আমরা পাবো। আশা করা যায় এটি বাস্তবায়ন হলে আইডিআরএ’র সার্বিক কার্যক্রমে আরো বেশি গতি পাওয়া যাবে।
সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কোম্পানিটির নানা সমস্যা আছে। আমরা সে বিষয়টি দেখছি। কোম্পানিটির যে সমস্যা ছিল তার কিছুটা ইতোমধ্যে তারা সমাধান করেছে। সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সকে আমরা এ মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত সময় দিয়েছিলাম। এখন পর্যন্ত তারা ২৫ কোটি টাকা বীমা দাবি পরিশোধ করেছে। তাদের কিছু অ্যাসেট ছিল তা লিকুইড করে এই দাবি পরিশোধ করা হয়েছে। বাকী যেসব দাবি রয়েছে সেগুলো পূরণ করার জন্য তারা এক মাস সময় চেয়েছে। আমরা আশা করি সে সমস্যাগুলোরও সমাধান হয়ে যাবে।
বীমা খাতে একচ্যুয়ারি সংকট একটি বড় সমস্যা। চেয়েও লোকজন পাওয়া যাচ্ছে না। একচ্যুয়ারি নিয়ে কেউ পড়তে চায় না। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে গুরুত্ব দিতে বলেছেন। এ জন্য দেশ এবং বীমা খাতের প্রয়োজনে এ বিষয়ে স্কলারশিপ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ৩ জন আবেদন করেছেন।
আমরা ৫ জনকে পাঠাবো। এই ৫ জনের জন্য ৫ কোটি টাকা রেডি করে রাখা হয়েছে। কঠিন বিষয় বলে অনেকে এখানে আসতে চায় না। ফলে এই খাতের উন্নয়নে একচ্যুয়ারি একটি বড় সমস্যা। এর সমাধানেও আমরা কাজ করছি।
আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, বীমা খাতের আইন-কানুনে বেশ পরিবর্তন আনা হচ্ছে। নন-লাইফের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে। সেক্ষেত্রে নিরীক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের বীমা খাতে যে একচ্যুয়ারির ঘাটতি রয়েছে সেটা পূরণ করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
সর্বপোরি বীমা খাতের উন্নয়নে যে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে তা আগামী ৩/৪ বছরের মধ্যে তার সুফল পাওয়া যাবে। এবং এটি বীমা খাতকে একটি ভালো অবস্থায় নিয়ে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।