চরফ্যাশনের উপকূলীয় নদীসমূহের পানিতে লবণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় কৃষিকাজ ও গবাদি পশুপালনে সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সাগরপাড়ের বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে আশংকাজনক হারে কমছে ফসল উৎপাদন।
জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে পড়ছে উপকূলীয় এলাকা। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উপকূলীয় পানির উৎসগুলো লবণাক্ত হয়ে পড়ায় পানের অযোগ্য হয়ে পড়ছে পানি।
চরফ্যাশন উপজেলার উপকূলীয় এলাকার কৃষি অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাত মহিষ পালন। এ খাত থেকে বাথান মালিকরা বছরে আয় করেন কয়েক কোটি টাকা। বিভিন্ন চর ও বনাঞ্চলে খোলা আকাশের নিচে প্রাকৃতিক ঘাস খেয়েই মহিষ বেঁচে থাকে। কিন্তু এবার বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে জোয়ারের লবণাক্ততায় পানিতে ডুবে গেছে সব। ফলে ঘাস জন্মাতে না পারায় দুর্গম চরাঞ্চলের বাথানগুলোতে একে একে মারা যাচ্ছে মহিষ।
মনপুরা উপজেলার বিচ্ছিন্ন উপ-দ্বীপ চরনিজাম গ্রামে সাধারণ মানুষের ব্যবহৃত পুকুরে নামানো হচ্ছে বাথানের মহিষ। এতে বহু পুকুরের পানি মানুষের ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, অভিযোগ স্থানীয়দের।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ভোলায় সাত উপজেলায় ৮৩টি চরে ৯১ হাজার মহিষ আছে। ব্যবসায়িক খামার কিংবা বাথান রয়েছে ৫৫৪টি। তার মধ্যে চরফ্যাশন উপজেলার বিভিন্ন দুর্গম চরাঞ্চলে রয়েছে ৪৮ হাজার ৯৯০টি মহিষ। এসব মহিষ থেকে প্রতিদিন ১০০ মেট্রিক টন দুধ উৎপাদন হচ্ছে।
কিন্তু এসব চর এলাকার চারণভূমিতে গো-খাদ্যে ও সুপেয় পানির মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে এখন।
প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের জোয়ারে চরের ৩ হাজার ৯০০ একর চারণভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন এসব মহিষকে সুস্থভাবে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে তেমন কিছুই করণীয় নেই তাদের। খাদ্য ও সুপেয় পানি অভাব থাকায় প্রতিবছর ২-৩ শত মহিষ মারা যাচ্ছে এসব চরে। ফলে কয়েক হাজার গরু-মহিষ নিয়ে শতাধিক মালিক পশুর খাদ্যের জোগান দেয়াসহ নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। কোটি টাকা মূল্যের পশু পালন প্রকল্প থেকে অনেকে সরে আসতে শুরু করেছেন।
গত ২০ এপিল ২১ চরফ্যাশন উপজেলা দক্ষিণ আইচা থানার চরমানিকা ইউনিয়নে চর ইসলাম, চরফারুকীসহ বিভিন্ন চরে ৪০টি মহিষের মৃত্যু হয়েছে। যাদের মহিষ হারিয়েছে তারা সবাই নদী সিকস্তি পরিবার। মনপুরা ও তজুমদ্দিন এবং চরফ্যাশনের মূল ভূখণ্ড থেকে নদী ভাঙনের শিকার হয়ে নতুন করে বাঁচার জন্য এরা এ চরে আশ্রয় নিয়েছে। এ আকস্মিক দুর্যোগে তাদের স্বপ্নকে বিলীন করে দিয়েছে।
ঢালচরের রেঞ্জার জানান, গরুও মহিষ মালিকরা জোরপূর্বক বাগানে চড়াচ্ছে। ম্যানগ্রোভ বনে গরু মহিষ চরানো নিষিদ্ধ রয়েছে। নিরীহ এই প্রাণিটি ক্ষুধার তাড়নায় যখই বনভূমিতে প্রবেশ করে তখনই মামলা হয় রাখাল আর মহিষ মালিকের নামে।
দক্ষিণ উপকূলীয় চরাঞ্চলের চারণভূমিতে পুকুর কেটে মহিষের সুপেয় পানি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন বাথান মালিকরা।
সানবিডি/এএ