বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ মানুষের সম্পদ অবশিষ্ট ৯৯ শতাংশের মোট সম্পদের সমান। আর বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৫০ শতাংশের সমপরিমাণ সম্পদ ৬২ জন শীর্ষধনীর করায়ত্ত। আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বৈঠক সামনে রেখে সংস্থাটি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। খবর বিবিসি ও এএফপি।
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে আজ থেকে ডব্লিউইএফ বৈঠক শুরু হচ্ছে। এ উপলক্ষে প্রকাশিত অক্সফামের প্রতিবেদনকে বিশ্বে বেড়ে চলা বৈষম্যের সাম্প্রতিকতম চিত্র বলা হচ্ছে। বৈষম্য দূর করতে বিশ্বনেতাদের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে অক্সফাম।
ক্রেডিট সুইসের অক্টোবরের প্রতিবেদন থেকে উপাত্ত নিয়েছে অক্সফাম। এরই ভিত্তিতে ‘১ শতাংশের অর্থনীতি’ শীর্ষক প্রতিবেদন তৈরি করেছে সংস্থাটি। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের সমপরিমাণ সম্পদ শীর্ষ ৬২ জনের হাতে রয়েছে। পাঁচ বছর আগে সংখ্যাটি ছিল ৩৮৮ জন। অর্থাত্, ২০১০ সালে বিশ্বের অর্ধেক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সমপরিমাণ সম্পদ ছিল ৩৮৮ জনের হাতে। সাম্প্রতিক এ তথ্যে বোঝা যাচ্ছে, বিশ্বে আয়বৈষম্য কতটা দ্রুত বাড়ছে।
আর আয়বণ্টনের এ নেতিবাচক ধারায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারীরা। বৈষম্য বৃদ্ধির পিছনে বড় কারণগুলোর একটি হচ্ছে, জাতীয় পর্যায়ে আয়ের ন্যায্য বণ্টন ক্রমে কমে আসা। দেখা গেছে, সিংহভাগ উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের জাতীয় আয়ে শ্রমিক ও কর্মজীবী শ্রেণির অংশ প্রতিনিয়ত কমে আসছে। আর বিশ্বে সবচেয়ে কম মজুরি পাওয়া শ্রমিকদের তালিকায় নারীর সংখ্যায় বেশি।
অক্সফামের গত বছরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বিশ্বের শীর্ষধনী ১ শতাংশ মানুষের সম্পদ অবশিষ্ট ৯৯ শতাংশের মোট সম্পদকে ছাড়িয়ে যাবে। এ বছরের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, আশঙ্কাটি পুরোপুরি সত্যি হয়নি, তবে তা অমূলক নয়। ২০১৫ সালেও ধনীদের সম্পদ উত্তরোত্তর বেড়েছে। শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর হাতে গড়ে ৬৮ হাজার ৮০০ ডলারের সমপরিমাণ নগদ অর্থ ও সম্পদ রয়েছে। অন্যদিকে শীর্ষ ১ শতাংশ সম্পদের গড় ৭ লাখ ৬০ হাজার ডলারের সমপরিমাণ। অর্থাত্ কোনো ধরনের বন্ধকি ঋণগ্রহণ ছাড়া লন্ডনে যারা বাড়ির মালিক রয়েছেন, সর্বোচ্চ ধনী ১ শতাংশের মধ্যে রয়েছেন তারাও।
ভবিষ্যত্ প্রজন্মের জন্য সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়তে হলে এই ১ শতাংশের হাতে কুক্ষিগত নয়, এমন অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে বলে অক্সফামের প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। ক্রমবর্ধমান বৈষম্য দূর করতে বিশ্বনেতারা আলোচনা অব্যাহত রাখলেও গত ১২ মাসে বৈষম্য নাটকীয় হারে বেড়ে গেছে। অবশ্য অতি দারিদ্র্যসীমার মধ্যে বাস করছেন, এমন মানুষের সংখ্যা কমেছে বলে জানিয়েছে অক্সফাম। সংস্থাটির হিসাবে ১৯৯০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা অর্ধেকে নেমেছে। তবে গত ২৫ বছরে দরিদ্রতম ১০ শতাংশের বার্ষিক আয় ৩ ডলারেরও কম বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে আজ মঙ্গলবার শুরু হওয়া ডব্লিউইএফের সম্মেলনটি চলবে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত। ৪০ জন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এতে যোগ দিবেন। এছাড়া ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের আড়াই হাজার প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন এতে। অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক উইনি বিয়ানিমা জানান, বিশ্বের অর্ধেক দরিদ্র লোকের হাতে গুটিকয়েকজন ধনীর সমপরিমাণ সম্পদও নেই, এ বাস্তবতা অগ্রহণযোগ্য। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব ক্রমেই আরো বৈষম্যের ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে উঠবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
বৈষম্য দূর করতে কর স্বর্গ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে অক্সফাম। সংস্থাটি বলছে, কর ফাঁকি দিতে এসব জায়গায় নিজেদের সম্পদ লুকিয়ে রাখে ধনীরা। ফলে একটি দেশে বৈষম্য ও দারিদ্র্য দূর করতে সরকারের হাতে বেশি সম্পদ থাকে না।
উদাহরণ হিসেবে আফ্রিকার কথা উল্লেখ করেছে অক্সফাম। আফ্রিকার মোট আর্থিক সম্পদের ৩০ শতাংশই বিদেশের ব্যাংক হিসাবগুলোয় জমা রয়েছে। ফলে আফ্রিকার দেশগুলো সম্মিলিতভাবে প্রতি বছর ১৪ বিলিয়ন ডলার কর রাজস্ব হারাচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বকে অতিদারিদ্র্য মুক্ত করার যে লক্ষ্য নেয়া হয়েছে, তা পূরণে করফাঁকি প্রতিরোধ করতে হবে বলে জানিয়েছে অক্সফাম।
সানবিডি/ঢাকা/আহো